ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে কাজ ফিরতে চাই: দুবাইয়ে প্রধান উপদেষ্টা
Published: 13th, February 2025 GMT
ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে নিজের কাজে ফিরে যাওয়ার কথা বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা এ যাবতকালে যত নির্বাচন করেছে, তা ছিল ভুয়া।’’
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গোটা বিশ্বকে ধন্যবাদ জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সামাজিক শৃঙ্খলা ও ভঙ্গুর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাও চ্যালেঞ্জ। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার করতে আমরা কাজ করছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার পুরো অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। তারা বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছে। এসব টাকা ফিরিয়ে আনা এই মুহূর্তে আমাদের অন্যতম কাজ।’’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছি। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে শিগগিরই সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে যাব। সেটা ডিসেম্বরে হতে পারে। জাতিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে আমি আমার পুরনো কাজে ফিরে যেতে চাই।’’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা- সবই উন্নতি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে সকালে আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল রহমাল বিন মুহাম্মদ আল ওয়াইসের সাথে বৈঠক করেন অধ্যাপক ইউনূস। বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ করায় ড.
এ সময় আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ-আমিরাতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে।’’
ড. ইউনূস আমিরাতকে ধন্যবাদ জানান, ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশিকে দেশটিতে কাজের সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমিরাতের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে তিনি শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমদ।
এর আগে বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্থানীয় সময় রাত ১১টায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ত র স ব স থ য উপদ ষ ট সরক র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।