সর্বশেষ ২০০৬ সালের দিকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে (সিপিআই) নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রকাশ্যে নবীনবরণ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এলে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি সংগঠনটি। তবে প্রায় দুই দশক পর আজ সোমবার প্রকাশ্যে নবীনবরণ আয়োজন করেছে তারা। এর মধ্য দিয়ে সিপিআই শাখা শিবিরের নেতারাও প্রকাশ্যে এসেছেন।

আজ চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় চট্টগ্রাম কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের নবীনবরণ আয়োজন করা হয়। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৬ সালের পর এটিই বড় পরিসরে আয়োজন করা নবীনবরণ অনুষ্ঠান। এর মধ্যে প্রতিবছরই নবীনবরণ আয়োজন করা হয়েছে, কমিটিও ছিল। তবে তাঁদের প্রকাশ্যে আসার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সকাল ১০টায় শুরু হয় নবীনবরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম। এতে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম নগরের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তানভীর মো.

হায়দার আরিফ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইব্রাহীম খলিল এবং চট্টগ্রাম নগরের (উত্তর) সভাপতি তানজির হোসেন।

বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আল আমিন ভূঁইয়া ও সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল নোমান। তাঁরা দুজনই ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রশিবির নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে আলোচনা জোরালো হয় গত ২১ নভেম্বর। এদিন ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দের জেরে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হন।

এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষটির দাবি ছিল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে তাঁদের ওপর হামলা করেন। অন্যদিকে ছাত্রদলের দাবি ছিল, ছাত্রশিবিরের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন। পরদিন বিকেলে নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম’–এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়।

১৯ বছর পর এ আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম নগর উত্তরের সভাপতি তানজির হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ভুলভাবে ছাত্রসমাজের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমাদের দূরে রাখা হয়েছে। দেশব্যাপী একধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছিল। সেটি দূর করতে নবাগতদের বরণ করার আমাদের এ প্রয়াস।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ইসলামী দলগুলোর

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিলের দাবিতে একাট্টা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। এসব দাবি না মানলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও ডাক দিয়েছে। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এতে চার দফা দাবি জানানো হয়েছে। নবগঠিত এনসিপির নেতাও কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের দাবি জানান। 

সেমিনারে বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফউদ্দিন মাহদী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজি। 

কমিশনের প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল ছাড়াও এতে দাবি করা হয়, ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ও দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের নিয়ে কমিশন করতে হবে। কোরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতার আলোকে নতুন প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে হবে। 

কমিশনের প্রতিবেদনে উত্তরাধিকার এবং সম্পদে নারীর সমান অধিকারের যে সুপারিশ করা হয়েছে, একে ইসলামবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে দলগুলো। তাদের ভাষ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারীবিষয়ক কমিশন অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না। এতে ইসলাম চর্চা করা নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পাশ্চাত্যের ধারণায় বিশ্বাসীদের নিয়ে গঠিত কমিশন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে আমলে নেয়নি। 

ইসলামী দলগুলো একসঙ্গে কাজ করবে বার্তা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের ভাগ ভাগ, টুকরো টুকরো করে, আমাদের মাথায় আর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।’ অন্যান্য দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে যেতে চাই না। যদি বাধ্য করা হয়, তবে অবশ্যই আন্দোলনে নামব। জামায়াতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। কমিশনের সুপারিশগুলোকে স্ববিরোধী আখ্যা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার, আবার নারীর জন্য কোটা রাখারও সুপারিশ করেছে। নারীরা সম্মানের প্রতীক। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ঘরে ঘরে সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়। কমিশনের প্রতিবেদন কোরআন-সুন্নাহবিরোধী হওয়ায় জামায়াত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কমিশনে যারা আছেন, তাদেরও প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যদি কমিশন করতে হয়, এ দেশের বিশাল সংখ্যক নারীদের প্রতিনিধি রেখেই করতে হবে। 

চরমোনাই পীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আপনারা জনগণের ভোটে দেশ পরিচালনা করছেন না। তার পরও সব সময় আপনাদের সহযোগিতায় ছিলাম, এখনও আছি। আমাদের রাস্তায় নামিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিস্টদের সুযোগ করে দেবেন না। পরিষ্কার বার্তা, সেদিকে পা বাড়ালে ৫ মিনিটও সময় পাবেন না। নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে দাবি করে রেজাউল করীম বলেছেন, পলাতক শক্তি এর মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। বিগত সময়ে নাস্তিকরা যে চক্রান্ত করেছে, কখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আজও এমন হীন চিন্তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ইসলামপন্থি দলগুলোর ঐক্যের কথা বলেন চরমোনাই পীরও। তিনি বলেছেন, এই সেমিনারের মাধ্যমে ইসলাম ও মানবতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার পদক্ষেপ অনেকটা এগিয়ে গেছে। 

মামুনুল হক বলেন, পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নারীবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েরও কেউ কেউ জড়িত। এই প্রস্তাবের একচুলও যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, আমাদের লাশের ওপর দিয়ে করতে হবে। ১৬ বছর যুদ্ধ করেছি। আমরা ক্লান্ত। কিন্তু কোরআনের বিধানের মর্যাদা রক্ষায় যুদ্ধ করতে হলে করব।

আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার সমাজ ব্যবস্থা এই দেশে কায়েমের জন্য কমিশনের এমন সুপারিশ। কমিশন তাদেরই প্রতিনিধি। সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, এই কমিশন বাদ না দিলে সরকারের অন্য কমিশনগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কমিশনের সুপারিশ বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চেয়ে নারীর অবমাননা করা হয়েছে। নারীর সম্মানহানি করা হয়েছে। 

সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনূস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু প্রমুখ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ