স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবির আন্দোলনে আমাদের সংহতি রয়েছে: হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 24th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে, সে আন্দোলনে আমাদের সংহতি রয়েছে। কারণ, সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা সিভিল পোস্ট থেকে চেষ্টা করছি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে। জনজীবনে যেন গণ-আতঙ্ক না ছড়ায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
সোমবার দুপুরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নাগাইশ ফয়েজিয়া রাজ্জাকিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার্থীদের বিদায় ও মিলাদ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে হাসনাত বলেন, আগে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন কারণ বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, যারা সংসদ সদস্য হয় তাদের একটি প্রবণতা থাকে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের একটি প্রভাব বিস্তার করার। স্বজনরাও উপজেলা ও ইউপিতে নির্বাচন করে।
তিনি বলেন, আমাদের অতীতে যেই অভিজ্ঞতা রয়েছে, স্থানীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় তেমন ভালো স্মৃতি নেই। সংসদ সদস্যদের অপ্রত্যাশিত একটি বলয় থাকে, সেই প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান সরকার জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে কিনা সেটি দেখার জন্য আমরা মনে করি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়া উচিত।
হাসনাত বলেন, আমাদের জাতীয় সংহতি ও ঐক্য যতদিন রয়েছে, পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুনর্বাসন আর এই বাংলাদেশে হবে না । হাসিনা যে স্বপ্ন দেখছেন এই স্বপ্ন কখনও বাস্তবায়িত হবে না।
এর আগে শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে হাসনাত বলেন, আমরা চাই না মেধাবীরা ঝরে যাক। মেধাবীরা ঝরে যেতে থাকলে অযোগ্য শাসকরা সমাজ শাসন করতে থাকে। খেয়াল করে দেখবেন, অযোগ্য ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের মসজিদ কমিটির সভাপতি বানানো হয়, যেখানে-সেখানে চেয়ার দিতে হয়।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের পড়াশোনা করতে হবে। জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে। আপনার মধ্যে যদি তথ্যের ভান্ডার থাকে, তাহলে যে কোনো জায়গায় আপনি মোকাবিলা করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। যতই কষ্ট হোক আপনারা পড়াশোনা করবেন।
ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মোস্তাক ফয়েজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রফিকুল ইসলাম ফয়েজী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শশীদল আলহাজ আবু তাহের কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল হোসেন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাশিদুল হাসানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।