এর আগে দেশের কোনো সরকারই শেয়ারবাজারকে নিজের বলে মনে করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘এ বাজার যে অর্থনীতির মূল শক্তি, সে ভূমিকায় কখনোই একে দেখতে পাইনি। উল্টো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মধ্যে এ বাজারকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।’ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পুরোনো কারসাজির চক্রকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা এবং সামনে এগোনোর পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি আশ্বাস দেন, ভবিষ্যতে বিএনপি সরকার গঠন করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যেসব নীতি ও সংস্কার দরকার, এ বাজারকে নিজের মনে করে প্রথম দিন থেকেই তা করা হবে।

রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে আয়োজিত আলোচনায় বিশেষ অতিথি  ছিলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার, সরকারি দল এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব একাকার হয়ে গিয়েছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ‘ওয়াচডগ’-এর ভূমিকায় ছিল না। এ কারণে এক বা পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়ে এক ব্যাংকের মালিক অন্য ব্যাংকের মালিককে ১০ হাজার, ৫০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে– লুট করেছে। আর্থিক বাজার ঠিক না থাকলে শেয়ারবাজার ঠিক থাকে না। আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক তদবিরের চাপে দুর্নীতি সৃষ্টি হয়েছে। এর সমাধান হলো ‘সিরিয়াসলি ডিরেগুলেট’ করা। বিএনপি দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে গুরুত্ব দিয়েই ডিরেগুলেট বাস্তবায়ন করবে অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করবেন। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াচডগের ভূমিকায় থাকবে। এটি করা না গেলে অর্থনীতির উন্নয়ন হবে না।

বিএনপি সরকারের সময়ে ডিরেগুলেট করার উদাহরণ দিতে গিয়ে পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীদের অনুরোধে রপ্তানি আদেশের বিপরীতে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন সনদ ইপিবির কাছ থেকে বিজিএমইএর কাছে দেওয়ার কথা বলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এতে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে। কোনো সমস্যা ছাড়াই এ ব্যবস্থা এখনও চলছে। স্টক এক্সচেঞ্জকেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বিএসইসির তখন প্রকৃত ‘ওয়াচডগ’-এর ভূমিকা পালন করবে।

অনেক বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে যোগাযোগ করছে জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, তারা সবাই একটি রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে। ওই সরকারের নীতি-উদ্যোগ কী হবে, তা জেনেবুঝে তারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে। তবে তার আগে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার বিনিয়োগে টানতে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ব্রোকারদের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, অতীতের অন্যায়গুলোর বিচার শুরু না করলে অপরাধীদের শিক্ষা হবে না, তারা আবারও একই অপরাধ করবে। তাই যারা শেয়ারবাজারে কারসাজি করে মানুষের টাকা লুট করেছে, তাদের চিহ্নিত করে যে কোনো মূল্যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। এটা করতে না পারলে মানুষের আস্থা অর্জন করা যাবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারের সুশাসন ছিল প্রশ্নসাপেক্ষ। বিএসইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা কথা শোনা যায়। স্টক এক্সচেঞ্জের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে একের পর এক মন্দ আইপিও অনুমোদন দিয়েছে, যা এ বাজারে বোঝা হয়ে আছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে যেখানে দূরত্ব রাখার কথা, সেখানে এমন প্রতিষ্ঠানের টাকায় বিদেশে রোডশোর নামে ‘পিকনিকে’ গেছে।

সামষ্টিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো না হলে শেয়ারবাজার ভালো থাকবে– এমনটা আশা করা বোকামি বলে মন্তব্য করেন বিএসইসির সাবেক এ প্রধান। তিনি বলেন, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে এ বাজার সমৃদ্ধ হবে না। সংস্কার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্সের কাছ থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করণীয় আশা করছে সবাই।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ইংরেজি দৈনিক বিজনেস স্টান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে এর আগে কয়েকবার বড় কারসাজির ঘটনা ঘটলেও একটিরও বিচার হয়নি। এ বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যমকে মুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড.

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমির বলেন, রাজনৈতিক বন্দোবস্ত অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসবেন না। ডিবিএর সহসভাপতি মো. সাইফুদ্দিন বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারের উন্নতি হয়নি, উল্টো ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ব এসইস র র জন ত ক সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি

শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী  আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।

যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করসুবিধা দেবে সরকার
  • বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা চেয়ারম্যানের
  • কর্মীদের নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানালেন রাশেদ মাকসুদ
  • ২১ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বিএসইসির আদেশ জারি
  • ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করল বিএসইসি
  • পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে: বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে
  • পুঁজিবাজারে আস্থা বাড়াতে ৬ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ
  • এপ্রিলজুড়ে দর পতন, আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নেই