আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে না আনলে দুর্বার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বৈষম্যবিরোধীদের
Published: 24th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বানও জানান তারা।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা শাখার উদ্যোগে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এ হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা। এতে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলা ও তরুণদের ভূমিকা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা একটি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতিকে নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়েছে। বৈষম্য, দমন-পীড়ন ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম অসাধারণ সাহস ও নেতৃত্বের গুণাবলী প্রদর্শন করেছে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে ৮ আগস্ট ড.
অভ্যুত্থান পরবর্তীতে দেশ গঠনে তরুণদের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশজুড়ে তরুণরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, লুটপাট হওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধার, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা কমিটি ঘোষণা করেছে।
সাম্প্রতিক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও হুঁশিয়ারি করে বক্তারা বলেন, এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য কিছু কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সংবিধান পুনর্গঠনে সরকারকে সহযোগিতা প্রদান, অর্থনীতি পুনর্গঠন ও লুণ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধারে সহযোগিতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশে থাকা, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় তরুণদের রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নগর কমিটির আহ্বায়ক রিজাউর রহমান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন, মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজ, মুখপাত্র ফাতেমা খানম লিজা, উত্তর জেলা আহ্বায়ক ইয়াছির আরফিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক জোবাইর হোসেন, মহানগরের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রাশেদুল আলম, মহানগর যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ফরহাদ বিন হাবিব ইমন, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব মো. রইছ উদ্দিন ও তৌহিদুল ইসলাম। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর জেলা এবং দক্ষিণ জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এম জি
উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।