খুলনার কয়রায় বিএনপির নেতাদের ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়ে মারপিটের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সা‌বেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৮০ জনের নামে মামলা হয়েছে। তিন বছর আগের ওই ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছেন ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা।

মামলার বাদী জি এম রাজিবুল আলম বাপ্পী (৩১) খুলনা নগরের লবণচরা এলাকার বাসিন্দা ও খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। মামলায় (সিআর ৯৯/২৫) ৮০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫–২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ তাঁদের অনুসারী আইনজীবী ও শিক্ষকের নাম রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুর রহমান, থানার তৎকা‌লীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নীশিথ রঞ্জন মিস্ত্রী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার সরদার, থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) সাচ্চু শেখ ও মিহির মজুমদার, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহারুল ইসলাম, বাগালী ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সামাদ গাজী, আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ও আরাফাত হোসেন।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১২ জুন বিএন‌পির কে‌ন্দ্রীয় ক‌মি‌টির সা‌বেক সাংগঠ‌নিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের (মঞ্জু) নেতৃ‌ত্বে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা কয়রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আসেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে রওনা দিলে পথে আসামিরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাঁদের বহনকারী গাড়ির পথরোধ করে। ওই সময় আসামিরা বন্দুক, শটগান, দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা দিয়ে তাঁদের‌ মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেন। তখন পুলিশ প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাইলে তারা উল্টো বাদীসহ বিএনপি নেতা–কর্মীদের আঘাত করে ও হুমকি দেয়। তাঁদের পাঁচটি প্রাইভেট কার ও ১৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া তাঁদের কাছে থাকা ৯ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রীসহ ত্রাণের ১৭ লাখ টাকা লুট করে নেয়।

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবুসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে আছেন।

মামলার ৮০ নম্বর আসা‌মি কয়রার সা‌বেক ইউএনও ম‌মিনুর রহমান বর্তমা‌নে বা‌গেরহাটের অতি‌রিক্ত জেলা ম্যাজি‌স্ট্রেট হিসেবে কর্মরত র‌য়ে‌ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সময় ‌আমি য‌শোর জেলা প‌রিষ‌দে কর্মরত ছি‌লেন। ঘটনার বিষ‌য়ে আমি কিছুই জা‌নি না। আমি কয়রা উপ‌জেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ওই ঘটনার প্রায় দেড় বছর প‌র যোগদান ক‌রেছিলাম। মামলায় আমার নাম থাকাটা বিব্রতকর।’

এ বিষয়ে মামলার বাদী রাজিবুল আলম বলেন, ঘটনার দিন তি‌নি বিএন‌পির নেতা–কর্মী‌দের সঙ্গে গাড়িবহরে ছি‌লেন। দলীয় সিদ্ধা‌ন্তে মামলা হয়েছে। ম‌মিনুর রহমান‌কে ইউএনও হি‌সে‌বে আসা‌মি করা হয়েছে। ত‌বে তি‌নি ওই সময় কয়রায় ছি‌লেন কি না, এটা নি‌শ্চিত নয়। দল থে‌কে যে নাম দেওয়া হ‌য়ে‌ছে, তাঁদের আসা‌মি করা হ‌য়ে‌ছে। সবাইকে তিনি চেনেন না।

মামলার সাক্ষী সা‌বেক সংসদ সদস্য ও বিএন‌পির কে‌ন্দ্রীয় ক‌মি‌টির সা‌বেক সাংগঠ‌নিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ব‌লেন, ‘আমরা জেলা প্রশাস‌কের অনুম‌তি নি‌য়ে ওই দিন ত্রাণ বিতরণ কর‌তে যাই। ত‌বে পু‌লিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী‌রা আমা‌দের কাজে বাধা দেয় ও মার‌পিট ক‌রে। আমরা খুলনা শহরে ফিরে এসে পরদিন সংবাদ সম্মেলন ক‌রি এবং পু‌লিশ সুপা‌রের কা‌ছে অভিযোগ দিই। ত‌বে তখন কোনো বিচার পাইনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন ন্যায়বিচারের আশায় মামলা করা হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ণ ব তরণ ল ইসল ম কয়র য় আওয় ম উপজ ল ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে বেশি দামে সার বিক্রি: ২ ব্যবসায়ীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা

শেরপুরে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করায় দুই সার ব্যবসায়ীকে প্রায় সোয়া লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শেরপুর পৌর শহরের আখের মাহমুদ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় এক বিএডিসি সার ডিলারকে ১ লাখ টাকা ও লাইসেন্সবিহীন সার বিক্রি করায় আরেক ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আরো পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে মহাসড়কে ১০০০ স্থাপনা উচ্ছেদ

ঝিনাইদহে ২৫০টি অবৈধ জাল জব্দ, বাঁধ উচ্ছেদ

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া আদালত পরিচালনা করেন। তিনি জরিমানার তথ্য জানান।  

ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া বলেন, ‘‘সার বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই অসাধু ব্যাবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। কৃষকের উপর জুলুম মেনে নেওয়া হবে না।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের বিভিন্ন সোর্স এ সব অসাধু ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর রাখছেন। যার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’’ জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

অভিযানকালে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসলিমা খানম নীলু, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে কৃত্রিম সার সংকট দেখিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন। বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের আখের মাহমুদ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে বেশি দামে সার বিক্রির প্রমাণ পেয়ে বিএডিসি সার ডিলার মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইসঙ্গে লাইসেন্সবিহীন সার বিক্রয় করায় একই বাজারের কীটনাশক বিক্রেতা শিশির এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসলিমা খানম নীলু বলেন, ‘‘আমন মৌসুসে সারের দাম ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান করছি। আমরা যেখানে অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই।’’

ঢাকা/তারিকুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনায় পুলিশ দেখে পালালেন শিকারিরা, উদ্ধার ৪৫টি ঘুঘু অবমুক্ত
  • শেরপুরে বেশি দামে সার বিক্রি: ২ ব্যবসায়ীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা