কথাসাহিত্যিক সিরাজুল ইসলাম নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ, কল্পনা, আভিজাত্য ও আবেগ মিশিয়ে গল্পে তৈরি করেন এক সুদৃশ্য মনোজগত। নিজের দেখা মানুষ আর দৃশ্যের প্রতি সমান অনুরাগ পুষে রাখেন এই কথাসাহিত্যিক। প্রাণে লালন করেন শৈশব, কৈশোরে দেখা ঢাকা শহরকে। হাতের মুঠোয় পেতে চান সোনালি অতীত। এই সব বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে তার নতুন গল্পগ্রন্থ ‘চোস্ত পায়জামা’। এই গল্পগ্রন্থের সৃষ্টিকাল, বিষয় ও গল্পভাবনা নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন সিরাজুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি: ‘চোস্ত পায়জামা’— আক্ষরিক অর্থে একটি পোশাক। কিন্তু আপনার গল্পগ্রন্থের বিষয়বস্তু, ইতিহাস ও কল্পনা আশ্রয়ী বিবরণ চোস্ত পায়জামাকে এমন একটি ফ্রেমে রূপান্তর করেছে যেখানে চরিত্রগুলো এসে চলে যায় কিন্তু ফ্রেমটা একই থাকে। এই নামকরণের কারণ জানতে চাচ্ছি?
সিরাজুল ইসলাম: এই গল্পগ্রন্থের নাম ‘চোস্ত পায়জামা’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আপনি ‘পোশাক’ ও ‘ফ্রেম’ -এই শব্দ দুটি নির্বাচন করে যোগসূত্র খুঁজেছেন।আমরা সামান্য কিছু একটার রেফারেন্সে একটা সময়কে কিভাবেই না চিহ্নিত করি! যেমন— মেয়েদের মাথার হিজাব, ছেলেদের ঢোলা বেল বটম প্যান্ট। কি বাহাদুরাবাদ ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া বড় স্টিমার। ঘোড়ার গাড়িতে করে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। রমনার রেসকোর্সে ঘোড়দৌড়- অনেক বছর পরে এই একই জায়গায় অমর একুশের বইমেলা। এই একেকটা শব্দ উচ্চারিত হলেই, মঞ্চের পর্দা খুলে গিয়ে সেই সময়টা যেন উঁকি মারে।
আমার গল্পগ্রন্থের নামও একটা সময়কে ঈঙ্গিত করে। আমার জন্ম ১৯৫১ সালে। মনে রাখি না যে, আমার অস্তিত্বের আগেও আমি যে জায়গাটায় এখন দাঁড়িয়ে, সেটার অস্তিত্ব ছিল। আমি ছিলাম না, আমার পিতা ছিলেন, তার পিতা ছিলেন। আমার রক্তপ্রবাহের ভিতর দিয়ে আমার স্মৃতি কোষের ভিতর দিয়ে আমার পিতা, পিতামহদের জীবনে ও সময়ে অস্পষ্টভাবে যেন চলে যেতে পারি। না পারলেও এই চেষ্টাটা করি সত্তর বছর বয়সে এসে। আবার আমার পুত্র যার বয়স এখন ত্রিশ, তার জুতোয় পা ঢুকিয়ে হেঁটে তার সময়টা বুঝতে চেষ্টা করি। ঢাকার ভাঙ্গা রাস্তাঘাট, উপচে পড়া মানুষের ভীড়, বিভিন্ন গতির যানবাহন একের ঘাড়ে আরেকজন উঠে বসছে। গাড়ির হর্ণ, নানান যান্ত্রিক চিৎকারে ঢাকা শহরের হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠছে। আমি তখন ছিলাম না, তখন ঢাকা শহরের কোন একটা রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে পথচারীর কানে সরোদ, সেতারের আওয়াজ ভেসে এসেছে। কোন খেয়াল গানের উঁচু তান।নুপুরের আওয়াজ।আমার পিতা সাদামাটা, ধার্মিক, শ্রমিক শ্রেণীর সামান্য শিক্ষিত একজন মানুষ ছিলেন। তিনি 'চোস্ত পায়জামা 'পরে কোন মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। হয়তো যখন হিমশিম করা সংসার চালাতে পুরো কাজের মানুষ হয়ে ওঠেননি, তখনও নিয়মিতই তিনি মঞ্চে উঠতেন।পরে তিনি এই ‘চোস্ত পায়জামা’টি আমাদের কাপড়চোপড় রাখার বিশাল স্টিলের ট্রাঙ্কের ভিতর ঢুকিয়ে রাখেন। তিনি আমাদের বড় হয়ে ওঠার কালে আর কোনদিন মঞ্চে ওঠেননি, বা মঞ্চ নিয়ে কোন গল্প করেননি। আমি আমার পিতার সঙ্গে সম্পর্কের ঐ পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে পারিনি, যেখানে বাবাকে জোর করে তার কথা বলাতে পারবো। আজ তো তিনি নেইই। বাবা তার ‘চোস্ত পায়জামা’ রেখে গিয়েছিলেন। আমার এই নামের গল্পগ্রন্থটি থাকলো। আমার পিতা ‘প্রাণ ধরে’ তার 'চোস্ত পায়জামা'টা ফেলে দিতে পারেননি। আমি জানি এই গল্পগ্রন্থের আদৌ বিশেষ কোন মূল্য নেই। আমার স্মৃতিতে পিতা ও পূর্ব পুরুষদের খুঁজে বেড়াই; আর আমার জন্মের সময়ের, বড় হয়ে ওঠার জায়গা পুরানো ঢাকার এক ছোট গলি বেগমগঞ্জ লেনকে। এই ৭০ বছরে আমার দেশের অনেক উন্নতি, পরিবর্তন হলেও, বেগমগঞ্জ লেনের বড় একটা পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন যা হয়েছে, এই গলির শেষ মাথায় ছিল ধীরে বহা ধোলাই খাল, এখন সে-জায়গায় বিশাল অজগরের মতো রাজপথ। আর পুরোই যা বদলে গেছে সে হচ্ছে, আমি। সময়ের চাপে এই বেগমগঞ্জ লেন থেকে আমি পালাতে চেয়েছিলাম, সেই জায়গা পিছনে ফেলে অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছিলাম। সব নদী ঘরে ফিরে-এই কথার বৈজ্ঞানিক অর্থ আমি জানি না। তবে এই পরিণত বয়সে এসে আমি বেগমগঞ্জ লেনের ফ্রেমের ভিতর ঢুকে যেতে চাই। ‘চোস্ত পায়জামা’ পা চেপে ধরে রাখে। এখন জানি যে, বেগমগঞ্জ লেনও আমার রক্তে ঢুকে বসে আছে।

রাইজিংবিডি: একটি ঘটনাকে কখন গল্প হিসেবে গ্রহণ করেন এবং লেখেন?
সিরাজুল ইসলাম: ঘটনা তো দেখা যায়। ঘটে। আর নিজে যদি ঘটনার কেন্দ্রে বা ভেতরে থাকি, তাহলে তো ঘটনার পুরোটাই জানা। জানা ঘটনা তরতর করে লিখে ফেলা যায়। ঘটনা যা ঘটেছে হুবহু তা রেখে বা সামান্য বদলে; পার্শ্বচরিত্র যারা ছিল তারা, বা কিছুটা যোগ, বিয়োজন করে ঘটনাটাকে আরো আকর্ষক করতে চাইলাম। কিন্তু এই বয়সে এসে দেখি ঘটনার বিবরণী লিখতে মন সায় দেয় না। লেখক মন বলে, তোমার এই ক্লিশে ঘটনা তোমার গল্প যে পড়তে বসবে তারও আগে থেকে জানা।
তাহলে উপায়?
আমি পথ খুঁজেছি। দিনের পরে দিন গেছে কলম থেকে এক লাইনও আসে না। তখন দেখি, বাইরে বসে গল্প লিখলে হবে না। নিজেকেই গল্পের ভিতরে ঢুকে বসতে হবে। রাস্তার কুকুরকে দুষ্ট ছেলেরা যেমন ঢিল ছুঁড়ে মারে, খোঁচায়- নিজেকেও তেমন বিব্রত, অপ্রস্তুত করতে হবে। যে কথা আমি উচ্চারণ করতে চাই না, আমার সব অপ্রকাশ আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বা এর বিপরীতে রিমান্ডে নেওয়া অপরাধীর মতো অত্যাচার করে বের করে আনতে হবে। আমি সেই গল্পটা লিখতে চাই, যে গল্পটা ব্যক্তি আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

আরো পড়ুন:

বইমেলায় ‘ডাইনোসর গ্রহে অভিযান’

বইমেলায় ‘মন্তাজ মিয়ার স্বাধীনতা’

রাইজিংবিডি: চোস্ত পায়জামা পড়লে পাঠক কি কি জানতে পারবেন?
সিরাজুল ইসলাম: এই বইয়ের দশটা গল্প ২০২২ ও ২০২৩ সালের বিভিন্ন সময়ে লেখা। খেয়াল করে দেখি, এই দশটি গল্পই উত্তম পুরুষে লেখা।গল্পের মূল চরিত্র নিজেই নিজের গল্পের বয়ান দিচ্ছে। আরো খেয়াল করে দেখি, এই গল্পগ্রন্থটি একটি উপন্যাস হিসাবেও পড়া যায়। অনেক উপন্যাসে যেমন পরের ঘটনা আগে আসে, আগের ঘটনা পরে। এই বইয়ের কোন গল্পে গল্প- বলিয়ের শৈশব-কৈশোর, যৌবনের প্রেম-অপ্রেম, দাম্পত্য জীবনের দ্বন্দ্ব ,সফল পেশাদার জীবনের ভোগ-নষ্টামি,শেষ বেলার জীবনী- আর জীবনের সব গল্পছর শেষ তো মৃত্যুই। আর আছে পুরানো, ছিমছাম, হাতের মুঠোয় নেওয়া যায় এরকম একটা ঢাকা শহরের জন্য নস্টালজিয়া।

রাইজিংবিডি: পড়া আর লেখার মধ্যে সমন্বয় করেন কীভাবে?
সিরাজুল ইসলাম: লেখালেখির শুরুতে কারো লেখা ভালো লাগলে ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়ে যেতাম। সেই প্রভাবশালী লেখকের গল্প বলার ভঙ্গি, সৃষ্ট চরিত্রের আদল হতে হয়তো বেরোতে পারতাম না।এখনকার পড়া, ফিকশন হলেও, গল্পটা জানার জন্য বা বলার ভঙ্গিটা জানার জন্য পড়া না। আমি তো এখন আরেকজন লেখকের মত লিখতে চাই না। আরেকজনের গল্পও আমি বলতে চাই না। আমার গল্পটাই আমার মতো করে বলতে চাই।
তবে পড়ার তৃষ্ণা বাড়ছে। আরো অনেক অনেক বেশি পড়তে চাই। পড়তে পড়তে এমন কিছু পেয়ে যাই, নড়েচড়ে বসি, নিজের লেখা নিয়ে ভাবনা একে একে প্রত্যাখ্যান করতে থাকি।

রাইজিংবিডি: ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্য কি কি বই পড়েছেন?
সিরাজুল ইসলাম: উল্লেখযোগ্য বই বলতে বড় বড় পুরস্কার পাওয়া বই পড়ি। ফিকশন বেশি পড়ি। ফিকশন কোন উচ্চতায়, কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে বুঝে ওঠার জন্য। দেশি, বিদেশি সমকালীন লেখা পড়ি। তবে গল্প/উপন্যাসের পরিণতি জানতে তো আর পড়ি না এখন। অত সময় আর মনোযোগ দিতে পারি না, এই হাজারো বই পড়া কি আমার পক্ষে সম্ভব। অনেক হার্ডকপি, সফটকপি বইই— বইয়ের মাঝপথে শেষ হয়ে যায়।এখন পাঠকের আনন্দ পেতে পড়ার সুযোগটা নষ্ট করে ফেলেছি। এখন পড়ি কারিগরের মতো। লেখার ম্যাজিকটা ধরতে চেষ্টা করি।
২০২৪ সালে দেশি, বিদেশি বইয়ে, ম্যাগাজিনে ছোটগল্প পড়েছি বেশি। উপন্যাসের তুলনায় ছোটগল্প আমার কুশলী কাজ মনে হয়।আর ছোটগল্প পড়ে কম সময়ে অনেক বেশি লেখকের কাজের সাথে পরিচিত হতে পারি।পুরো বইগুলো যেহেতু পড়িনি, পড়া বইয়ের নামগুলি না উল্লেখ করি।

রাইজিংবিডি: তরুণ গল্পকারদের মধ্যে কার কার লেখা ভালো লাগে?
সিরাজুল ইসলাম: শুধু ফিকশনের কথা বলি-বিশেষভাবে ভালো লাগে বর্ণালী সাহা, সাগুফতা শারমীন তানিয়া, মোজাফফর হোসেন, আহমেদ খান হীরক, কিযী তাহ্‌নিন, মাহরীন ফেরদৌস, এনামুল রেজা, সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম, লুনা রুশদী। আলভী আহমেদ, শিবব্রত বর্মন, কৃষ্ণ জলেশ্বর, সুহান রিজওয়ান-এদের কি তরুন লেখকের পর্যায়ে ফেলবো-তাদের লেখা ভালো লাগে। অতি সামান্য সংখ্যক বাংলাদেশের বই আমার পড়া হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছি। এখনকার তরুণদের একেকটা বই পড়ে চমকে উঠি।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স র জ ল ইসল ম ব গমগঞ জ ল ন আম র প ত উপন য স র জন য র জ বন আম র স ফ কশন

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ