নেত্রকোনায় স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে খুন, আদালতে যুবকের জবানবন্দি
Published: 22nd, February 2025 GMT
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় রাজীব তালুকদার (৩৮) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এক যুবক (৩৫)। স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে নেত্রকোনার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারক কামাল হোসাইন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। নেত্রকোনা আদালত পুলিশের পরিদর্শক-১ মো.
নিহত রাজীব তালুকদার উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা। অন্যদিকে জবানবন্দি দেওয়া যুবক একই ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে ওই ইউনিয়নের একটি গ্রামীণ সড়কের পাশ থেকে রাজীবের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই যুবককে আটক করা হয়। পরে নিহত রাজীবের স্ত্রী মিনা রানী তালুকদার বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন জানান, আজ বিকেলে আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। তিনি বলেন, নিহত রাজীব এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় পাঁচটি চুরি ও মাদক মামলা আছে। রাজীব বিবাহিত হলেও এলাকায় বিভিন্ন নারীদের উত্ত্যক্ত করতেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি তিনি আসামির স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করাসহ ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, আদালতের কাছে আসামি জানান, তিনি ফেরি করে বিভিন্ন এলাকায় পণ্য বিক্রি করায় মাঝেমধ্যে বাড়িতে থাকতে পারতেন না। এ সুযোগে রাজীব বেশ কয়েকবার তাঁর স্ত্রীকে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। সপ্তাহখানেক আগে তিনি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর এলাকায় মেলায় পণ্য বিক্রি করতে যান। ওই দিন রাতে বাড়িতে না ফেরায় রাজীব তাঁর স্ত্রীকে আবার ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে তাঁর স্ত্রী অতিষ্ঠ হয়ে বিষয়টি তাঁকে জানান। এরপর ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বৃহস্পতিবার রাতে রাজীবকে ফোন করে বাড়ি থেকে বের করে নির্জন স্থানে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, রাজীবের ব্যবহৃত স্মার্টফোনসহ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আদালতের নির্দেশে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।