ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতি পিছিয়েও পড়তে পারে
Published: 18th, February 2025 GMT
অর্থ মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ একটি সভা করেছে ৯ ফেব্রুয়ারি। সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, খুব ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এই রিপোর্ট গোপন করা হয়নি। এখানে অর্থনীতির ঝুঁকিগুলোর কথা ভালোভাবেই বলা হয়েছে। তারপরও কিছু কথা থেকে যায়। কেননা, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পরিসংখ্যান আর বাস্তবতার মধ্যে কিছু ফারাক আছে।
কেন মূল্যস্ফীতি কমছে নাসাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের দৃষ্টিকোণ থেকে এ মুহূর্তে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকটের নাম মূল্যস্ফীতি। এটাও ঠিক, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মুখে মুখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কথা বলত বটে, কিন্তু কাজে দেখা যায়নি। তাদের পদক্ষেপগুলো ছিল ভুলে ভরা, উদ্দেশ্যমূলক ও খামখেয়ালিপূর্ণ। তাতে মূল্যস্ফীতি কমেনি। মানুষেরও কোনো আস্থা ছিল না। সেদিক থেকে কৃতিত্ব পাবেন বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি অন্তত মৌলিক অর্থনীতির রীতিনীতি অনুসরণ করে নীতি সুদহার একটানা বাড়িয়ে গেছেন। যতক্ষণ মূল্যস্ফীতি মাথা না নোয়ায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এ কাজ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশ সফল হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রভাবটা এখনো তত জোরালো নয় কেন? একটা উত্তর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেই আছে। যেমন ‘মূলত সরবরাহ চেইনের দুর্বলতার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।’ এই সরবরাহব্যবস্থা ঠিক করতে কত দিন লাগবে, সেটাই এখন বড় বিষয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেই বলা আছে, আগামী জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামতে পারে। সুতরাং আপাতত স্বস্তির খবর নেই।
আরও পড়ুনঅর্থনীতিতে মনোযোগের সংকট সরকারের২২ অক্টোবর ২০২৪অর্থনীতির যত ঝুঁকিঅর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগে ঝুঁকি বা সংকটের কথা তুলে ধরি। যেমন দুই দফা বন্যার কারণে আউশ ও আমন উৎপাদন কম হয়েছে যথাক্রমে ৯ লাখ ৫৫ হাজার টন ও ৩ লাখ ৫৮ হাজার টন। সরকারের কাছে খাদ্যশস্য মজুতও আছে ধারণক্ষমতার তুলনায় ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৮ লাখ টন কম।
আরেকটা সমস্যা হচ্ছে সরকার বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি কমাতে পারছে না। কারণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি। পরিকল্পনা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে এলে সরকার বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়াবে। আবার কর-জিডিপি অনুপাত আরও কমছে। রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি এর প্রধান কারণ। আর্থিক খাত ঝুঁকির মধ্যে আছে, প্রকৃত খেলাপি ঋণ এখনো বাড়ছে এবং আগের সরকারের আর্থিক অব্যবস্থার কারণে ১০টি ব্যাংক তীব্র ঝুঁকির মুখে রয়েছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে ৭১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
শিল্প খাতের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের প্রায় ৪০ হাজার কর্মচারীর সহিংস আন্দোলনে রাস্তা অবরোধসহ আশপাশের অন্যান্য শিল্পকারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় সেগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যেসব কারখানামালিক পলাতক, তাঁদের মালিকানাধীন কারখানাগুলোয় নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে না পারায় শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হচ্ছে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলনের মতো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
তাহলে কী করণীয়? প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং শ্রমিক অসন্তোষ স্বল্প মেয়াদে অন্যতম ঝুঁকির উৎস। আর মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং ঘনীভূত হওয়ার আগেই শ্রমিক অসন্তোষ প্রশমিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলা হলেও অনেকগুলো ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। এসব ঝুঁকি কমাতে না পারলে ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতি সামনে আর এগোতে পারবে না।
ভালোর পেছনেও প্রশ্ন আছেসুখবর আছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে। এই দুইয়ের কল্যাণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনও ঠেকানো গেছে। কৃতিত্ব প্রবাসীদের, তাঁরা ব্যাংকিং চ্যানেলে আয় পাঠাচ্ছেন। তাঁদের অবদান স্বীকার করতেই হয়। তারপরও নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৬ শতাংশের বেশি। একই অর্থবছরে প্রায় ২১ হাজার কোটি কালোটাকা সাদা হয়েছিল। এক বছরে এত কালোটাকা সাদা হওয়াও ছিল এখন পর্যন্ত দেশের রেকর্ড। সেই সময় ছিল কোভিড মহামারির বছর। বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ। টাকা পাচার করার উপায়ও ছিল না। ফলে হুন্ডির কোনো চাহিদা ছিল না। সুতরাং কালোটাকা দেশের মধ্যেই সাদা হয়েছে, হুন্ডির চাহিদা না থাকায় প্রবাসী আয়ও এসেছে বৈধ পথে।
দেশে এখনো হুন্ডির চাহিদা তুলনামূলক কম। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীরা আগেই অর্থ পাচার করে রেখেছেন। আর যাঁদের অর্থ দেশে ছিল, তাঁদের বড় অংশ পালিয়ে গেলেও সব অর্থ নিয়ে যাওয়ার সময় ও সুযোগ পাননি। ওই সুযোগ তৈরি করতে না দেওয়াটাই সরকারের বড় কাজ। একই সঙ্গে ভবিষ্যতেও হুন্ডির চাহিদা কমিয়ে রাখতে হবে।
এ জন্য এখন থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কালোটাকা উপার্জনের পথ। বন্ধ করতে হবে কর ফাঁকি, ঘুষ, চোরাচালানি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার উৎস। এটা সম্ভব না হলে আবারও বেড়ে যাবে অর্থ পাচার, কমবে প্রবাসী আয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই কেবল তা সম্ভব।
প্রতিবেদনে যা নেইঅর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের কথাটির সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই। আছে কেবল বিদেশি বিনিয়োগের কথা। আমরা সবাই জানি, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ না বাড়লে কখনোই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে না। সংকট এখানেই। দেশীয় বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট প্রতিটি সূচকই নিম্নগামী। যেমন বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ, মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্প উৎপাদন সূচক ইত্যাদি।
প্রতিবেদনটিতে কেবল শিল্প খাতের চ্যালেঞ্জের কথা আছে, তবে তা শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে। শ্রমিক অসন্তোষ অবশ্যই বিনিয়োগের বড় অন্তরায়। পাশাপাশি ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়ছে। যদিও বাংলাদেশে কখনোই সুদহারের ওপর বিনিয়োগ নির্ভরশীল ছিল না। বরং একশ্রেণির ব্যবসায়ী সস্তায় অর্থ পেয়ে ব্যাংকঋণের নয়–ছয় করেছেন। সরকারই তাঁদের জন্য সুদহারে ‘নয়-ছয়’-এর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এরই পরিণতি উচ্চ খেলাপি ঋণ।
এমনিতেই বিনিয়োগের অনেকগুলো বাধা আছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ কখনোই উন্নত ছিল না। বরং ক্রমে খারাপ হয়েছে। এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে উন্নতি হয়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রেই খারাপ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি। এর সুরাহা না হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে না, সমাজে অস্থিরতাও কমবে না।
বড় সমস্যা যেখানেবললে ভুল হবে না যে আইনশৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি ঘটেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের কারণে ব্যক্তি নিরাপত্তা যেমন বিপন্ন, তেমনি উসকানি দিয়ে স্থাপনা বা সম্পত্তিতে দলবদ্ধ হামলা বন্ধে সরকারের উদ্যোগের অভাব আস্থার সংকট তৈরি করছে। আস্থাহীন থাকলে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবে না, সরবরাহ চেইন ঠিক হবে না, শিল্প খাতে অসন্তোষ কমবে না, অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। বরং পিছিয়ে পড়বে।
এটা ঠিক যে সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিষয়ভিত্তিক একাধিক টাস্কফোর্স ও কমিটি। অনেকগুলোর রিপোর্ট জমাও পড়েছে। বাস্তবায়ন হলে অদূর ভবিষ্যতে এর সুফলও পাওয়া যাবে। সবগুলোই সঠিক কাজ। তবে এসব সংস্কারের প্রতি সমর্থন পেতে অবশ্যই বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।
মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডেভিড লিপটন একসময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। পরে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি আইএমএফের হয়ে এক গবেষণামূলক লেখায় শেষটা করেছিলেন এভাবে, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, অর্থাৎ শাসনব্যবস্থা পরিচালনার উন্নতি খুব সহজ কাজ নয়। এ জন্য দীর্ঘ সময় ধরে টেকসই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। তবে এ জন্য কেবল সঠিক কাজ করাটাই পর্যাপ্ত নয়। বরং এ থেকে সাধারণ মানুষ কী উপকার পাচ্ছে, তা দৃশ্যমান হতে হয়।’
অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ এটাই, উপকার দৃশ্যমান করা।
● শওকত হোসেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন
[email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র ব যবস থ আর থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।