উত্তরায় কুপিয়ে জখমের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ২
Published: 20th, February 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় নারী-পুরুষকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন– সজীব ও মেহেদী হাসান সাইফ। মঙ্গলবার রাত ও গতকাল বুধবার ভোরে গাজীপুরে এ অভিযান চালানো হয়। এ নিয়ে হামলায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। অভিযানে কোপানোয় ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার রওনক জাহান বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানার একটি দল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় আব্দুল্লাহপুর পশ্চিমপাড়া থেকে আলফাজ মিয়া ওরফে শিশিরকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার সময় তাঁর পরনে থাকা হালকা জলপাই রঙের ফুলহাতা শার্টটিও জব্দ করা হয়েছে। তাঁর দেওয়া তথ্যে রাতেই গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে সজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মেহেদী হাসান সাঈফকে গাজীপুরের টঙ্গীর মাজার বস্তি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল ও ঘটনার সময় পরনে থাকা শার্ট জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আলফাজ ও সাইফ উত্তরায় নারী-পুরুষকে কুপিয়ে জখম করেন। তাদের তথ্যে তুরাগ নদীর পার থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করা হয়।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়। অনেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে।
এর আগে সোমবার রাতে মোবারক হোসেন ও রবি রায় নামে দু’জনকে ঘটনাস্থলেই আটক করে জনতা। পরে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়। মঙ্গলবার তাদের দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল বাকি তিনজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, সোমবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উত্তরার আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা সেরে বাসায় ফিরছিলেন মেহেবুল হাসান ও নাসরীন আক্তার ইপ্তি। পথে উত্তরা-৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাসার সামনে পৌঁছলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। তখন তিনজন দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একটি মোটরসাইকেল সামনের রিকশাকে ধাক্কা দেয়। রিকশায় মা-বাবার সঙ্গে ছিল চার বছরের এক শিশু। আরোহীদের সঙ্গে মোটরসাইকেল চালকের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পেছনে থাকা মেহেবুল ও ইপ্তি মোটরসাইকেল চালককে ‘ঝামেলা’ করতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা তাদের মারধর শুরু করেন। তারা বলতে থাকেন, ‘আমাদের চিনিস? আমরা কে?’
একপর্যায়ে ভুক্তভোগী দু’জন আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আক্রমণকারীকে ধরে ফেলেন। তখন তিনি কল করে আরও কয়েক সহযোগীকে ডেকে আনেন। আনুমানিক ১০ মিনিট পর চার-পাঁচজন রামদাসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই নারী-পুরুষকে কোপাতে শুরু করেন।
শম্পা বেগম নামে এক নারী গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেহেবুল হাসান ও নাসরীন আক্তার ইপ্তি স্বামী-স্ত্রী নন। তিনিই (শম্পা) মেহেবুলের প্রকৃত স্ত্রী। ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের পাঁচ ও চার বছর বয়সী দুটি সন্তানও রয়েছে। ইপ্তির সঙ্গে মেহেবুলের বিয়ে হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
এ ব্যাপারে মেহেবুল ও ইপ্তির বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। অবশ্য পুলিশ তাদের ‘দম্পতি’ হিসেবেই উল্লেখ করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ঘটন র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা
ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”
এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি।
গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।
কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”
ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”
এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”
ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”
এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”
জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”
বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”
ঢাকা/কেয়া/রফিক