পৈতৃক সম্পত্তি ভাইয়ের সমান পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রুনা খান। গতকাল এ খবর নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান তিনি। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরই মধ্যে চিত্রনায়িকা দিতি-সোহেল চৌধুরীর কন্যা লামিয়া চৌধুরী জানালেন, তারা দুই ভাই-বোনও পৈতৃক সম্পত্তি সমানভাবে পেয়েছেন।

লামিয়া চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সঙ্গে পোস্ট করেছেন রুনা খানকে নিয়ে প্রকাশিত খবরের স্ক্রিনশট। এ পোস্টে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “এটাই তো স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আমার আর আমার ভাইয়ের মধ্যে সব সমান সমান। আমাদের বাবা-মা এটাই চেয়েছেন আর আমাদের এভাবেই বড় করেছেন।”

প্রচলিত আইনের সমালোচনা করে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক, আইন আমাদেরকে অনুভব করায় আমরা সমান না। আর শুধু শুধু সবকিছু জটিল করে আমাদের সময় নষ্ট করে, দ্বি-গুণ সময় ব্যয় হয়। যেখানে মা স্পষ্ট বলে গিয়েছিলেন যে, আমরা সমান। আর এগুলো আমি দেশে থেকে সবকিছু করি। অথচ আমার এখানে শুনতে হয় যে, আমার ভ্যালু অর্ধেক। এসব ঠিক না।”

আরো পড়ুন:

আপনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে হত্যা করার চেষ্টা করছেন: জয়া

প্রশংসা কুড়াচ্ছে সাব্বির-কোনালের গান

সমানভাবে পৈতৃক সম্পত্তি বণ্টন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন লামিয়া ও তার ভাই। এ তথ্য স্মরণ করে লামিয়া চৌধুরী বলেন, “এসব কারণে যেরকম হেনস্তার শিকার হই, আমার ভাইয়ের আরো বেশি হেনস্তা হতে হয়েছে। কারণ ও দেশে থাকে না। কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বারে বারে সময়, শক্তি, টাকা খরচ করে দেশে আসা লাগে আমার হেবার কাজ করার জন্য। মাঝখান দিয়ে লাভ নিচ্ছেন আপনারা।”

সম্পত্তি বণ্টনের আইন সংশোধন করা উচিত বলে মনে করেন লামিয়া। তার ভাষায়, “ইসলাম পক্ষপাতশূন্য। এই আইনের পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে। কিন্তু আগের সমাজ এখনকার সমাজ এক না। আগেকার দিনে মেয়েদের কম দেওয়া হতো কারণ বিবাহিত মেয়েদের খরচ তার স্বামী বহন করতেন। আর অবিবাহিত মেয়েদের খরচ তার ভাই বহন করতেন। আর বয়স্ক, অসুস্থ বাবা-মায়ের দায়িত্বও ছিল ছেলেদের। এখন এরকম হয় না। মেয়েরা এখন ভাইয়ের উপরে নির্ভরশীল না। আমি বিবাহিত না বলে আমার অর্থনৈতিক দায়িত্ব আমার ভাইয়ের নয়। বরং এখন স্ত্রী কিংবা বোনেরা সংসারে খরচ শেয়ার করে। সুতরাং এখনো কেন এ ধরনের বৈষম্য থাকবে? এই ধরনের আইন সংস্কার করা উচিত, অন্তত যেসব পরিবার এই বৈষম্যের সঙ্গে একমত নয়, তাদের ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক করা উচিত নয়।”

ভাই যদি বোনের চেয়ে সম্পত্তি বেশি নেন, তবে বাবা-মায়ের দায়িত্বও তারই নেওয়া উচিত। লামিয়া চৌধুরী বলেন, “বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে সমানভাবে বড় করেছে। ভাই ও আমাকে সমান চোখে দেখেছে। শুধু আপনারাই আমাকে ছোট করছেন। এসব বন্ধ করুন। আর যদি বাধ্যতামূলক করেন, তাহলে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী, এটাও বাধ্যতামূলক করেন যে, ভাই বেশি পাওয়ার পর বোন এবং বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সব দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। নাকি শুধু নেওয়ার বেলায় আছেন, দেওয়ার বেলায় নাই? ইসলামের নিয়ম ন্যায্য। আপনাদের নিয়ম সঠিক নয়। লোভ সামলান, নিজেদের শোধরান।”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র আম দ র আম র ভ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ