‘হামরা গুলা সগায় তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হয়া এলা ভূমিহীন। পরের বাড়িত থাকং। সেই তিস্তা নদীর ভাঙনের হাত থাকি বাঁচার জন্তে আন্দোলন হচ্ছে। তাই হামরা রোববার থাকি এটে আসি থাকছোং। হামরা চাই আর যেন তিস্তা নদী না ভাঙে। আর যেন হামার গুলার মতোন কেউ ভূমিহীন না হয়।’

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের শুকান দিঘী এলাকার শহিজল হোসেন (৭৮)। একসময় তাঁর বাড়ি ছিল কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার জোরগাছে। বাড়িঘর ও সাত বিঘা জমি তিস্তায় হারিয়ে এখন লালমনিরহাটে থাকেন।

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মসূচির কথা শুনে শহিজলসহ ভাঙনের শিকার মানুষেরা কর্মসূচিতে ছুটে আসেন। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে তিস্তাপারের পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি, গণপদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

তিস্তাপারের ইউনিয়ন লালমনিরহাট সদরের গোকুন্ডার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোলেমান আলী (৭২) ও ময়না বেগম (৬২) দম্পতি গোকুন্ডার তিস্তা সড়কসেতু ও রেলসেতুর মধ্যবর্তী স্থানে কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসেন। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের সঙ্গে কথা হয়।

সোলেমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিস্তা হামার পাছ ছাড়ে না। তিস্তার হাত থাকি হামার গুলার রক্ষা নাই। আগোত হামার বাড়ি ছিল চিলমারীর জোরগাছোত। জোরগাছোত একবার তিস্তাত গেল বাড়িঘর। সব হারেয়া চলি আসনু লালমনিরহাটের কুরশামারীত। ২০ বছর আগোত কুরশামারীর বাড়িটাও ভাঙি গেল। এলা কুরশামীর মানষের বাড়িত ঘর তুলি থাকছোং।’

গোকুন্ডার আফজাল নগরের আক্তারুজ্জামান ১৬ বছর আগে তিস্তার ভাঙনে ৭০ শতক জমি হারিয়েছেন। সোলেমান আলীর মতো শহিজল, আক্তারুজ্জামানেরা তিস্তায় বাড়িঘর হারিয়ে ভূমিহীন। তাঁদের সবার গল্প প্রায় অভিন্ন। সব হারিয়ে তাঁরা তিস্তা বাঁচানোর আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব (দুলু) বলেন, ‘তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। অথচ প্রতিবেশী ভারত একতরফাভাবে নদীর পানি দিচ্ছে না। আমরা তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। বৃহত্তর রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তাপারের মানুষেরা নিজেদের বাঁচাতে এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন।’

গতকাল সোমবার বিকেলে লালমনিরহাট সদরের গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা সেতু ও তিস্তা রেলসেতুর মধ্যবর্তী স্থানে কর্মসূচির মূল মঞ্চে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান (দুদু), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সংগীতশিল্পী বেবি নাজনীন প্রমুখ।

আজ সকালে তিস্তা সড়ক সেতুর উত্তর মাথা থেকে রংপুরের কাউনিয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত গণপদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দেন কয়েক হাজার মানুষ। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আসাদুল হাবিবের নেতৃত্বে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অধিকাংশের হাতে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানসংবলিত পতাকা ও টি-শার্ট পরা দেখা যায়।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গণপদযাত্রা শেষে তিস্তার পানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও সংগীত পরিবেশন করা হবে। বিকেল পাঁচটায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিস্তাপারের ১১টি স্থানে অবস্থান কর্মসূচিতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, হাফিজ উদ্দিন আহমদসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ