কয়রায় সাবেক এমপি, ইউএনও, ওসিসহ ৮০ জনের নামে মামলা
Published: 18th, February 2025 GMT
খুলনার কয়রায় বিএনপির নেতাদের ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়ে মারপিটের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৮০ জনের নামে মামলা হয়েছে। তিন বছর আগের ওই ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছেন ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা।
মামলার বাদী জি এম রাজিবুল আলম বাপ্পী (৩১) খুলনা নগরের লবণচরা এলাকার বাসিন্দা ও খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। মামলায় (সিআর ৯৯/২৫) ৮০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫–২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ তাঁদের অনুসারী আইনজীবী ও শিক্ষকের নাম রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুর রহমান, থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নীশিথ রঞ্জন মিস্ত্রী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার সরদার, থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) সাচ্চু শেখ ও মিহির মজুমদার, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহারুল ইসলাম, বাগালী ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সামাদ গাজী, আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ও আরাফাত হোসেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১২ জুন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের (মঞ্জু) নেতৃত্বে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা কয়রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আসেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে রওনা দিলে পথে আসামিরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাঁদের বহনকারী গাড়ির পথরোধ করে। ওই সময় আসামিরা বন্দুক, শটগান, দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা দিয়ে তাঁদের মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেন। তখন পুলিশ প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাইলে তারা উল্টো বাদীসহ বিএনপি নেতা–কর্মীদের আঘাত করে ও হুমকি দেয়। তাঁদের পাঁচটি প্রাইভেট কার ও ১৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া তাঁদের কাছে থাকা ৯ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রীসহ ত্রাণের ১৭ লাখ টাকা লুট করে নেয়।
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবুসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে আছেন।
মামলার ৮০ নম্বর আসামি কয়রার সাবেক ইউএনও মমিনুর রহমান বর্তমানে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সময় আমি যশোর জেলা পরিষদে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি কয়রা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ওই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর যোগদান করেছিলাম। মামলায় আমার নাম থাকাটা বিব্রতকর।’
এ বিষয়ে মামলার বাদী রাজিবুল আলম বলেন, ঘটনার দিন তিনি বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে গাড়িবহরে ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে মামলা হয়েছে। মমিনুর রহমানকে ইউএনও হিসেবে আসামি করা হয়েছে। তবে তিনি ওই সময় কয়রায় ছিলেন কি না, এটা নিশ্চিত নয়। দল থেকে যে নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁদের আসামি করা হয়েছে। সবাইকে তিনি চেনেন না।
মামলার সাক্ষী সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ওই দিন ত্রাণ বিতরণ করতে যাই। তবে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা আমাদের কাজে বাধা দেয় ও মারপিট করে। আমরা খুলনা শহরে ফিরে এসে পরদিন সংবাদ সম্মেলন করি এবং পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিই। তবে তখন কোনো বিচার পাইনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন ন্যায়বিচারের আশায় মামলা করা হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ণ ব তরণ ল ইসল ম কয়র য় আওয় ম উপজ ল ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।