অর্থ মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ একটি সভা করেছে ৯ ফেব্রুয়ারি। সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, খুব ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’ 

সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এই রিপোর্ট গোপন করা হয়নি। এখানে অর্থনীতির ঝুঁকিগুলোর কথা ভালোভাবেই বলা হয়েছে। তারপরও কিছু কথা থেকে যায়। কেননা, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পরিসংখ্যান আর বাস্তবতার মধ্যে কিছু ফারাক আছে। 

কেন মূল্যস্ফীতি কমছে না

সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের দৃষ্টিকোণ থেকে এ মুহূর্তে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকটের নাম মূল্যস্ফীতি। এটাও ঠিক, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মুখে মুখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কথা বলত বটে, কিন্তু কাজে দেখা যায়নি। তাদের পদক্ষেপগুলো ছিল ভুলে ভরা, উদ্দেশ্যমূলক ও খামখেয়ালিপূর্ণ। তাতে মূল্যস্ফীতি কমেনি। মানুষেরও কোনো আস্থা ছিল না। সেদিক থেকে কৃতিত্ব পাবেন বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি অন্তত মৌলিক অর্থনীতির রীতিনীতি অনুসরণ করে নীতি সুদহার একটানা বাড়িয়ে গেছেন। যতক্ষণ মূল্যস্ফীতি মাথা না নোয়ায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এ কাজ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশ সফল হয়েছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রভাবটা এখনো তত জোরালো নয় কেন? একটা উত্তর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেই আছে। যেমন ‘মূলত সরবরাহ চেইনের দুর্বলতার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।’ এই সরবরাহব্যবস্থা ঠিক করতে কত দিন লাগবে, সেটাই এখন বড় বিষয়। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেই বলা আছে, আগামী জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামতে পারে। সুতরাং আপাতত স্বস্তির খবর নেই।

আরও পড়ুনঅর্থনীতিতে মনোযোগের সংকট সরকারের২২ অক্টোবর ২০২৪অর্থনীতির যত ঝুঁকি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগে ঝুঁকি বা সংকটের কথা তুলে ধরি। যেমন দুই দফা বন্যার কারণে আউশ ও আমন উৎপাদন কম হয়েছে যথাক্রমে ৯ লাখ ৫৫ হাজার টন ও ৩ লাখ ৫৮ হাজার টন। সরকারের কাছে খাদ্যশস্য মজুতও আছে ধারণক্ষমতার তুলনায় ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৮ লাখ টন কম।

আরেকটা সমস্যা হচ্ছে সরকার বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি কমাতে পারছে না। কারণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি। পরিকল্পনা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে এলে সরকার বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়াবে। আবার কর-জিডিপি অনুপাত আরও কমছে। রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি এর প্রধান কারণ। আর্থিক খাত ঝুঁকির মধ্যে আছে, প্রকৃত খেলাপি ঋণ এখনো বাড়ছে এবং আগের সরকারের আর্থিক অব্যবস্থার কারণে ১০টি ব্যাংক তীব্র ঝুঁকির মুখে রয়েছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে ৭১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। 

শিল্প খাতের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের প্রায় ৪০ হাজার কর্মচারীর সহিংস আন্দোলনে রাস্তা অবরোধসহ আশপাশের অন্যান্য শিল্পকারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় সেগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যেসব কারখানামালিক পলাতক, তাঁদের মালিকানাধীন কারখানাগুলোয় নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে না পারায় শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হচ্ছে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলনের মতো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। 

তাহলে কী করণীয়? প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং শ্রমিক অসন্তোষ স্বল্প মেয়াদে অন্যতম ঝুঁকির উৎস। আর মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং ঘনীভূত হওয়ার আগেই শ্রমিক অসন্তোষ প্রশমিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলা হলেও অনেকগুলো ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। এসব ঝুঁকি কমাতে না পারলে ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতি সামনে আর এগোতে পারবে না।

ভালোর পেছনেও প্রশ্ন আছে

সুখবর আছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে। এই দুইয়ের কল্যাণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনও ঠেকানো গেছে। কৃতিত্ব প্রবাসীদের, তাঁরা ব্যাংকিং চ্যানেলে আয় পাঠাচ্ছেন। তাঁদের অবদান স্বীকার করতেই হয়। তারপরও নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৬ শতাংশের বেশি। একই অর্থবছরে প্রায় ২১ হাজার কোটি কালোটাকা সাদা হয়েছিল। এক বছরে এত কালোটাকা সাদা হওয়াও ছিল এখন পর্যন্ত দেশের রেকর্ড। সেই সময় ছিল কোভিড মহামারির বছর। বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ। টাকা পাচার করার উপায়ও ছিল না। ফলে হুন্ডির কোনো চাহিদা ছিল না। সুতরাং কালোটাকা দেশের মধ্যেই সাদা হয়েছে, হুন্ডির চাহিদা না থাকায় প্রবাসী আয়ও এসেছে বৈধ পথে।

দেশে এখনো হুন্ডির চাহিদা তুলনামূলক কম। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীরা আগেই অর্থ পাচার করে রেখেছেন। আর যাঁদের অর্থ দেশে ছিল, তাঁদের বড় অংশ পালিয়ে গেলেও সব অর্থ নিয়ে যাওয়ার সময় ও সুযোগ পাননি। ওই সুযোগ তৈরি করতে না দেওয়াটাই সরকারের বড় কাজ। একই সঙ্গে ভবিষ্যতেও হুন্ডির চাহিদা কমিয়ে রাখতে হবে।

এ জন্য এখন থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কালোটাকা উপার্জনের পথ। বন্ধ করতে হবে কর ফাঁকি, ঘুষ, চোরাচালানি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার উৎস। এটা সম্ভব না হলে আবারও বেড়ে যাবে অর্থ পাচার, কমবে প্রবাসী আয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই কেবল তা সম্ভব।

প্রতিবেদনে যা নেই

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের কথাটির সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই। আছে কেবল বিদেশি বিনিয়োগের কথা। আমরা সবাই জানি, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ না বাড়লে কখনোই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে না। সংকট এখানেই। দেশীয় বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট প্রতিটি সূচকই নিম্নগামী। যেমন বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ, মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্প উৎপাদন সূচক ইত্যাদি।

প্রতিবেদনটিতে কেবল শিল্প খাতের চ্যালেঞ্জের কথা আছে, তবে তা শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে। শ্রমিক অসন্তোষ অবশ্যই বিনিয়োগের বড় অন্তরায়। পাশাপাশি ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়ছে। যদিও বাংলাদেশে কখনোই সুদহারের ওপর বিনিয়োগ নির্ভরশীল ছিল না। বরং একশ্রেণির ব্যবসায়ী সস্তায় অর্থ পেয়ে ব্যাংকঋণের নয়–ছয় করেছেন। সরকারই তাঁদের জন্য সুদহারে ‘নয়-ছয়’-এর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এরই পরিণতি উচ্চ খেলাপি ঋণ।

এমনিতেই বিনিয়োগের অনেকগুলো বাধা আছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ কখনোই উন্নত ছিল না। বরং ক্রমে খারাপ হয়েছে। এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে উন্নতি হয়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রেই খারাপ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি। এর সুরাহা না হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে না, সমাজে অস্থিরতাও কমবে না।

বড় সমস্যা যেখানে

বললে ভুল হবে না যে আইনশৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি ঘটেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের কারণে ব্যক্তি নিরাপত্তা যেমন বিপন্ন, তেমনি উসকানি দিয়ে স্থাপনা বা সম্পত্তিতে দলবদ্ধ হামলা বন্ধে সরকারের উদ্যোগের অভাব আস্থার সংকট তৈরি করছে। আস্থাহীন থাকলে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবে না, সরবরাহ চেইন ঠিক হবে না, শিল্প খাতে অসন্তোষ কমবে না, অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। বরং পিছিয়ে পড়বে।

এটা ঠিক যে সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিষয়ভিত্তিক একাধিক টাস্কফোর্স ও কমিটি। অনেকগুলোর রিপোর্ট জমাও পড়েছে। বাস্তবায়ন হলে অদূর ভবিষ্যতে এর সুফলও পাওয়া যাবে। সবগুলোই সঠিক কাজ। তবে এসব সংস্কারের প্রতি সমর্থন পেতে অবশ্যই বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।

মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডেভিড লিপটন একসময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। পরে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি আইএমএফের হয়ে এক গবেষণামূলক লেখায় শেষটা করেছিলেন এভাবে, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, অর্থাৎ শাসনব্যবস্থা পরিচালনার উন্নতি খুব সহজ কাজ নয়। এ জন্য দীর্ঘ সময় ধরে টেকসই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। তবে এ জন্য কেবল সঠিক কাজ করাটাই পর্যাপ্ত নয়। বরং এ থেকে সাধারণ মানুষ কী উপকার পাচ্ছে, তা দৃশ্যমান হতে হয়।’

অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ এটাই, উপকার দৃশ্যমান করা।

শওকত হোসেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ব যবস থ আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে: আইএসপিআর
  • রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদাল
  • সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮
  • জুলাইয়ে মব তৈরি করে ১৬ জনকে হত্যা, অজ্ঞাতনামা ৫১ লাশ উদ্ধার
  • শৈলকুপায় ইউপি কার্যালয়ে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬
  • ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেয়ায় বিএনপি নেতা আটক
  • গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল, আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে
  • ‘ভূমিকম্পে ছিন্নভিন্ন হওয়া দেশকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার’
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’