রিকশার হর্নের শব্দে ভাবনার জগতে হঠাৎ ছেদ পড়লে পেছনে ফিরে তাকালাম। একটা জলজ্যান্ত যুবকের ভাবনার জগতে খেই হারিয়ে ফেলার অপরাধে বেশ কর্কশ ভাষায় কটু কথা শুনিয়ে দিল চালক। দোষ যখন নিজের তখন কিছু না বলেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্কে রাস্তার বাম পাশ ধরে হাঁটছি। ইদানীং বাবার ডায়াবেটিস বেড়েছে। ইনসুলিনের টাকা পাঠাতে হবে। এদিকে আমার ফরম ফিলাপও করা হয়নি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে এই আশায় ছুটে চলছি। সেই শৈশব থেকে কৈশোর কত কিছুর সঙ্গেই না যুদ্ধ করে চলেছি।
পরিবারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কোনোদিন খাবার জুটত, কোনোদিন জুটত না। পেটে খেলে তো পিঠে সয়। অগত্যা হক বাড়িতে গিয়ে গরুর ঘাস কেটে দিতাম। শীতের কনকনে ঠান্ডায় শুকিয়ে যাওয়া পুকুরের নোংরা জলে সাঁতার কেটে কাদা ঘেঁটে ঘেঁটে হরেক রকমের মাছ ধরতাম। বিনিময়ে পাতিলের গায়ে লেপ্টে থাকা এক প্লেট সাদা ভাত পেতাম। অভুক্ত পেটে সেটাই যেন আমার কাছে অমৃতের মতো ছিল। পাতিলের শেষের ভাত হওয়ায় মাঝেমধ্যে সাদা পাথরও পেতাম। অভাবী সংসারে যাদের জন্ম তাদের পাথর খুব একটা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল হলুদ বিকেলে হৈহুল্লোড় করা শৈশব আর আত্মসম্মানের আত্মাহুতিতে লেখা হচ্ছিল একেকটা বিসর্জনের গল্প। হতাশাকে পাশ কাটিয়ে দূরের আকাশে দৃষ্টি রাখতাম। যেমন করে একজন স্নাইপার তার লক্ষ্যে অবিচল থাকে ঠিক তেমনি। শৈশব থেকে যৌবনের দীর্ঘ পথচলায় স্বর্ণলতার মতো আঁকড়ে ধরেছিলাম কৈশোর।
গাধার পিঠে সওয়ার হয়েছে বৈপ্লবিক সময়। পেছনে ফেলে এসেছি সাপের খোলস পাল্টানো জীবন। ভোঁতা কাস্তের আড়াই কোপে কেটেছি দূর্বাঘাসের মাথা.
ভাগ্য ফেরাতে শহরের বুকে পা রেখেছি অনেকদিন হলো। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি মেনে চিংড়ির মতো পুড়ে পুড়ে লাল হলো যৌবন। তবু বদলায়নি কোনো কিছু। আজও ছাইয়ে পোড়া আলুর বুক চিড়ে মেখে দেওয়া লবণে একটা আস্ত সাগর খেয়ে ফেলি। স্বভাবী সংসারে আজও অভাবী আমার দিনলিপি। আজও দেখি রাতের শরীরে রাত নামে। শুধু আমার ভাগ্যের শরীরে কতগুলো ক্ষত নিয়ে পড়ে আছি, শুধুই বেঁচে থাকার ভান ধরে। তবু মনে হয় আমার সব আছে, শুধু নেই পান্তা ভাতে সাঁতার কাটা মায়ের ক’টা আঙুল।
সুহৃদ ঢাকা
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’
ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।
আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।
রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।
কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?
কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।
রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।
রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।
এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।
রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।