কয়রায় লবণাক্ত জমিতে তরমুজ চাষে তিন গুণ লাভ
Published: 13th, February 2025 GMT
খুলনার সুন্দরবন–সংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন চলছে তরমুজ আবাদের মহাযজ্ঞ। কোথাও তরমুজের বীজ রোপণের কাজ চলছে, কোথাও আবার সার, পানি ও কীটনাশক ছিটাচ্ছেন কৃষক। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে এমন ব্যস্ততা। অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় পতিত জমিতেও প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষে নেমেছেন অনেকে।
গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, আমাদী, চণ্ডীপুর, খিরোল, কিনুকাটি, হরিনগর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিলের মধ্যে জমি প্রস্তুতির কাজ শেষে জমিতে তরমুজের বীজ রোপণ করা হচ্ছে। নারী শ্রমিকেরা জমিতে তরমুজের বীজ বসিয়ে দিচ্ছেন। কিছু মাঠে বীজ রোপণ শেষ হওয়ায় সেখানে অনবরত পানি ছিটানো হচ্ছে। দূরের খালে কিংবা পুকুরে জমা পানি সেচযন্ত্রের সাহায্যে পাইপ দিয়ে আনা হচ্ছে খেতে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ বছর আগেও কয়রার অধিকাংশ এলাকায় আমন চাষের পর জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। শুষ্ক মৌসুমে মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যেত। তাই বৃথা পরিশ্রম হবে ভেবে কেউ চাষাবাদের চেষ্টাও করতেন না। এখন সেই জমিগুলোই স্বপ্ন দেখাচ্ছে তরমুজচাষিদের। অল্প সময়ে বিনিয়োগের দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ লাভ করায় দিন দিন তাঁদের ভরসা হয়ে উঠছে লবণসহিষ্ণু তরমুজ চাষ।
কয়রার আমাদী গ্রামের কৃষক আবিয়ার গাজী বলেন, গত বছর তরমুজে ব্যাপক লাভ হয়েছিল। কিছু কিছু কৃষক বিঘাপ্রতি লাখ টাকার বেশি লাভ করেছিলেন। এ কারণে এবার অনেক বেশি কৃষক তরমুজের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি নিজেও এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে তরমুজের বীজ রোপণ করেছেন। এ বছর চাষের খরচ, সারের দাম, বীজের দাম সবই বেশি।
মৌসুমি শ্রমিকদেরও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। কয়রার হরিনগর বিলের একটি খেতে বীজ রোপণ করতে করতে মীনাক্ষী মণ্ডল নামের এক নারী বলছিলেন, ‘সারা বেলা ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ করতিছি এইখানে। এখন আমাগের দম ফেলার সময় নেই। প্রতিবছর তরমুজ চাষের মৌসুম শুরু হলি এই এলাকার নারীরা ঘরের কাজ শেষ কুরিও কয়েক হাজার টাকা আয় করতি পারে।’
কয়রা উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে উপজেলায় মাত্র ৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে তরমুজ চাষ হয় ৬৫০ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালে উপজেলায় তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯৫ হেক্টরে। ২০২৩ সালে উপজেলায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়। আর ২০২৪ সালে তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৩০ হেক্টরে। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করছেন কৃষকেরা। এবার উপজেলায় তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২০০ হেক্টরে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান চাষের চেয়ে তরমুজে লাভ বেশি। ধানের বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তুলতে অন্তত পাঁচ মাস সময় লাগে। এরপর খরচ বাদে এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে লাভ হয় সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে তরমুজের বীজ রোপণ থেকে পাকা তরমুজ সংগ্রহ পর্যন্ত সময় লাগে সর্বোচ্চ আড়াই মাস। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। আর ভাগ্য ভালো হলে তরমুজ বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়।
কয়রার মহারাজপুর এলাকার বিলে শুধু একবার আমন চাষ হতো। এ বছর প্রথমবারের মতো ১২০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ হচ্ছে। সেখানের একটি খেতে পানি দেওয়ার ফাঁকে কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমন ধান ওঠার পর এই বিল পড়ে থাকত। এবার প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষের চেষ্টা করছি আমরা। এই বিলে যাঁরা তরমুজ চাষ করছেন, তাঁদের অধিকাংশ নতুন কৃষক।’
কয়রা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গুরুদাশ মণ্ডল বলেন, ‘কয়রার অধিকাংশ জমির লবণাক্ততার মাত্রা বেশি। ফলে একসময় শুধু আমন ধান ছাড়া কোনো ফসল হতো না। তবে এখন লবণসহিষ্ণু জাতের তরমুজ চাষে কৃষকদের সুদিন ফিরেছে। কম বিনিয়োগ আর কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহও বাড়ছে কৃষকদের। কয়রার অনেক এক ফসলি বিলে এবার প্রথমবারের মতো তরমুজ আবাদ হচ্ছে। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে উৎপাদনও অনেক ভালো হবে বলে আশা করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তরম জ চ ষ র পর ম ণ ক ষকদ র উপজ ল য় কয়র র
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় নারী এশিয়া কাপ: শক্তিশালী গ্রুপে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে।
আগামী বছরের ১-২৩ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে নারী এশিয়া কাপ। ১২ দলের এই টুর্নামেন্টের ড্র সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ দুপুরে। যেখানে শক্তিশালী গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তান, চীন ও উত্তর কোরিয়া। জাঁকজমকপূর্ণ ড্রতে বাংলাদেশ ছিল চার নম্বর প্লটে। সঙ্গী ছিল ইরান ও ভারত। গ্রুপিং ড্রতে টুর্নামেন্টের একমাত্র অভিষিক্ত দল বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় দল নির্বাচিত হয়।
পরের রাউন্ডে ‘বি’ গ্রুপের চতুর্থ দল হয় উজবেকিস্তান। এরপর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চীন বাংলাদেশের গ্রুপের দ্বিতীয় দল হয়। সবশেষ দল হিসেবে এই গ্রুপে যুক্ত হয় উত্তর কোরিয়া। যারা ২০১০ সালে প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছিল।
ড্র অনুষ্ঠানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও এএফসি অংশগ্রহণকারী সকল দেশের অধিনায়ক ও কোচকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রথমবার নারী এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের কেউ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি। গতকাল অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কোচ, খেলোয়াড়রা ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করে হারবার ব্রিজের সামনে। সেখানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া, তাইওয়ান,ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্বার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ পড়েছিল কঠিন ‘সি’ গ্রুপে, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল বাহরাইন (র্যাঙ্কিং ৯২), তুর্কমেনিস্তান এবং স্বাগতিক মিয়ানমার (র্যাঙ্কিং ৫৫)। র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে পিছিয়ে থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে বোঝার উপায় ছিল না।
প্রথম ম্যাচেই বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলের নৈপুণ্যে ২-১ ব্যবধানে হারায় মিয়ানমারকে। শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকেও ছাড়েনি মেয়েরা। ৭-০ গোলের দাপুটে জয় তুলে নেয় তারা।
এই জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। আগামী বছর মার্চে বসবে টুর্নামেন্টের ২১তম আসর, যেখানে খেলবে ১২টি দেশ।
ঢাকা/ইয়াসিন