কিযী তাহ্‌নিন এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কথাসাহিত্যিক। তার লেখায় জীবনের জটিলতাকে সহজ ও সরলভাবে উপস্থাপন করা হয়। এর আগে কিযী তাহ্‌নিনের পাঁচটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম উপন্যাস ‘চনর্কি’। নতুন উপন্যাসের প্রেক্ষাপটসহ নানা বিষয় নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন কিযী তাহ্‌নিন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি: ৬ষ্ঠ বইটি উপন্যাস হয়ে উঠলো? উপন্যাস লেখার প্রস্তুতিটা কীভাবে এগিয়ে নিয়েছেন? 
কিযী তাহ্‌নিন:
হুম। এই গল্পটি আসলে উপন্যাসে রূপ পেতই। সেটি ষষ্ঠ বই নাকি দশম বইয়ে যেয়ে হবে তা আগে ভেবে রাখিনি। চনর্কির গল্পের পট, ভাবনা মাথায় এসেছে প্রায় বছর চারেক আগে, কিংবা তারও আগে। বছর চারেক ধরে সিরিয়াসলি ভাবছিলাম এ নিয়ে। সাজিয়ে গুছিয়ে  লেখা শুরু করি আড়াই বছর কিংবা তিন বছর আগে। সময় নিয়েছি নিজের কাছে, চরিত্রদের কাছে, কাহিনী বিন্যাসে, কল্পনা আর যুক্তির বোঝাপড়ায়। আস্তে আস্তে লিখেছি।  পাহাড় বা সমুদ্রে যেয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে লেখার বিলাসিতা আমার নেই। এবং অমন আয়োজন করে লিখতে হবে ভাবলে আমার লেখা হয় না। নগর জীবন যাপন করে কোলাহলের ফাঁকে যে সময়টুকু পাই লেখার জন্য তা আদর্শ আমার কাছে। প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে অবসরে, লম্বা ছুটির দিনগুলোকে বেছে নিয়েছি লেখার জন্য। একসময় লেখা থামিয়ে দিলাম। মনে হল ভাবনায় মন্থরতা আসছে। একটা লম্বা সময় লিখিনি। মাথার মধ্যে সাজিয়েছি, একসময় চরিত্ররা ছটফট করেছে, গল্পের বাঁক বদলাচ্ছে টের পাচ্ছি। লেখার নেশা তীব্র হলো,  তখন আবার বসলাম লিখতে এবং শেষ করলাম চনর্কি। 

রাইজিংবিডি: চনর্কির প্রেক্ষাপট জানতে চাই। 
কিযী তাহ্‌নিন:
৯০ দশকে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার সরকারি কলোনি, তার ভেতরে জমতে থাকা ঘটনার ভাঁজে ভাঁজে যে কাহিনী  তা  নিয়েই  চনর্কি এগোয়। চনর্কি পাঠ করেছেন যে পাঠকেরা তারা  ৯০-কে ঘিরে স্মৃতিকাতরতায় জড়িয়েছেন। ৯০ এর গল্প চনর্কি। কিন্তু চনর্কির গল্পের বীজ কিন্তু চনর্কিমন্ত্রে। এ গল্পের মূল চরিত্র কাজলি, কৈশোরের খোলস ভাঙছে একটু একটু করে। অনুরাগের সূত্র আর সুঁই ফোটা বিষণ্ণতার তিরতিরে অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়ছে সে। তার জীবন জুড়ে লেপ্টে থাকে একান্ত বৃত্তের মানুষেরা আর কলোনির জলপাইরঙা নিজস্ব দুপুর। এর মাঝে কাজলী তার মায়ের কাছ থেকে খুঁজে পায় চনর্কি মন্ত্র। রেশমপোকার খাঁচা চনর্কি। সেই চনর্কির আতসকাঁচে কাজলী জীবনকে দেখতে থাকে, চলমান ধারণাকে ভাঙতে থাকে। পাঠকেরা সেই চনর্কির মাঝে নিজেকে খুঁজেছেন। তারা জানিয়েছেন বলে জেনেছি। চনর্কি খুঁজে না পেলেও আফসোস ছিল না। সম্পূর্ণ অধিকার আছে পাঠকের নিজের মতন করে গল্পকে ভাঙবেন, ধারণ করবেন। বরং পাঠকের নতুন করে দেখার ধরণ গল্পকে আরো সমৃদ্ধ করে।

রাইজিংবিডি: প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
কিযী তাহ্‌নিন:
এখন পর্যন্ত তিনটি প্রকাশনীর সাথে কাজ করেছি। তারা স্বনামধন্য। মোটাদাগে অভিজ্ঞতা ভালো। সবার সাথে প্রফেশনাল একটি সম্পর্ক রাখবার চেষ্টা করেছি। আমার গল্পের ভাবনা, প্রচ্ছদ নিয়ে বোঝাপড়া এখন পর্যন্ত ভালো। কিন্তু সামগ্রিকভাবে যদি প্রকাশনী ইন্ডাস্ট্রির কথা বলি, লেখক এবং প্রকাশকের কাজের সম্পর্ক সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। লেখকের অধিকার বিষয়ে যথাযথ পলিসি থাকা উচিত। রয়্যালটি নিয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার যে ক্ষোভ লেখকদের আছে, তা আমারও খানিকটা আছে। তবে সবার ক্ষেত্রে নয়। কিছু প্রকাশনী খুব নিয়ম মেনে লেখকের পাওনা বুঝিয়ে দেন। 

রাইজিংবিডি: আপনার পেশা আপনার লেখার জন্য কতটুকু সহযোগী, কতটুকু প্রতিযোগী?
কিযী তাহ্‌নিন:
দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রচার ও বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করা আমার পেশাগত দায়িত্বের অংশ। দেশের সাধারণ মানুষ যারা বংশ পরম্পরায় তাদের জীবনধারণের মূল অনুসঙ্গ হিসেবে ঐতিহ্যের সংরক্ষণের চর্চাকে বেছে নিয়েছে তারা আমার কাজের মূল জায়গা। কত উপাদান কত বৈচিত্রময়তার সন্ধান পাই। আমার লেখার জন্য সহায়ক তো বটেই। যে প্রতিবেশ আমার চারপাশে তৈরি হয়েছে এ কাজের মাধ্যমে তা আমাকে লিখতে আরো অনুপ্রাণিত করে। আর দাপ্তরিক কাজের ব্যস্ততা, সময়ের সংকট, প্রতিদিনের যানজট আছে, সামাজিক দায়বদ্ধতা তাকে প্রতিযোগী বলি না, বরং আছে বলেই চ্যালেঞ্জড ফিল করি, নিজের কাছে ফায়ার আসবার সময়টুকুতে লেখবার তাড়না বোধ করি। 

রাইজিংবিডি: একজন লেখকের প্রচার কৌশল কেমন হওয়া উচিত?
কিযী তাহ্‌নিন:
লেখকদের প্রচার কৌশলের চিন্তা না করতে হলেই ভালো হত। কিন্তু এ দেশের সাহিত্য জগতের কালচার তো ওভাবে গড়ে ওঠেনি। নতুনেরা কিছু প্লাটফর্ম তৈরী করছে বটে বইয়ের প্রচারের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে। প্রকাশকেরা অল্পবিস্তর করছে। তবে প্রচারের অনেকখানি এখনো লেখককে করতে হয়। পরিমিতির মধ্যে থেকে যতটুকু করা যায় আর কি। আলাদা করে আমার কোন কৌশল নেই। বা যা করি তা খুব কার্যকর কি না জানিনা। সব তো ওই সোশ্যালমিডিয়া কেন্দ্রিক। বই আসলে জানান দেই। কিছু ইন্টারভিউ দিতে হয় আর বুক রিভিউগুলো শেয়ার করি। তাও ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার সময়টুকুতেই যা করা হয়। এর বেশি করতে সংকোচ হয়। 

রাইজিংবিডি: এখন কি নিয়ে কাজ করছেন?
কিযী তাহ্‌নিন:
ঈদসংখ্যার জন্য গল্প লিখছি। 

রাইজিংবিডি:  একটি বিষয়কে কখন লেখার উপযুক্ত মনে করেন?
কিযী তাহ্‌নিন:
যখন সেই বিষয়ের অতলে প্রবেশ করে ভাঁজগুলোকে ভাঙবার ইচ্ছা জাগে। কোন চরিত্রকে নিজের মতন করে গড়বার আকাঙ্খা গাঢ় হয়। এবং প্রতিকূলতা ভেঙে লিখবার ইচ্ছা তীব্র হয়ে ওঠে। 

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল খ র জন য উপন য স ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ই উপযুক্ত: সাকি

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ই সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। এর পরে দেশের আবহাওয়া প্রতিকূল থাকে। তা ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা হয়। নির্বাচনের জন্য এর পরের সময়টা উপযুক্ত নয়।

আজ শুক্রবার যুক্তরাজ্যে সফররত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।

বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জনজীবনের সংকট দূর হবে। আমরা আগেই প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিলাম, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন করতে। কিন্তু এত দিন সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সরকার এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল, যে সময়টা যথাযথ ছিল না।’

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হলে রাজনীতিতে আস্থাপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে বলে মনে করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি দেশের জন্য এই পরিবেশ বজায় থাকা জরুরি। সংস্কারের জন্য এই পরিবেশ সহায়ক হবে। এত দিন নির্বাচনের তারিখ নিয়ে উদ্বেগ থাকায় সংস্কার নিয়ে তেমন অগ্রগতি ছিল না। এখন সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে কাজ করা যাবে।’

সংস্কার কার্যক্রমকে জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে মীমাংসা করবে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা করছি। সর্বোচ্চ মতামতের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হবে, তার ওপর জুলাই সনদ তৈরি হবে। এসব বিষয়ে আরও আলাপ–আলোচনা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই হত্যার বিচার শুরু হয়েছে, এটা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। এই পরিস্থিতি ধরে রাখতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবাকে একটি সুন্দর দিন উপহার দিতে যা যা করতে পারেন
  • নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ই উপযুক্ত: সাকি