জুলাই আন্দোলন চলাকালে ধর্ষণের অভিযোগ
Published: 22nd, February 2025 GMT
জুলাই আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের কর্মীদের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, উমামা ফাতেমা, নুসরাত তাবাসসুমসহ অন্যদের বিষয়টি জানালেও কাউকে পাশে না পাওয়ার অভিযোগও করেছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সম্মুখ ভূমিকা’ নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ দাবি করেন তিনি। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (পুনাব) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া গোল চত্বর থেকে ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল আমাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা আমাকে কলেজ রোডের পেছনে আজমেরি ওসমানের বাসার নিচের একটি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাকে অনেক গালিগালাজ করে। গালিগালাজের এক পর্যায়ের অফিস থেকে সবাই বেরিয়ে যায়। তবে দুইজন অফিসে ছিলেন। তারা সেখানে আমাকে ধর্ষণ করে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সমন্বয়কদের ধর্ষণের বিষয়টি জানিয়েও কোনো সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, উমামা ফাতেমাকে যখন জানাই, তখন তিনি বলেন- ‘ও তোমার সঙ্গে অনেক খারাপ হইছে, দেখব বিষয়টা।’ নুসরাত তাবাসসুমকে যখন বলি, তখন তিনি বলেন- ‘আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিস।’ এরপর তাকে একাধিকবার মেসেজ করেছি। তিনি মেসেজ সিন করে রেখে দিয়েছেন। সারজিসও হোয়াটসঅ্যাপে নক দিতে বলেছিল। তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তবে সারজিস ভাইও কোনো কিছু করেননি।
ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, আমার এই ঘটনা এমন কেউ নেই যে জানে না। যাদের কারণে আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে তারা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই আন্দোলনের পরও আমাদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। সন্তানের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য আমি একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছি। গত ডিসেম্বরে আমার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। জুলাই আন্দোলনের ছয় মাস পার হলেও আমি ন্যায্য বিচার পাইনি।
ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আহনাফ নামে একজন বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে একটি পোস্ট দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম আহনাফের পোস্টটি শেয়ার করে লেখেন, আদৃতাকে একবার আমার সামনে এনে অভিযোগ করতে বলেন যে- তাকে সাহায্য করতে চাওয়া হয়নি। আদৃতাকে সব রকম সাহায্য দিতে চাওয়া হয়েছিল, তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তার সুচিকিৎসা, নারায়ণগঞ্জের ঘটনাস্থলে তদন্ত, মামলা সবকিছুর কথা বলা হয়েছিল।
তিনি আরও লেখেন, কিন্তু সে চেয়েছিল অন্য কিছু, কিন্তু তার অনুমতি ব্যতিরেকে আমি সেটা প্রকাশ করতে পারছি না। আদৃতাকে বলুন নাম নিয়ে অভিযোগ করতে, অন্যথায় তার স্টেটমেন্ট এবং আপনার বিরুদ্ধে না জেনে অভিযোগ করার নিন্দা একসঙ্গে উপযুক্ত স্থানে পৌঁছে দেয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ওই শ ক ষ র থ
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।
আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।
লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।