মন্ত্রিসভার পদত্যাগ চান প্রেসিডেন্ট, গভীর সংকটে কলম্বিয়া সরকার
Published: 10th, February 2025 GMT
কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি বৈঠকে নিজের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তীব্র সমালোচনার পর এবার নিজের মন্ত্রী ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে বলেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।
গত মঙ্গলবার এক বৈঠকে পেত্রো তাঁর মন্ত্রিসভার ওপর রীতিমতো ক্ষোভ ঝাড়েন। পাঁচ ঘণ্টার ওই বৈঠক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেখানে পেত্রো বলেন, কলম্বিয়ার বর্তমান সরকার ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না।
পেত্রো আরও বলেন, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গতকাল রোববার এক পোস্টে পেত্রো লেখেন, ‘আমি প্রশাসনিক অধিদপ্তরের মন্ত্রী ও পরিচালকদের পদত্যাগ করার অনুরোধ জানাই। জনগণের নির্দেশিত কর্মসূচির সঙ্গে আরও বেশি মানানসই হতে মন্ত্রিসভায় কিছু পরিবর্তন আনা হবে।’
মঙ্গলবারের ওই বৈঠকের পর রোববার রাত পর্যন্ত তিন মন্ত্রী ও দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগের অনুরোধ জানিয়ে পেত্রোর পোস্টের পরপরই শ্রমমন্ত্রী গ্লোরিয়া রামিরেজ এক্সে এক পোস্টে তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
রামিরেজ লেখেন, রাজনীতিকে গোষ্ঠীতন্ত্র ও অস্পষ্টতা ছাড়াই এগিয়ে যেতে দিতে হবে।
আরও পড়ুনঅভিবাসীবাহী উড়োজাহাজ নামতে দিল না কলম্বিয়া, শুল্ক নিয়ে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি ট্রাম্প-পেত্রোর২৭ জানুয়ারি ২০২৫এর আগে কলম্বিয়ার পরিবেশমন্ত্রী মারিয়া সুসানা মুহামেদ গঞ্জালেজ পদত্যাগ করেন।
মঙ্গলবারের বৈঠকে পেত্রোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরমান্দো বেনেদেত্তি উপস্থিত ছিলেন, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছিলেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। বেনেদেত্তির বিরুদ্ধে ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় অবৈধ অর্থের লেনদেন নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে তাঁর সাবেক স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে লরা সারাবিয়াকে নিয়োগ দেওয়া নিয়েও মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য আপত্তি তুলেছিলেন। নানা কেলেঙ্কারিতে পেত্রোর সাবেক চিফ অব স্টাফ সারাবিয়ার নাম জড়িয়েছে। কলম্বিয়ার বর্তমান সরকারে রকেটগতিতে তাঁর উত্থান হয়েছে।
আরও পড়ুনকলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন গুস্তাভো পেত্র০৭ আগস্ট ২০২২.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কলম ব য় র র পদত য গ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।