আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতিতে নৈরাজ্য বাড়ছে: সাইফুল হক
Published: 20th, February 2025 GMT
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে সামাজিক নৈরাজ্যের বিস্তার ঘটছে। এতে জনজীবনে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। খোদ রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী আশঙ্কাজনকভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। রাজধানীতে দিনেদুপুরে রোমহষর্ক ঘটনা ঘটছে। ঢাকার কিছু অঞ্চল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবার সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে।
গতকাল বুধবার দলের রাজনৈতিক পরিষদের সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, সরকারের কথিত অপারেশন ডেভিল হান্ট চলাকালে অপরাধ ও খুন রাহাজানির বিস্তার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকার অকার্যকর হয়ে পড়লে গণঅভ্যুত্থানের অর্জন নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের গুরুত্বপূর্ণ কাজও প্রবল ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত হতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে সমন্বিতভাবে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা বলেন, ননইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে কোনো কোনো মহল সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে কিনা– আজ এ প্রশ্নও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার নানাভাবেই নিজেদের বিতর্কিত করে তুলছে। সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়িয়ে তুলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সেইসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক ঐকমত্য বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় বক্তব্য দেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।