অবৈধ সিগারেট জব্দে ৩ জেলায় অভিযান
Published: 12th, February 2025 GMT
অবৈধ সিগারেট বিক্রির অভিযোগে দেশের ৩ জেলায় অভিযান চালিয়েছে কাস্টমস, ভ্যাট অফিস ও পুলিশের যৌথ বাহিনী। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সিলেট ও শরিয়তপুর ও গত সোমবার চট্টগ্রামে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে ৫৪ হাজার ৯২০ শলাকা দেশীয় উৎপাদিত ও বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেট জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অবৈধ সিগারেট বিক্রির অপরাধে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেটের মৌলভীবাজারে অবৈধ বিদেশি সিগারেট জব্দে যৌথ অভিযান চালিয়েছে কাস্টমস ও পুলিশ। বুধবার দুপুর সোয়া ২টায় মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজারের পুরাতন হাসপাতাল রোড ও কুদরত উল্লাহ রোডে অভিযান চালানো হয়। এ সময় দেশীয় উৎপাদিত অবৈধ সিগারেট ও বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়।
যৌথ অভিযানে ৩২ হাজার শলাকা দেশীয় উৎপাদিত অবৈধ সিগারেট জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ফিউচার কিংস, ফিউচার কিংস স্পেশাল ব্লু, মানসুন, পোলো, ভার্জিন, ওরিস সুইচ মেনথল অরেঞ্জ, ওরিস সিলভার, ওরিস পালস, ওরিস পান্ডা, ওরিস ইনটেনস মোজিটো, ওরিস ফ্যাশন, মন্ড স্ট্রবেরি, মন্ড গ্রিন অ্যাপল, এক্সএসও ব্ল্যাক ফ্রুটস অ্যাপল মিন্ট, এক্সএসও ব্ল্যাক ফ্রুটস স্ট্রবেরি, এলিগ্যান্স স্ট্রবেরি, লুভিন স্ট্রবেরি, লুভিন প্যান মাসালা, লুভিন চকোলেট, লুভিন গাম মিন্ট, লুভিন সোর অ্যাপল, ৩০৩ এসএস ব্রাউন ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে আইনি ব্যবস্থা শুরু করে কাস্টমস। জব্দ হওয়া অবৈধ সিগারেটগুলো ধ্বংসের জন্য রাখা হয়েছে।
এদিকে, অবৈধ সিগারেট বিক্রির অপরাধে শরিয়তপুর সদরের আংগারিয়া ইউনিয়নের পালং বাজারের লোকনাথ স্টোরে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে ৬ হাজার শলাকা মন্ড অ্যাপল ও স্ট্রবেরি, ন্যানো ওরিস, এসে লাইট, লুগিন ফ্রেশ, ভ্যাপ লিং ব্র্যান্ডের অবৈধ বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। অবৈধ সিগারেটগুলো জনসম্মুখে ধ্বংস করা হবে।
অবৈধ বিদেশি সিগারেট বিক্রির অপরাধে চট্টগ্রামে দুইটি দোকানে অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট কমিশনার ও পুলিশ। গত সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে পুরাতন গির্জা এলাকার ইত্যাদি স্টোর ও এস.
অভিযানে দুই দোকান থেকে অবৈধ বিদেশি ব্র্যান্ডের ১৬ হাজার ৯২০ পিস মন্ড, ওরিস, এসে এবং পেট্রন সিগারেট জব্দ করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ সিগারেটগুলো জব্দ করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিগারেটসহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর গত ৯ জানুয়ারি থেকে শুল্ক ও কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতোমধ্যেই নতুন মূল্যের ভিত্তিতে স্ট্যাম্প ও ব্যান্ড রোল ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করেছে। সিগারেটের ওপর কর বাড়ায় দেশে অবৈধ বিদেশি সিগারেট আমদানি বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অব ধ স গ র ট অব ধ ব দ শ এ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।