বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে কথাসাহিত্যিক, কবি ও সাংবাদিক রাশেদ মেহেদীর উপন্যাস ‘দ্য জার্নালিস্ট’। বইটি প্রকাশ করেছে অক্ষর প্রকাশনী। সাংবাদিকতাকে উপজীব্য করে লেখা উপন্যাসটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের কর্মপরিবেশ, কর্মক্ষেত্রের রাজনীতি, পেশাদার সাংবাদিকের টিকে থাকার লড়াই এবং জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো নিয়ে।

উপন্যাসটির বুনন শুরু হয় নামকরা সাংবাদিক সুমিত হককে নিয়ে। সুমিত হক হঠাৎ করেই সংবাদ শিরোনাম হলেন। তাকে ঘিরে একটি ভিডিওচিত্র দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিক সমাজে তো বটেই, ঘরে-ঘরে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠলেন সুমিত হক। শুধু টেলিভিশনের হেড অব নিউজের পদ নয়, দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্তও নিতে হলো তাকে। সেই চাঞ্চল্যের মধ্যেই খুন হলেন একটি জাতীয় দৈনিকের একজন জেলা প্রতিনিধি রূপালি বণিক। সেই খুনের ঘটনার ওপর অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য সেই জেলা শহরে পাঠানো হলো আরেকজন তুখোড় রিপোর্টার কল্যাণ কবীরকে।

সেই রিপোর্ট করতে গিয়ে অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার মাঝে দুই পাশে দুই মানবীর ছায়ামূর্তি উদভ্রান্ত করে তোলে কল্যাণকে। শেষ পর্যন্ত উঁচু পাহাড়ের গভীর খাদের সামনে দাঁড়াতে হলো তাকে। সামনে বিশাল জলপ্রপাত ছুটে চলেছে পাহাড়ের শরীর বেয়ে নিচের দিকে। পেছনে খাদের দিকে তাকালে দেখা যায় গভীর জঙ্গল। সেই পাহাড়ের চূড়া থেকে কল্যাণ কবীর নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তা কক্ষে আবার হাসিমুখে এসে দাঁড়ান সুমিত হক। বার্তাকক্ষজুড়ে তখন আবছা আঁধার। এডিটিং প্যানেলে তরুণ এক শিক্ষানবিশ রিপোর্টার সে সময় এক টুকরো আলোর সামনে দাঁড়িয়ে টের পান, তার মুখ বাঁধা, কণ্ঠ দেয়ার শক্তি নেই তার.

..।

উপন্যাসটির লেখক রাশেদ মেহেদী বলেন, ‘এ উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের কোনো চরিত্র বা ঘটনার সঙ্গে উপন্যাসের কাহিনির কোনো সম্পর্ক নেই। আশা করি, পাঠকমহলে সাড়া পাবে উপন্যাসটি।’

১১০ পৃষ্ঠার ‘দ্য জার্নালিস্ট’ এর প্রচ্ছদ করেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত। প্রকাশক: অক্ষর প্রকাশনী। বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, স্টল নং-৩০। বিশেষ কমিশন ছাড়ে বইটি মূল্য ১৯০ টাকা।  উপন্যাসটি উৎসর্গ করা হয়েছে সাংবাদিকতার বাতিঘর হিসেবে খ্যাত দুই সাংবাদিক তোয়াব খান ও গোলাম সারওয়ারকে।

কথাসাহিত্যিক, কবি ও সাংবাদিক রাশেদ মেহেদী স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার ছোটগল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘গনি আদমের ক্যাম্পাস’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাসটি পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। এরপর প্রকাশিত হয় আরও দু’টি উপন্যাস ‘রাজপথের মহাকাব্য’ ও ‘কংক্রিটের কালোবিড়াল’।

এ ছাড়া অনলাইন সাহিত্য সাময়িকী লিটবাংলায় (litbangla.com) তার লেখা বাংলায় প্রথম সাইবার পাঙ্ক থ্রিলার ‘থ্রি চিয়ার্সমেটাভার্স’ প্রকাশিত হয়েছে। পিডিএফ ফরমেটে তার একমাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘ফেসবুকে দেখি চাঁদ’ ২০২৪ সালে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। এ কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন বাংলা কবিতার জীবন্ত কিংবদন্তি কবি নির্মলেন্দু গুণ।

রাশেদ মেহেদীর পেশা সাংবাদিকতা। বর্তমানে তিনি দেশের প্রথম রিয়েল টাইম বাইলিংঙ্গুয়াল (বাংলা ইংরেজি) ভিউজ পোর্টাল ‘ভিউজ বাংলাদেশ’ (www.viewsbangladesh.com)-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক জনকণ্ঠ, একুশে টেলিভিশন এবং সমকালে কাজ করেছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল উপন য স বইম ল য় ব দ কত ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে আবার ইরানের হামলা, নাগরিকদের নেওয়া হলো সুরক্ষিত এলাকায়

ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ইরান নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের এক মুখপাত্রের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ হামলা ভোর পর্যন্ত চলবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি ও আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজের প্রতিবেদনেও নতুন করে ইসরায়েলে ইরানের হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। খবর-গার্ড়িয়ান

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি শহর তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত করেছে। এতে চলতি সপ্তাহের জি-৭ বৈঠকে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে যে, এই দুই আঞ্চলিক শত্রুর মধ্যে সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। 

নাগরিকদের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান: ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের হামলার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পর পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, ‌দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব। নাগরিকরা এখন দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যেতে পারে।

এর আগে রোববার সোমবার ভোরে ইসরায়েলে ইরানের হামলায় চারজন নিহত ও ৮৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। এছাড়া বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে।   

ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জরুরি পরিষেবা সোমবার জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজন মহিলা এবং দুজন পুরুষ, যাদের সকলের বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।

নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে: ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলায় শুক্রবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।

তেল আবিবের কাছে মধ্য ইসরায়েলি শহর পেতাহ টিকভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সেখানে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। কংক্রিটের দেয়াল পুড়ে গেছে। জানালা উড়ে গেছে। একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশটির জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর হাইফায় হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অনুসন্ধান চলছে। যেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

নতি স্বীকারের কোনোও ইচ্ছা নেই: ইরান
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটি ইসরায়েলে কমপক্ষে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে উত্তেজনা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানের কাছে নতি স্বীকার করার কোনোও ইচ্ছা তাদের নেই। কারণ শুক্রবার তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা জোর দিয়েছে।

এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’ এতে কিছুক্ষণের জন্য টেলিভিশনটির সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পরে সেটি পুনরায় সম্প্রচারে আসে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অধীনস্থ ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক (আইআরআইএনএন) জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলের হামলার পর আগুনে পুড়তে থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক সাংবাদিক। ভিডিওটিতে ওই সাংবাদিক বলেন, তিনি নিশ্চিত নন—এই হামলায় তার কতজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার বেশ কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের পরিচয় কী, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানাননি কর্মকর্তারা।

টেলিভিশনটির একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, হামলার সময় তারা ভবনটিতে কাজ করছিলেন। তখন সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। কিন্তু আকস্মিক হামলার পর কিছুক্ষণের জন্য সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর অবশ্য পুনরায় সম্প্রচার কাজ চালু করতে সক্ষম হন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

একপর্যায়ে টেলিভিশনটির সম্প্রচার শাখার প্রধান পেমান জেবেলি রক্তমাখা একটি কাগজ নিয়ে পর্দায় হাজির হন। সেটি দেখিয়ে তিনি বলেন, তারা ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন’।

গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের হামলার আগ মুহূর্তে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পর্দায় উপস্থাপিকাকে দেখা যাচ্ছিল। হামলার সময় উপস্থাপিকাকে দ্রুত সরে যেতে দেখা যায়। অন্যদিকে, গণমাধ্যম কার্যালয়টি ইরান সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।

এই হামলার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কাৎজের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মেগাফোন ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। হামলার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তেহরানের স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার পরে ওই হামলাটি চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ইরানের স্বৈরশাসক যেখানেই থাকুন না কেন, তাকে আঘাত করা হবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ