প্রাপ্তবয়স্কদের দাঁতের যত্ন কিছু বিষয়ে অবহেলা নয়
Published: 17th, February 2025 GMT
বয়স চল্লিশের ওপরে পৌঁছে গেলে দাঁতের একটু বেশিই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এর আগে পর্যন্ত কোনো মাড়ির অসুখ না থাকলে সেভাবে অ্যানামেল ক্ষয় হয় না। তবে ৪০-৪৫ বছরের পর অ্যানামেল ক্ষয় দ্রুত হয় বলে দাঁতের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এর থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সেনসিটিভ টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। দিনে দু’বার ব্রাশ করবেন অবশ্যই। তার মধ্যে অন্তত একবার সেনসিটিভ টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করে নিন। অনেকের ধারণা, টুথপেস্ট বদল করলে বোধ হয় দাঁতের ক্ষতি হয়! এই ধারণা একেবারে ভুল। প্রয়োজন হলে টুথপেস্ট বদল করতেও পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন, ভালো ব্র্যান্ডের এমন টুথপেস্ট যেন হয়, যাতে ফ্লোরাইডের পরিমাণ সঠিক থাকে। সাধারণত ৪০-এর ওপরে বয়স যাদের, তাদের অনেকেরই দাঁতে হলদেটে ছোপ পড়ে যায়। এর কারণ দাঁতের সাদা রঙের জন্য যে অ্যানামেল দায়ী, তার ক্ষয়। তবে সবারই যে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেবে, তা নয়। দাঁত ও চোয়ালের সেটিংয়ের ওপরেও নির্ভর করে অ্যানামেলের ক্ষয় কতটা হবে বা আদৌ হবে কিনা! ঠিক এই কারণে অনেকের খুব কম বয়স থেকেই দাঁতের ক্ষয় হয়, অনেকের আবার বয়সকালেও ক্ষয় হয় না।
আমাদের অনেকের মনেই ধারণা আছে, যত জোরে ব্রাশ করা যাবে তত বোধ হয় দাঁত পরিষ্কার হবে বেশি। এ ধারণা ভুল। ২ মিনিট সাধারণভাবে ব্রাশ করলেই হয়। কিন্তু জোরে জোরে অনেকক্ষণ ধরে ব্রাশ করলে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল ক্ষয়ে যায়। একে অ্যাব্রেশন বলে। ওই জায়গাগুলো তখন খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ক্যাভিটিও সহজেই শুরু হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাড়ির আরও একটি ইনফেকশন খুব কমন, সেটি হলো পায়োরিয়া। একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে জিঞ্জিভাইটিস। দাঁতে টার্টার জমে গিয়ে মাড়ি শিথিল হয়ে যায়। অনেকেই ভাবেন টার্টার দূর করতে গিয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে। কিন্তু সুস্থ দাঁতের জন্য প্রয়োজন শক্ত মাড়ির। টার্টার দূর করলে দাঁত একটু নড়ে কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক যত্নের মাধ্যমে আবার মাড়িকে শক্তপোক্ত করে তোলা সম্ভব। জিঞ্জিভাইটিসের সমস্যা দূর করতে স্কেলিং খুব ভালো উপায়। এতে দাঁত নড়ে যায় না। ৪৫-এর ওপরে নিয়মিত ফ্লসিং জরুরি। খাবার খাওয়ার পর নিয়মিত ফ্লসিং করুন। বাজারে যত ধরনের মাউথওয়াশই থাকুক না কেন, সেরা মাউথওয়াশ হলো লবণ-গরম জল। দিনে অন্তত একবার উষ্ণ জলে লবণ মিশিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
মাড়ির ইনফেকশনের প্রাথমিক লক্ষণ হলো মুখে দুর্গন্ধ। দাঁত ব্রাশ করার সময় যদি রক্ত বের হয় তাহলেও কিন্তু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ক্যাভিটির প্রাথমিক লক্ষণ হলো দাঁতে কালো ছোপ দেখা যাওয়া। শুরুতেই যদি ফিলিং করে নেওয়া যায়, তাহলে ক্যাভিটি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে না। তবে ক্যাভিটি যদি দাঁতের ভেতরের দিকে হয়, তখন রোগীর পক্ষে প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে ক্যাভিটি অনেকটা বেড়ে গেলে শুধু ফিলিংয়ে আর কাজ হয় না। তখন রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের সাহায্য নিতে হয়। v
[সিনিয়র লেকচারার, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ,
ঢাকা]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র শ কর অন ক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
জীবন বাঁচাতে রক্ত দিন
বাংলাদেশ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০২ অনুসারে রক্তদাতার বয়সের সীমারেখা হচ্ছে ১৮ থেকে ৬০ বছর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাস্থ্যবান; ১৮ থেকে ৬৬ বছর বয়সের সীমারেখার মধ্যে সে দেশের মানুষকে রক্তদাতা হিসেবে গণ্য করা হয় বং তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ লোক রক্তদানে অভ্যস্ত। সুইজারল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আরও অন্যান্য দেশেও বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।
অনুন্নত বিশ্বে এ রক্তদাতার হার ১ ভাগের কম। বাংলাদেশে এ রক্তদানের সংক্ষেপ চিত্র হচ্ছে, প্রতিবছর বিভিন্ন হাসপাতালের প্রয়োজন ১০ লাখ ইউনিট এবং স্বাস্থ্যবান সক্ষম নিরাপদ রক্তদাতাদের থেকে সংগৃহীত হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট।
সাধারণত অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর, যাঁরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, যাঁদের কোনো কঠিন রোগ নেই এবং যাঁরা কোনো মারাত্মক ব্যাধি অন্যের দেহে সঞ্চালনের আশঙ্কা বহন করেন না, বিশেষ করে এইচআইভি ভাইরাস; তাঁদের রক্তদাতা হিসেবে উপযোগী বলে গণ্য করা হয়।
রক্তদাতা হওয়া উচিত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও বিনা মূল্যে জীবন রক্ষাকারী মহাকল্যাণকামী দানের প্রতি আস্থাশীল। বিনা মূল্যে দানের রক্ত, অর্থের মাধ্যমে কেনা রক্তের চেয়ে অনেক নিরাপদ। বিভিন্ন দেশে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবায় রক্তদাতা নির্বাচনে রক্তদাতা ও গ্রহীতার নিরাপত্তা বিধানে আইন প্রণীত হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ বছর বয়সী মানুষকে রক্তদাতা হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ডেনমার্কসহ কিছু দেশে ৭০ বছর বয়সেও রক্তদাতা নির্বাচিত হন, কিছু দেশ মা–বাবার সম্মতি ব্যতিরেকে ১৬ বছর বয়সী মানুষকেও রক্তদাতা হিসেবে নির্বাচিত করে।
রক্তের শিরা ছিদ্রকরণ (ভেনিসেকশন) পদ্ধতির একটি চিকিৎসা আইনসম্মত বিধান থাকা উচিত। একজন রক্তদাতা রক্তদানের পর অসুস্থ হলে রক্তদাতা নিজে বা তার নিকটাত্মীয়রা রক্তদানের কারণে অসুস্থ হয়েছেন বলে একটি বিরূপ ধারণার জন্ম নিতে পারে বলেই একজন সক্ষম রক্তদাতা অবশ্যই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে এবং তাদের এমন কোনো অসুস্থতা থাকবে না যাতে সে সাধারণ রক্তদাতা হিসেবে নিগৃহীত হতে পারে। যেমন রক্তশূন্যতা, যক্ষ্মা, ক্যানসার, স্ট্রোক, এপিলেপসি, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস, কার্ডিয়াক, রেসপিরেটরি অথবা রেনাল ডিজিজ। উচ্চ রক্তচাপের ব্যক্তিদের রক্তদাতা ও রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ উভয়েই নির্দ্বিধায় বলতে পারে যে রক্তদানের মাধ্যমে উভয় পক্ষই একটি বিপদমুক্ত মহৎ কাজ করছে।
রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ রক্তদানে ইচ্ছুক লোকজনের মাঝে রক্তদানের তথ্যবহুল কাগজপত্র সরবরাহ করলে এ রকম একটি কঠিন কাজ অনেক সহজ হতে পারে। স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা বোনম্যারো দানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, সে জন্য অনেক রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অনেক রেকর্ড সংরক্ষণ করে ম্যারোদাতা নিযুক্ত করতে সহায়তা করে। বিশ্ব মেরুডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের (Buskard,1991) বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায় যে প্রায় চার লাখ বোনম্যারো ডোনার তাঁদের কাছে মজুত আছে, যাঁদের এইচএলএ প্রকারভেদও সম্পন্ন করা আছে।
প্রতিটি রক্তদান ও সংগ্রহের সামগ্রিক তথ্য রেকর্ড করা এবং বছরের পর বছর সংরক্ষণ করা উচিত। পূর্ববর্তী রক্তদানের বিভিন্ন তথ্য যেমন রক্তের গ্রুপ রক্তদানে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার তথ্য, অণুজীব অ্যান্টিবডি উপস্থিতি, হঠাৎ বেহুঁশ বা পড়ে যাওয়ার ইতিহাস পরবর্তী সেশনের রক্তদানে অনেক সহায়তা করে। চলতি ও পূর্ববর্তী রক্তদানের বিভিন্ন তথ্য–সংবলিত বিশালসংখ্যক রক্তদাতার প্যানেল কম্পিউটারে সংগ্রহ করা বর্তমানকালের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সমাজের সব স্তরের, সব ধর্মের, সব পেশার লোকজনকে আহ্বান জানাচ্ছি—
১. ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক সব সুস্থ নারী-পুরুষ, যাঁদের ওজন ১০০ পাউন্ড বা তার বেশি, তাঁরা প্রতি চার মাস অন্তর নিয়মিত রক্তদান করুন।
২. পরিচিতজনদের রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করুন।
৩. স্বেচ্ছা রক্তদাতা তৈরির আয়োজনে সক্রিয় সহযোগিতা করুন।
৪. স্ক্রিনিং ছাড়া রক্ত নেবেন না, এমনকি আপনজনের হলেও নয়; কারণ তার রক্তেও সুপ্ত থাকতে পারে সংক্রামক ঘাতক ব্যাধির জীবাণু।
৫. কখনো পেশাদার রক্তদাতার রক্ত কিনবেন না।
৬. রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না এবং বোনম্যারো নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়।
৭. রক্তদান জীবনদান, তাই নিয়মিত রক্তদানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পরিবেশ বাঁচাতে বনায়ন যেমন পূর্বশর্ত। জীবন বাঁচাতে তেমনি দরকার নিরাপদ রক্ত।
ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ। উপদেষ্টা, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সোসাইটি অব বাংলাদেশ।