বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া চ্যানেলে অভিযান, ১৮ জলদস্যু আটক
Published: 8th, February 2025 GMT
কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে লুট করা মাছসহ ১৮ জলদস্যুকে আটক করেছে কোস্টগার্ড।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তাদের আটক করা হয়। এ সময় ‘এফবি মায়ের দোয়া ১৭৯’ নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার জব্দ করা হয়, যেখানে লুট করা মাছ ছিল। পরে জব্দকৃত মাছ উন্মুক্ত নিলামে তোলা হলে মাছ ব্যবসায়ী নাছির উদ্দীন ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় মাছগুলো ক্রয় করেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুজয় পাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
কোস্টগার্ড জানায়, গত বুধবার রাতে মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের অদূরে সাগরে মাছ ধরার সময় একটি মাছ ধরার ট্রলার জলদস্যুর কবলে পড়ে। এ সময় জলদস্যুরা ওই ট্রলারের জেলে বেলালকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং অন্য জেলেদের হত্যার হুমকি দিয়ে ট্রলারটিতে থাকা মাছ, ব্যবহৃত মোবাইল ও নগদ টাকা লুট করে নেয়। এরপর দস্যুরা ট্রলারের ইঞ্জিন ভেঙে দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে দস্যুদের কবলে পড়া জেলেরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে মহেশখালী থেকে অন্য একটি ট্রলার গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে জলদস্যুদের আটক করে কোস্টগার্ড।
কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, গত তিন মাসে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ৫০টির বেশি মাছ ধরার ট্রলার জলদস্যুর কবলে পড়েছে। দস্যুবাহিনীর গুলিতে এক জেলে নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপকে জলদস্যুরা প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে, আর কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে জলদস্যুদের লুট করা মাছ কিনে নিচ্ছেন। তিনি জলদস্যুদের পাশাপাশি এই অসাধু ব্যবসায়ী ও দস্যুদের পৃষ্ঠপোষকদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
আটক ১৮ জলদস্যুকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা/তারেকুর/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫