ভারত সফরের দলে হামজার সঙ্গে ইতালি প্রবাসী
Published: 10th, February 2025 GMT
সবকিছু চূড়ান্তই ছিল। অপেক্ষা শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন থেকে অবশেষে এলো সেই ঘোষণা। বাংলাদেশি হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরী অফিসিয়ালি জাতীয় দলের সদস্য হয়েছেন।
এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে গতকাল ৩৮ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেন জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। তাঁর এই দলে আছেন হামজা চৌধুরী। চমক ইতালিয়ান প্রবাসী ফাহমেদুল ইসলাম। শিলংয়ে ২৫ মার্চ গ্রুপ ‘সি’তে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ দল। এই গ্রুপে লাল-সবুজের দলটির বাকি প্রতিপক্ষ হংকং ও সিঙ্গাপুর।
ধারে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজা চৌধুরীর জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেওয়া নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। সৌদি আরবে করা ক্যাম্পে যোগ দেবেন, নাকি ইংল্যান্ড থেকে সরাসরি ঢাকায় আসবেন তিনি, সেটি এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি ফেডারেশন।
বাফুফে চাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ফুটবলারকে রাজকীয়ভাবে বরণ করতে। কিন্তু এখন যেহেতু ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় স্তরের লিগের ক্লাব শেফিল্ডে আছেন তিনি, তাই ক্লাবের ছাড়ার ব্যাপারটিও চিন্তা করতে হচ্ছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।
হামজা বাংলাদেশে আসবেন, নাকি সরাসরি শিলংয়ে যাবেন– এর সবকিছু সময়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন ফেডারেশনের সহসভাপতি ফাহাদ করিম, ‘আমি চেয়েছিলাম হামজাকে একটা বড় ধরনের সংবর্ধনা দিতে। সভাপতি আমাকে বলেছেন, আগে তার আসার তারিখ চূড়ান্ত হোক। সেটা এখনও হয়নি বলেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’
হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশি হওয়ার ব্যাপারটি সবারই জানা। কিন্তু ইতালিয়ান প্রবাসী ফাহমেদুল ইসলামকে দলে নেওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুই জানায়নি ফেডারেশন। ইতালির চতুর্থ স্তরের ক্লাব অলবিয়া এফসিতে খেলা ফরোয়ার্ড ফাহমেদুল ইসলামকে নিয়ে আশাবাদী কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা।
রোববার বাফুফের পাঠানো বিবৃতিতে এ স্প্যানিয়ার্ড বলেন, ‘সে ইতালির অলবিয়া ক্লাবে খেলে। মূলত সে লেফট ব্যাক এবং লেফট উইংয়েও খেলতে পারে। ইউরোপের সিনিয়র পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। হ্যাঁ, সে তরুণ, দেখা যাক কী হয়।’
যতদূর জানা গেছে, ফাহমেদুলের বাড়ি ফেনীতে। তিনি ইতালির ক্লাব সাম্পদোরিয়া যুব দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। প্রাথমিক দলে রাখা ১৮ বছর বয়সী এ ফুটবলারকে ট্রায়ালে দেখতে চান ক্যাবরেরা। ফেনীর এই ফাহমেদুলকে নিয়ে বাংলাদেশে দলে বর্তমানে প্রবাসী ফুটবলার আছেন পাঁচজন। বাকি চার ফুটবলার হলেন– ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা, ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া, ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজী ও কানাডা প্রবাসী সৈয়দ শাহ কাজেম কিরমানি।
ঘরোয়া লিগে খেলা পাঁচ নতুন মুখ ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলের প্রাথমিক দলে। স্থানীয়দের মধ্যে নতুন মুখ গোলরক্ষক সাকিব আল হাসান, ডিফেন্ডার জাহিদ হাসান শান্ত, মিডফিল্ডার ফাহমেদুল ইসলাম এবং দুই ফরোয়ার্ড আরিফ হোসেন ও আল আমিন।
দলবদলের জটিলতায় প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের প্রথম লেগে খেলেননি ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া। মালদ্বীপের বিপক্ষে সর্বশেষ খেলা দুটি ম্যাচেও ছিলেন না জাতীয় দলের অধিনায়ক। খেলার মধ্যে না থাকায় ব্রাদার্স ইউনিয়নের এ মিডফিল্ডারের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাঝখানে না থাকলেও নতুন করে ক্যাবরেরার ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন তারিক কাজী, সুশান্ত ত্রিপুরা, ইয়াসিন খান, মোহাম্মদ সোহেল রানা ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম। চোটের কারণে ভারত ম্যাচের দলে নেই বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ।
বাংলাদেশ দল: মিতুল, সুজন, শ্রাবণ, জিকো, মুরাদ, শাকিল, মেহেদী, রহমত, মোহাম্মদ শাকিল, ঈসা ফয়সাল, তাজ উদ্দিন, তারিক, তপু, সাদ উদ্দিন, সুশান্ত, ইয়াসিন, জাহিদ, হৃদয়, কাজেম, পাপন, সোহেল রানা, সোহেল, চন্দন, জনি, মোরসালিন, জামাল, হামজা চৌধুরী, রাকিব, ফয়সাল, রাব্বি, ইমন, রফিকুল, ইব্রাহিম, আরিফ, আল আমিন, পিয়াস আহমেদ নোভা ও ফাহমেদুল ইসলাম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় দল র ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)