নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় আজ শুক্রবার একটি গ্রামীণ সড়কের পাশ থেকে রাজীব তালুকদার (৩৮) নামের এক যুবকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রাজীবের বন্ধু দীপ (৩৭) নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে।

রাজীব তালুকদার উপজেলার একই ইউনিয়নের বাউসারী গ্রামের রামকৃষ্ণ তালুকদারের ছেলে। দীপ একই গ্রামের বাসিন্দা।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজীব গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তাঁর বন্ধু দীপের গ্রামের সড়ক দিয়ে হেঁটে যান। কিন্তু রাজীব বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাঁকে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পাননি। আজ সকালে স্থানীয় লোকজন গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০০ গজ দক্ষিণে গ্রামীণ সড়কের পাশে একটি রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। লাশের মাথা, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে রাজীবের স্বজনেরা খবর পেয়ে লাশটি রাজীবের বলে শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দুপুরে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রাজীবের বন্ধু দীপকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, আটক হওয়ার পর দীপ পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। নিহত রাজীব ও আটক হওয়া দীপ বন্ধু হলেও স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে শত্রুতা চলছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দীপ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা একসঙ্গে গাঁজা সেবন করেন। পরে ওই দিন রাতে নির্জন স্থানে নিয়ে একটি ছুরি দিয়ে রাজীবকে হত্যা করা হয়। হত্যায় ব্যবহৃত ওই ছুরি, রাজীবের ব্যবহৃত স্মার্টফোনসহ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলার শেষে আটক যুবককে গ্রেপ্তার থেকে আগামীকাল শনিবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ