মূল্যস্ফীতি কমাতে এক মাস বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সুপারিশ
Published: 9th, February 2025 GMT
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশে এক মাসের জন্য বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জানিয়েছে। সেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার এই সুপারিশ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টাকে অর্থ মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে চাহিদা কমানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি রোধের চেষ্টা করা হলেও সরবরাহব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। সে জন্য সরবরাহব্যবস্থার কাঠামোগত ত্রুটি নিরসনে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। এ জন্য সাময়িকভাবে চারটি পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সুপারিশগুলো হচ্ছে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে আগামী এক মাস বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা; চাল–তেল, আলু–পেঁয়াজ ইত্যাদি নিত্যপণ্যের গুদাম নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ; পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও বীজ সরবরাহের পাশাপাশি পরামর্শ সেবা নিশ্চিত করা।
অর্থসচিব মো.
— অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সভায় যাঁরা ছিলেন তাঁরা বলেছেন যে দেশের অর্থনীতি খুব ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মূল সূচকগুলো যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। পাঁচ মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। আমদানিতেও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি একসময় ১২ শতাংশে উঠলেও এখন সেটি ৯ শতাংশে মানে সিঙ্গেল ডিজিটে এসেছে। কাজ করার কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে। তাঁদের দৃঢ়বিশ্বাস, জুলাইয়ের মধ্যে এটি সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে আসবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০ মাস খাদ্যের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে তা ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে গত সাত মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বর ও জানুয়ারি ছাড়া প্রতি মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে ছিল। ২০২৪ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
শ্রমিক অসন্তোষের তিন চ্যালেঞ্জ
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে সরকারের করণীয় সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনায় বলা হয়, বেক্সিমকোর শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে কারখানা বন্ধ করে সম্পদ বিক্রয় করে তাদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়া রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যথাযথ পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
উপস্থাপনায় শিল্প খাতের তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়। যেমন, বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইলসহ অন্য কারখানার প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক–কর্মচারীর রাস্তা অবরোধসহ সহিংস আন্দোলন এবং আশপাশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে সেগুলো ঝুঁকির মুখে আছে। যেসব কারখানার মালিক পলাতক আছেন বা দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে বিদেশে চলে গেছেন, তাঁদের মালিকানাধীন কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বা নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে না পারায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় শিল্পাঞ্চলে প্রায়ই শ্রমিক অসন্তোষ দেখা যায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
ব্যাংক একীভূত করার সুপারিশ
দ্রুত সম্পদ মান যাচাই করে ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর ব্যাংকের ঝুঁকি বিবেচনায় প্রয়োজনে একীভূত বা অধিগ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য আন্তর্জাতিক তৎপরতা জোরদারের সুপারিশ করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, খেলাপি ঋণের কারণে আর্থিক খাত ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিগত সরকারের সময় আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে অন্তত ১০টি ব্যাংক তীব্র ঝুঁকির মধ্যে আছে।
অন্যান্য
উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকায় বর্তমানে বিদ্যুৎ ও সারের মূল্য সমন্বয় করা যাচ্ছে না বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব আহরণ বাড়াতে আয়কর ও ভ্যাট বিভাগের অটোমেশন জরুরি বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা মাঠপর্যায়ে করের জাল বিস্তৃত করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) তদারকি কার্যক্রম চলমান রাখার সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ব যবস থ উপস থ
এছাড়াও পড়ুন:
নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করেছে নেপাল। ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল এই প্রথম ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করছে, যা দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।
রবিবার (১৫ জুন) পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ (পিজিবি) সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পিজিবি দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার রাত ১২টা থেকে এই বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। আজ রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ৩৮ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে।
আরো পড়ুন:
গ্রাহকদের জরুরি বার্তা দিল ডেসকো
বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ‘নাকাল’ কুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের ভারত সফরের সময় এই বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে সময় তিন দেশ আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে। নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে, এই বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ইউনিট ০ দশমিক ০৬৪ ডলার বা ৬ দশমিক ৪ সেন্ট।
এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি সই হয়। এতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল–নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিটি (এনইএ), বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম (এনটিপিসি)।
ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, নেপাল ২০২৫ সাল থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এর অর্থ হলো, বছরের একটি নির্দিষ্ট শুষ্ক মৌসুমে নেপালের এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।
ঢাকা/হাসান/সাইফ