দুই গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ হত্যার অভিযোগ
Published: 10th, February 2025 GMT
যশোরের মনিরামপুরে জেসমিন আকতার জ্যোৎস্না (৩৬) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। তুচ্ছ ঘটনায় রোববার তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি মারধর করেন। এ ঘটনার জেরে রোববার গভীর রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভাষ্য। যদিও জেসমিনের ভাই অভিযোগ করেছেন, তাঁর বোনকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন শ্বশুর। এতে রাজি না হওয়ায় মারধরের পর হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয় জেসমিনকে।
জেসমিন গোপালপুর গ্রামের আবদুল মোমিন দফাদারের ছেলে রায়হান হোসেনের স্ত্রী। এ দম্পতির তিন সন্তান। জেসমিন একই উপজেলার কুলটিয়ার গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গত বছর স্ত্রী-সন্তানদের রেখে মালয়েশিয়া যান রায়হান। এ সময় তাঁর বাবা মোমিন দফাদার জেসমিনকে কুপ্রস্তাব দেন। বিষয়টি মোবাইল ফোনে তিনি স্বামীকে জানান। কয়েক মাসের মধ্যে তিনি মালয়েশিয়া থেকে ফিরে আসেন। পরে গোপালপুর বাজারে ব্যবসা শুরু করেন রায়হান।
রায়হান হোসেনের ভাষ্য, রোববার দুপুরে রান্না করাকে কেন্দ্র করে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে স্ত্রী জেসমিনের ঝগড়া হয়। এরই এক পর্যায়ে তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন মা-বাবা। এ ঘটনায় অভিমান করে গভীর রাতে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরের আড়ায় গলায় ফাঁস নেন জেসমিন। যদিও তিনি স্বীকার করেন, তাঁর বাবার কারণে পরিবারে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। এ জন্যই তিনি দ্রুত মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এসেছিলেন।
সোমবার পুলিশ জেসমিনের লাশ ময়নাতদন্তের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ বিষয়ে তাঁর ভাই সাইফুল ইসলাম সাগর থানায় অভিযোগ দেন। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে। সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শ্বশুরের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাঁর বোনকে তুচ্ছ ঘটনার জেরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার চালাচ্ছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে শ্বশুর আবদুল মোমিন পলাতক।
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বলেন, আপাতত তারা অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ভিন্ন কিছু পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সাথী খাতুন নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার উপজেলার সদকী ইউনিয়নের করাতকান্দি গ্রামের স্বামীর বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাথী খাতুন (২২) ওই গ্রামের মতিয়ার শেখের ছেলে মো.
গৃহবধূর স্বজনদের অভিযোগ, অন্য নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে সীমান্ত তার স্ত্রী সাথী খাতুনকে পিটিয়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে হত্যা করেছে। পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, প্রায় আট বছর আগে সীমান্তের সঙ্গে একই ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের মনছুর শেখের মেয়ে সাথী খাতুনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এই দম্পতির নাহিদ (৬) ও আফসানা (৪ মাস) নামে দুই সন্তান রয়েছে। প্রায় এক বছর আগে সীমান্ত তাঁর এক খালাতো বোনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। সমস্যার সমাধানে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে। গত রোববার খালাতো বোনকে নিয়ে ঘোরাফেরা করে সীমান্ত। রাতে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। সোমবার সকালে সাথীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, কুমারখালী থানা চত্বরে ভ্যানের ওপর রাখা সাথীর প্যাকেট করা মরদেহ ঘিরে স্বজনরা আহাজারি করছেন। এ সময় সাথীর শিশু ছেলে নাহিদ বলে, ‘মাকে আমার বাবা রাত্রি লাঠি দিয়ে মারেছে। ব্লেড দিয়ে হাত-পা কাটেছে।’
সাথীর বড় ভাই সবুজের ভাষ্য, খালাতো বোনের সঙ্গে সীমান্তের অনৈতিক সম্পর্ক চলছিল। একাধিকবার সালিশও হয়েছে এ নিয়ে। খালাতো বোনকে ত্যাগ করতে গত সপ্তাহে সীমান্তকে ৯০ হাজার টাকাও দেন তারা। তবুও রোববার খালাতো বোনকে নিয়ে সীমান্ত ঘোরাঘুরি করে। এ বিষয়ে তাঁর বোন স্বামীর কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে সীমান্ত তাঁর বোনকে পিটিয়ে ও ব্লেড দিয়ে জখম করে হত্যা করে। পরে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
সীমান্তের বাড়িতে দেখা যায়, স্বজন ও উৎসুক জনতার ভিড়। ঘরের দরজায় তালা। সীমান্তের পরিবারের সবাই আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ সময় সীমান্তের চাচি ডলি খাতুন বলেন, খালাতো বোনের সঙ্গে সীমান্তর প্রেম নিয়ে ঝামেলা চলছিল। তবে তার স্ত্রী কীভাবে মারা গেছে বলতে পারছেন না। ঘটনার পর সীমান্তের মা-বাবাসহ লোকজন পালিয়ে গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ হবধ র এ ঘটন মরদ হ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক
লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।
সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।
কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে।
এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা।
বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।
যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে।