কাশেম ছিল এতিম কিশোর, দাফন করবে এলাকাবাসী
Published: 12th, February 2025 GMT
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আবুল কাশেম ছিল এক এতিম কিশোর। তার মা নিখোঁজ রয়েছেন ১৫ বছর ধরে, বাবাও কবরদেশে ঘুমিয়ে আছেন ৬ বছর হলো। তবু জীবন চালিয়ে নিচ্ছিল এই কিশোর। একাই সামলাচ্ছিল বাড়ি। এই এতিম কিশোরের মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশবাসী ছাড়া মা ও বাবা হারানো এই কিশোরের দাফনের জন্য, তার রুহের শান্তির জন্য দোয়া করার আর কেউ নেই।
আবুল কাশেমের বয়স ১৭ বছর। গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার মৃত জামান হাজীর ছেলে সে। বুধবার বেলা ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বিকেলে কাশেমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছে। কোথায় কবর খোঁড়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা করছে। বাবা-মা ও ভাই না থাকায় এলাকাবাসী তার মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার চাচি বিপাল করে বলছিলেন, এই দেশ ছাড়া এতিম কাশেমকে দাফন করার, তার জন্য দোয়া করার কেউ রইল না।
কাশেমের বাড়িতে ভিড় করা শোকাহত মানুষের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, কাশেম এতিম। তার বাবা মারা গেছেন ছয় বছর আগে। তার মা হারিয়ে গেছেন; তার খোঁজ নেই ১৫ বছর হলো। বড় ভাই গত বছর জুলাইয়ে মারা গেছেন।
সেখানে দাঁড়িয়ে কথা হয় আরো কাশেমের কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুইটি নামে কাশেমের এক ছোট বোন আছে। সে তাদের এক আত্মীয়ের বাসায় থাকে।
যার সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি-ই বলেছেন, কাশেম ছিল স্পষ্টভাষী ছেলে। একাই বাড়িতে থাকত; পাশের অনুশীলন প্রি- একাডেমি স্কুলে পড়াশোনা করত। জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে মিছিল-মিটিং যেত সে। সে কথা এলাকার সবাই জানত। সদালাপি ও বিনয়ী ছেলে ছিল সে।
কাশেমদের বাড়ির সামনে কথা হয় তার চাচি সুরাইয়া বেগমের সঙ্গে । তিনি বলেন, “শুক্রবার বিকেলে বাসার সামনে বসে আছি। ও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। সন্ধ্যার পরে শুনলাম ছাত্রদের সাথে কোথায় যেন গেছে। এরপরে তো আহত অবস্থায় হাসপাতালে। বাবা-মা নেই ওর। ওর মৃত্যুতে কাঁদার মতো কেউ নেই দেশবাসী ছাড়া। ওর মৃত্যুতে যারা দায়ী, তাদের বিচার চাই।
কাশেমের দূর সম্পর্কের দুলাভাই সজিব আহমেদের শাহিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “একসাথে আমরা চলাচল করতাম। শুক্রবার রাতে কাশেমের আহত হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যাই। আমাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, বলে, শাহিন ভাই আমাকে অনেক মার মেরেছে। আমাকে বাঁচাও।”
“আমি কিছু করি নাই, ছাত্ররা ফোন দিছে; পরে আমি আইছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এরপর আর কথা বলতে পারিনি ও, ইনজেকশন দিয়ে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যায়। কেউ ছিল না; একা একা হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করেছি। আজ ওর মৃত্যু হয়েছে; এই মৃত্যুর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিচার চাই।”
আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর শাখার আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহন জানান, বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে আবুল কাশেমের দুটি জানাজা হবে। সাড়ে ১০টায় রাজবাড়ী মাঠে প্রথম এবং বেলা সাড়ে ১১টায় মহানগরীর বোর্ড বাজার-সংলগ্ন আল-হেরা সিএনজি পাম্প মাঠে আবুল কাশেমের দ্বিতীয় জানাজা হবে। সেখানে থেকে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
আবুল কাশেমকে শহীদ বর্ণনা করে আব্দুল্লাহ বলেন, গাজীপুরের শহীদ কাশেমকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা হত্যা করেছে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
আবুল কাশেম (১৭) গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার জামান হাজীর ছেলে। বুধবার বেলা ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এতিম এই কিশোরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজীপুরে ক্ষোভ দেখা যায়। তার এই মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে এলাকার মানুষ।
গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা হয়। তাদের আটকে রেখে মারধর করা হয়। এতে আহত হন ২০ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে গুরুতর জখম হন আবুল কাশেম। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
এ ঘটনার পরদিন শনিবার আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলার প্রধান আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা, যিনি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী।
ঢাকা/রেজাউল/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এত ম ক শ এল ক র র জন য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।