নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন
Published: 23rd, February 2025 GMT
ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতির পাশাপাশি নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণহীন এবং জনপরিসরে নারীদের নিরাপত্তা যে ঝুঁকিপূর্ণ—এ ঘটনা তারই একটি উদাহরণ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলস’–এর একটি বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাস ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসে ডাকাতি শুরু হয়। তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি এবং দু-তিনজন নারীকে যৌন নিপীড়ন করে ডাকাতেরা বাস থেকে নেমে যায়।
এরপর বাসের চালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজারের নানা টালবাহানা সত্ত্বেও যাত্রীরা বাসটি নিয়ে মামলা করার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় যান। সেখানে তখন থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ছিলেন না বলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার পরে বাসটি বড়াইগ্রাম থানায় ঢোকানো হলেও কোনো মামলা নেওয়া হয়নি।
ডাকাতির ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছিল পুলিশ। নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালত সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাঁদের আদালতের সামনে হাজির করলে আদালত শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন। এদিকে গতকাল শনিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, এমন খবর পাওয়া গেছে।
লক্ষণীয় হলো, ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি সোমবার রাতে হলেও পুলিশ এ-সংক্রান্ত মামলাটি নিয়েছে তিন দিন পর অর্থাৎ শুক্রবার। ‘ধর্ষণ’, যৌন নিপীড়ন এবং ডাকাতির এ রকম গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মামলা নিতে বিলম্ব হলো কেন? পুলিশ কি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি আমলে নেয়নি—এ রকম প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সময়ক্ষেপণ ও শৈথিল্য যে স্পষ্ট, তা প্রমাণিত হয়েছে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় হওয়া মামলায় বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে আসামি না করায় প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে, মামলার বাদীকে পুলিশ এজাহারের বর্ণনা পড়ে শোনাননি। মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের এ রকম ভূমিকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মামলার শুরুতেই এ রকম অবহেলা বা গাফিলতি করলে পরে নানা জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় শহীদ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল সংগ্রহ করতে যাওয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক এ রকম ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে এখন বেশ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বিগত স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। এ সরকারের মেয়াদ ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি কমেনি; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও প্রত্যাশিত উন্নতি লক্ষ করা যায়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হয়েছে। এরপরও অন্তর্বর্তী সরকার কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারের উচিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো শৈথিল্য গ্রহণযোগ্য নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র র এ রকম
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।