নেত্রকোনায় যুবকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার, বন্ধু আটক
Published: 21st, February 2025 GMT
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় আজ শুক্রবার একটি গ্রামীণ সড়কের পাশ থেকে রাজীব তালুকদার (৩৮) নামের এক যুবকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রাজীবের বন্ধু দীপ (৩৭) নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে।
রাজীব তালুকদার উপজেলার একই ইউনিয়নের বাউসারী গ্রামের রামকৃষ্ণ তালুকদারের ছেলে। দীপ একই গ্রামের বাসিন্দা।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজীব গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তাঁর বন্ধু দীপের গ্রামের সড়ক দিয়ে হেঁটে যান। কিন্তু রাজীব বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাঁকে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পাননি। আজ সকালে স্থানীয় লোকজন গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০০ গজ দক্ষিণে গ্রামীণ সড়কের পাশে একটি রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। লাশের মাথা, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে রাজীবের স্বজনেরা খবর পেয়ে লাশটি রাজীবের বলে শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দুপুরে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রাজীবের বন্ধু দীপকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, আটক হওয়ার পর দীপ পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। নিহত রাজীব ও আটক হওয়া দীপ বন্ধু হলেও স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে শত্রুতা চলছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দীপ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা একসঙ্গে গাঁজা সেবন করেন। পরে ওই দিন রাতে নির্জন স্থানে নিয়ে একটি ছুরি দিয়ে রাজীবকে হত্যা করা হয়। হত্যায় ব্যবহৃত ওই ছুরি, রাজীবের ব্যবহৃত স্মার্টফোনসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলার শেষে আটক যুবককে গ্রেপ্তার থেকে আগামীকাল শনিবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।