শ্রীলঙ্কায় দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য কলম্বোর দক্ষিণে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অনুপ্রবেশকারী একটি বানরকে দায়ী করা হয়েছে। 

২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার এই দ্বীপরাষ্ট্রে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ফের চালু করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসা অবকাঠামো এবং পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্টগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আরো পড়ুন:

৪৩ বছরে সবচেয়ে বড় হার শ্রীলঙ্কার 

বুড়ো বয়সে সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় খাজা

শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কুমারা জয়কোডি সাংবাদিকদের বলেছেন, “একটি বানর আমাদের গ্রিড ট্রান্সফরমারের সংস্পর্শে এসেছে, যার ফলে সিস্টেমে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে।”

রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হয়, যার ফলে অনেকেই জেনারেটরের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হন। কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ ফিরে পেতে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষজন ঘটনাটি নিয়ে মজা করার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছে। মারিও নাওফাল নামে এক এক্স ব্যবহারকারী তার হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “দুর্বৃত্ত এক বানর কলম্বোর একটি সাবস্টেশনে প্রবেশের পর শ্রীলঙ্কার পুরো পাওয়ার গ্রিড ব্যর্থ হয়ে গেছে। একটি বানর = সার্বিক বিশৃঙ্খলা। পরিকাঠামো নিয়ে পুনরায় ভাবনা-চিন্তার সময় এসেছে?”

স্থানীয় সংবাদপত্র ডেইলি মিরর-এর প্রধান সম্পাদক জামিলা হুসেন লিখেছেন, “শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কায়ই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে বানরের একটি দল লড়াই করে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হতে পারে।”

সোমবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংবাদপত্রটি বলেছে, প্রকৌশলীরা পাওয়ার গ্রিডগুলোকে আপগ্রেড করতে বা ঘন ঘন ব্ল্যাকআউটের মুখোমুখি হওয়া ঠেকাতে ‘বছরের পর বছর ধরে’ ধারাবাহিকভাবে সরকারগুলোকে সতর্ক করে আসছেন।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক সিনিয়র প্রকৌশলীর উদ্ধৃতি দিয়ে এতে বলা হয়েছে, “জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড এতটাই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে যে, যেকোনো একটি লাইনে যদি সমস্যা হয় তাহলে ঘন ঘন দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে।”

২০২২ সালে অর্থনৈতিক সংকটের সময় শ্রীলঙ্কা ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হয়েছিল।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ