সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন: আইনশৃঙ্খলা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 24th, February 2025 GMT
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে আজ সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ শুরু করছে বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন।’
আজ বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। বিকাল তিনটায় সভা শুরু হয়ে বিকেল সোয়া চারটায় শেষ হয়।
গত কয়েক দিনের ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে-এক সাংবাদিকের এমন বক্তব্যের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষকে আশ্বস্ত করতেই আজকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে আপনারা পরিস্থিতি টের পাবেন।’
গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি নিয়ে আজকের সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সবাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ‘সিরিয়াসলি’ নিয়েছেন। এতে ঢাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে যৌথ পেট্রোল শুরু হবে।
শফিকুল আলম বলেন, ঢাকায় যেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেসব জায়গায় পেট্রোল বাড়বে। আজ সন্ধ্যা থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও নৌবাহিনীর যৌথ পেট্রোল শুরু হবে। পুরো ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় চেক পোস্ট (তল্লাশি চৌকি) বসবে। আইন শৃঙ্খলা নজরদারি করা হবে।
দেশর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একইসঙ্গে তিনি বলেন, পরিস্থিতি আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। রোববার রাত তিনটায় কেন তাঁকে সংবাদ সম্মেলন করতে হলো- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আগে রাত আড়াইটায় কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না। আমরা দিনেও যেমন কাজ করি, রাতেও কাজ করি। রাতে সংবাদ সম্মেলন আপনাদের এটা বুঝানোর জন্য করা হয়েছে যে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শুধু দিনে নয়, রাতেও কাজ করেন।’
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় উপদেষ্টা আরও বলেন, রোববার রাতে বনশ্রীতে ছিনতাইয়ের যে ঘটনা ঘটেছে, তা আগে জানতে জানতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যেত। এখন সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা সবাই জেনে যাচ্ছে। এজন্য অনেকের মনে হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আগেও এমনটি ঘটেছে। এখনো ঘটছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে কোনো গণমাধ্যম এমন লেখেনি যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আজ খুবই ভালো। আমি নিজেও সাংবাদিক ছিলাম। আমি বলব, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক।’
আপনার পদত্যাগের জন্য সচিবালয়ের বাইরে অনেকে দাবি করছে– এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমিও দেখছি, আমার পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছে। আমার দাফন হচ্ছে। জানাজা হয়ে গেছে। কুশপুত্তলিকা দাহ করা হচ্ছে।’
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’–এর বিষয় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই অভিযান চালানো হচ্ছে তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। ৫ আগস্টের পর ছয় মাস পার হলেও পুলিশ এখনো নির্লিপ্ত কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের কর্মকাণ্ড আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সে কাজ করছে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আজকের কোর সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার অ্যাক্টিভিটি আরও বাড়ানো হবে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে প্রচন্ড যানজট থাকে। অপরাধীকে ধরতে পুলিশের জন্য ১০০টি মোটরসাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। অন্য বাহিনীর সদস্যদের জন্যও মোটরসাইকেল কেনা হবে।
কোনো বাহিনীর অসহযোগিতা দেখছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, কোনো বাহিনী থেকে অসহযোগিতা তারা দেখছেন না। যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা হবে।
আজকে কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি জানতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ক জ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।