খুলনা মহানগর ও জেলার ১৭ থানায় গেল জানুয়ারি মাসে হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৮১টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর ৮টি থানায় ১৭৮টি এবং জেলার ৯টি থানায় ১০৩টি মামলা দায়ের হয়। 

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। 

সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট দীপংকর দাশ সভায় বিগত মাসে খুলনা জেলা ও মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

সভায় জানানো হয়, মহানগরে জানুয়ারি মাসে ডাকাতি দুটি, চুরি ১৪টি, খুন দুটি, অস্ত্র আইনে চারটি, দ্রুত বিচার তিনটি, ধর্ষণ পাঁচটি, অপহরণ দুটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৪টি, মাদকদ্রব্য বিষয়ক ৮৩টি এবং অন্যান্য ৪৯টিসহ মোট ১৭৮টি মামলা হয়েছে। যা বিগত মাসের চেয়ে ৩১টি বেশি।

অপরদিকে, একই সময় খুলনা জেলায় রাহাজানি একটি, চুরি ছয়টি, খুন তিনটি, ধর্ষণ চারটি, নারী ও শিশু নির্যাতন দুটি, মাদকদ্রব্য বিষয়ক ৪১টি এবং অন্যান্য ৪৬টিসহ মোট ১০৩টি মামলা হয়েছে যা বিগত মাসের চেয়ে আটটি কম। 

পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন সভায় বলেন, “বিগত মাসে খুলনা জেলা পুলিশের অধিক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া তিনটি হত্যাকাণ্ড পরিবারিক কারণে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে। সবকয়টি ক্ষেত্রে আসামি গ্রেপ্তার রয়েছে। অনলাইন জুয়ার বিস্তার বন্ধে পুলিশি অভিযানের সাথে নাগরিক সচেতনতা জরুরি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাই এখন পুলিশের জন্য প্রথম অগ্রাধিকার। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।”

সভায় মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহা.

আহসান হাবীব জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মেট্রোপলিটন পুলিশের তদারকি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আটক করা হয়েছে। অপরাধ দমনে নিয়মিত প্যাট্রলিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক বলেন, “আগামী রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে তদারকি অভিযান পরিচালনা করা হবে। খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সাথে নিয়ে অভিযান চালানো হবে। কাঠ পুড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা তৈরির ব্যবসা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। সুন্দরবনে দস্যুতা, আটক করে মুক্তিপণ আদায়, বিষ দিয়ে মাছধরা বন্ধে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে করণীয় বিষয়ে উপজেলা পর্যায়ে গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন বৈঠক করতে পারে।”

সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-সহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব গত ম স পর স থ ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল