গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আবুল কাশেম ছিল এক এতিম কিশোর। তার মা নিখোঁজ রয়েছেন ১৫ বছর ধরে, বাবাও কবরদেশে ঘুমিয়ে আছেন ৬ বছর হলো। তবু জীবন চালিয়ে নিচ্ছিল এই কিশোর। একাই সামলাচ্ছিল বাড়ি। এই এতিম কিশোরের মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশবাসী ছাড়া মা ও বাবা হারানো এই কিশোরের দাফনের জন্য, তার রুহের শান্তির জন্য দোয়া করার আর কেউ নেই। 

আবুল  কাশেমের বয়স ১৭ বছর। গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার মৃত জামান হাজীর ছেলে সে। বুধবার বেলা ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

বিকেলে কাশেমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছে। কোথায় কবর খোঁড়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা করছে। বাবা-মা ও ভাই না থাকায় এলাকাবাসী তার মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার চাচি বিপাল করে বলছিলেন, এই দেশ ছাড়া এতিম কাশেমকে দাফন করার, তার জন্য দোয়া করার কেউ রইল না। 

কাশেমের বাড়িতে ভিড় করা শোকাহত মানুষের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, কাশেম এতিম। তার বাবা মারা গেছেন ছয় বছর আগে। তার মা হারিয়ে গেছেন; তার খোঁজ নেই ১৫ বছর হলো। বড় ভাই গত বছর জুলাইয়ে মারা গেছেন। 

সেখানে দাঁড়িয়ে কথা হয় আরো কাশেমের কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুইটি নামে কাশেমের এক ছোট বোন আছে। সে তাদের এক আত্মীয়ের বাসায় থাকে। 

যার সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি-ই বলেছেন, কাশেম ছিল স্পষ্টভাষী ছেলে। একাই বাড়িতে থাকত; পাশের অনুশীলন প্রি- একাডেমি স্কুলে পড়াশোনা করত। জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে মিছিল-মিটিং যেত সে। সে কথা এলাকার সবাই জানত। সদালাপি ও বিনয়ী ছেলে ছিল সে। 

কাশেমদের বাড়ির সামনে কথা হয় তার চাচি সুরাইয়া বেগমের সঙ্গে । তিনি বলেন, “শুক্রবার বিকেলে বাসার সামনে বসে আছি। ও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। সন্ধ্যার পরে শুনলাম ছাত্রদের সাথে কোথায় যেন গেছে। এরপরে তো আহত অবস্থায় হাসপাতালে। বাবা-মা নেই ওর। ওর মৃত্যুতে কাঁদার মতো কেউ নেই দেশবাসী ছাড়া। ওর মৃত্যুতে যারা দায়ী, তাদের বিচার চাই। 

কাশেমের দূর সম্পর্কের দুলাভাই সজিব আহমেদের শাহিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “একসাথে আমরা চলাচল করতাম। শুক্রবার রাতে কাশেমের আহত হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যাই। আমাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, বলে, শাহিন ভাই আমাকে অনেক মার মেরেছে। আমাকে বাঁচাও।”

“আমি কিছু করি নাই, ছাত্ররা ফোন দিছে; পরে আমি আইছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এরপর আর কথা বলতে পারিনি ও, ইনজেকশন দিয়ে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যায়। কেউ ছিল না; একা একা হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করেছি। আজ ওর মৃত্যু হয়েছে; এই মৃত্যুর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিচার চাই।”

আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর শাখার আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহন জানান, বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে আবুল কাশেমের দুটি জানাজা হবে।  সাড়ে ১০টায় রাজবাড়ী মাঠে প্রথম এবং বেলা সাড়ে ১১টায় মহানগরীর বোর্ড বাজার-সংলগ্ন আল-হেরা সিএনজি পাম্প মাঠে আবুল কাশেমের দ্বিতীয় জানাজা হবে। সেখানে থেকে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।

আবুল কাশেমকে শহীদ বর্ণনা করে আব্দুল্লাহ বলেন, গাজীপুরের শহীদ কাশেমকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা হত্যা করেছে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

আবুল কাশেম (১৭) গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার জামান হাজীর ছেলে। বুধবার বেলা ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এতিম এই কিশোরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজীপুরে ক্ষোভ দেখা যায়। তার এই মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে এলাকার মানুষ।

গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা হয়। তাদের আটকে রেখে মারধর করা হয়। এতে আহত হন ২০ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে গুরুতর জখম হন আবুল কাশেম। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

এ ঘটনার পরদিন শনিবার আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলার প্রধান আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা, যিনি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী।

ঢাকা/রেজাউল/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এত ম ক শ এল ক র র জন য অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ