দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে আজ সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ শুরু করছে বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন।’

আজ বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। বিকাল তিনটায় সভা শুরু হয়ে বিকেল সোয়া চারটায় শেষ হয়।

গত কয়েক দিনের ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে-এক সাংবাদিকের এমন বক্তব্যের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষকে আশ্বস্ত করতেই আজকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে আপনারা পরিস্থিতি টের পাবেন।’

গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি নিয়ে আজকের সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সবাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ‘সিরিয়াসলি’ নিয়েছেন। এতে ঢাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে যৌথ পেট্রোল শুরু হবে।

শফিকুল আলম বলেন, ঢাকায় যেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেসব জায়গায় পেট্রোল বাড়বে। আজ সন্ধ্যা থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও নৌবাহিনীর যৌথ পেট্রোল শুরু হবে। পুরো ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় চেক পোস্ট (তল্লাশি চৌকি) বসবে। আইন শৃঙ্খলা নজরদারি করা হবে।

দেশর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে দাবি করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একইসঙ্গে তিনি বলেন, পরিস্থিতি আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। রোববার রাত তিনটায় কেন তাঁকে সংবাদ সম্মেলন করতে হলো- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আগে রাত আড়াইটায় কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত না। আমরা দিনেও যেমন কাজ করি, রাতেও কাজ করি। রাতে সংবাদ সম্মেলন আপনাদের এটা বুঝানোর জন্য করা হয়েছে যে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শুধু দিনে নয়, রাতেও কাজ করেন।’

এ প্রসঙ্গে আলোচনায় উপদেষ্টা আরও বলেন, রোববার রাতে বনশ্রীতে ছিনতাইয়ের যে ঘটনা ঘটেছে, তা আগে জানতে জানতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যেত। এখন সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা সবাই জেনে যাচ্ছে। এজন্য অনেকের মনে হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আগেও এমনটি ঘটেছে। এখনো ঘটছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে কোনো গণমাধ্যম এমন লেখেনি যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আজ খুবই ভালো। আমি নিজেও সাংবাদিক ছিলাম। আমি বলব, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক।’

আপনার পদত্যাগের জন্য সচিবালয়ের বাইরে অনেকে দাবি করছে– এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমিও দেখছি, আমার পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছে। আমার দাফন হচ্ছে। জানাজা হয়ে গেছে। কুশপুত্তলিকা দাহ করা হচ্ছে।’

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’–এর বিষয় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই অভিযান চালানো হচ্ছে তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। ৫ আগস্টের পর ছয় মাস পার হলেও পুলিশ এখনো নির্লিপ্ত কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের কর্মকাণ্ড আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা সে কাজ করছে।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আজকের কোর সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার অ্যাক্টিভিটি আরও বাড়ানো হবে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে প্রচন্ড যানজট থাকে। অপরাধীকে ধরতে পুলিশের জন্য ১০০টি মোটরসাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। অন্য বাহিনীর সদস্যদের জন্যও মোটরসাইকেল কেনা হবে।

কোনো বাহিনীর অসহযোগিতা দেখছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, কোনো বাহিনী থেকে অসহযোগিতা তারা দেখছেন না। যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা হবে।

আজকে কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি জানতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত ক জ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • ডিবির অভিযানে আ.লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭
  • পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
  • সাবেক আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল