যশোরের মনিরামপুরে জেসমিন আকতার জ্যোৎস্না (৩৬) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। তুচ্ছ ঘটনায় রোববার তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি মারধর করেন। এ ঘটনার জেরে রোববার গভীর রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভাষ্য। যদিও জেসমিনের ভাই অভিযোগ করেছেন, তাঁর বোনকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন শ্বশুর। এতে রাজি না হওয়ায় মারধরের পর হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয় জেসমিনকে।
জেসমিন গোপালপুর গ্রামের আবদুল মোমিন দফাদারের ছেলে রায়হান হোসেনের স্ত্রী। এ দম্পতির তিন সন্তান। জেসমিন একই উপজেলার কুলটিয়ার গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গত বছর স্ত্রী-সন্তানদের রেখে মালয়েশিয়া যান রায়হান। এ সময় তাঁর বাবা মোমিন দফাদার জেসমিনকে কুপ্রস্তাব দেন। বিষয়টি মোবাইল ফোনে তিনি স্বামীকে জানান। কয়েক মাসের মধ্যে তিনি মালয়েশিয়া থেকে ফিরে আসেন। পরে গোপালপুর বাজারে ব্যবসা শুরু করেন রায়হান।

রায়হান হোসেনের ভাষ্য, রোববার দুপুরে রান্না করাকে কেন্দ্র করে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে স্ত্রী জেসমিনের ঝগড়া হয়। এরই এক পর্যায়ে তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন মা-বাবা। এ ঘটনায় অভিমান করে গভীর রাতে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরের আড়ায় গলায় ফাঁস নেন জেসমিন। যদিও তিনি স্বীকার করেন, তাঁর বাবার কারণে পরিবারে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। এ জন্যই তিনি দ্রুত মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এসেছিলেন।
সোমবার পুলিশ জেসমিনের লাশ ময়নাতদন্তের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ বিষয়ে তাঁর ভাই সাইফুল ইসলাম সাগর থানায় অভিযোগ দেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে। সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শ্বশুরের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাঁর বোনকে তুচ্ছ ঘটনার জেরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার চালাচ্ছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে শ্বশুর আবদুল মোমিন পলাতক।

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বলেন, আপাতত তারা অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ভিন্ন কিছু পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সাথী খাতুন নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার উপজেলার সদকী ইউনিয়নের করাতকান্দি গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাথী খাতুন (২২) ওই গ্রামের মতিয়ার শেখের ছেলে মো.

সীমান্তের স্ত্রী। ঘটনার পর সীমান্তসহ তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়েছে।
গৃহবধূর স্বজনদের অভিযোগ, অন্য নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে সীমান্ত তার স্ত্রী সাথী খাতুনকে পিটিয়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে হত্যা করেছে। পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, প্রায় আট বছর আগে সীমান্তের সঙ্গে একই ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের মনছুর শেখের মেয়ে সাথী খাতুনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এই দম্পতির নাহিদ (৬) ও আফসানা (৪ মাস) নামে দুই সন্তান রয়েছে। প্রায় এক বছর আগে সীমান্ত তাঁর এক খালাতো বোনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। সমস্যার সমাধানে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে। গত রোববার খালাতো বোনকে নিয়ে ঘোরাফেরা করে সীমান্ত। রাতে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। সোমবার সকালে সাথীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, কুমারখালী থানা চত্বরে ভ্যানের ওপর রাখা সাথীর প্যাকেট করা মরদেহ ঘিরে স্বজনরা আহাজারি করছেন। এ সময় সাথীর শিশু ছেলে নাহিদ বলে, ‘মাকে আমার বাবা রাত্রি লাঠি দিয়ে মারেছে। ব্লেড দিয়ে হাত-পা কাটেছে।’

সাথীর বড় ভাই সবুজের ভাষ্য, খালাতো বোনের সঙ্গে সীমান্তের অনৈতিক সম্পর্ক চলছিল। একাধিকবার সালিশও হয়েছে এ নিয়ে। খালাতো বোনকে ত্যাগ করতে গত সপ্তাহে সীমান্তকে ৯০ হাজার টাকাও দেন তারা। তবুও রোববার খালাতো বোনকে নিয়ে সীমান্ত ঘোরাঘুরি করে। এ বিষয়ে তাঁর বোন স্বামীর কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে সীমান্ত তাঁর বোনকে পিটিয়ে ও ব্লেড দিয়ে জখম করে হত্যা করে। পরে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি। 
সীমান্তের বাড়িতে দেখা যায়, স্বজন ও উৎসুক জনতার ভিড়। ঘরের দরজায় তালা। সীমান্তের পরিবারের সবাই আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ সময় সীমান্তের চাচি ডলি খাতুন বলেন, খালাতো বোনের সঙ্গে সীমান্তর প্রেম নিয়ে ঝামেলা চলছিল। তবে তার স্ত্রী কীভাবে মারা গেছে বলতে পারছেন না। ঘটনার পর সীমান্তের মা-বাবাসহ লোকজন পালিয়ে গেছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ হবধ র এ ঘটন মরদ হ ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কের হার কমায় একে ঐতিহাসিক চুক্তি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের শুল্ক আলোচকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “এটি সুস্পষ্ট এক কূটনৈতিক সাফল্য।”

শুক্রবার (১ আগস্ট) এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শুল্ক হার ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে আরোপিত শুল্ক হারের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। এর মাধ্যমে আমাদের আলোচকরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও সেটাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবিচল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন।

তিনি বলেন, আলোচকরা এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নিরলসভাবে কাজ করে জটিল আলোচনাকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়েছেন। যেখানে শুল্ক, অশুল্ক ও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত এই চুক্তি আমাদের তুলনামূলক সুবিধা সংরক্ষণ করেছে। পাশাপাশি, বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তাবাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি ও আমাদের মূল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছে।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ

কোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, এ অর্জন কেবল বাংলাদেশের বৈশ্বিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরে না; বরং এটি বৃহত্তর সম্ভাবনা, ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল, উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আজকের সাফল্য আমাদের জাতীয় দৃঢ়তা ও আগামী দিনের আরো শক্তিশালী অর্থনীতির সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।

 

তথ্যসূত্র: বাসস

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ