বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে পদ্মার চরে নিয়ে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩
Published: 21st, February 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় এক গৃহবধূকে (২২) ট্রলারে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে পদ্মার চরে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝির কান্তি এলাকার ইয়ামিন মুন্সী (১৯), মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাওলার চরের জামাল মোল্লা (২৩) ও হাওলাদারকান্দি এলাকার জব্বার শেখ (১৮)। গত সোমবার ওই গৃহবধূ পদ্মা সেতু (উত্তর) থানায় লিখিত অভিযোগ করেন; মামলা রেকর্ড হয় মঙ্গলবার। মঙ্গল ও বুধবার ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলা এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত রোববার ওই নারী শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য মাওয়া পুরোনো ফেরিঘাটের ট্রলারঘাটে আসেন। সেখানে তিনি ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় তাঁর স্বামীর পূর্বপরিচিত আবু বকর সিদ্দিক ও জামাল মোল্লা ঘাট এলাকায় আসেন। তাঁরা ওই নারীকে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নিজেদের পরিচালিত ট্রলারে উঠতে বলেন। সিদ্দিক পরিচিত হওয়ায় ট্রলারে ওঠেন ওই নারী। ওই সময় অভিযুক্ত ইয়ামিন ও জব্বার নামের আরও দুজন ট্রলারটিতে ওঠেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ট্রলারটি পদ্মা নদীর ডোমারখালী চরে পৌঁছায়। সেখানে ওই চার গৃহবধূকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন।
সোমবার ওই নারী তাঁর স্বামীকে নিয়ে পদ্মা সেতু (উত্তর) থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার ৪ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা রুজু করে। সেই সঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করে। পরে ওই ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের আদালতে তোলা হয়। তাঁরা দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। এসব তথ্য নিশ্চিত করে পদ্মা উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান এবং পলাতক অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী
গত মার্চে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২৫ কন্যাসহ ১৬৩ জনকে। ১৮ কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুই কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দুই কন্যা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাম্প্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩০ কন্যাসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন কন্যাসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ কন্যাসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ কন্যাসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাসহ দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর ধারা জেন্ডার সমতা। এটি উপেক্ষা করা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন ও সরাসরি নির্বাচন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৪টি। এর আগে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯৯ কন্যাশিশু।