বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কারসাজির বিচার হতে হবে
Published: 27th, February 2025 GMT
এর আগে দেশের কোনো সরকারই শেয়ারবাজারকে নিজের বলে মনে করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘এ বাজার যে অর্থনীতির মূল শক্তি, সে ভূমিকায় কখনোই একে দেখতে পাইনি। উল্টো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মধ্যে এ বাজারকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।’ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পুরোনো কারসাজির চক্রকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা এবং সামনে এগোনোর পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি আশ্বাস দেন, ভবিষ্যতে বিএনপি সরকার গঠন করলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যেসব নীতি ও সংস্কার দরকার, এ বাজারকে নিজের মনে করে প্রথম দিন থেকেই তা করা হবে।
রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে আয়োজিত আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার, সরকারি দল এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব একাকার হয়ে গিয়েছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ‘ওয়াচডগ’-এর ভূমিকায় ছিল না। এ কারণে এক বা পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হয়ে এক ব্যাংকের মালিক অন্য ব্যাংকের মালিককে ১০ হাজার, ৫০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে– লুট করেছে। আর্থিক বাজার ঠিক না থাকলে শেয়ারবাজার ঠিক থাকে না। আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক তদবিরের চাপে দুর্নীতি সৃষ্টি হয়েছে। এর সমাধান হলো ‘সিরিয়াসলি ডিরেগুলেট’ করা। বিএনপি দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে গুরুত্ব দিয়েই ডিরেগুলেট বাস্তবায়ন করবে অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করবেন। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াচডগের ভূমিকায় থাকবে। এটি করা না গেলে অর্থনীতির উন্নয়ন হবে না।
বিএনপি সরকারের সময়ে ডিরেগুলেট করার উদাহরণ দিতে গিয়ে পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ীদের অনুরোধে রপ্তানি আদেশের বিপরীতে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন সনদ ইপিবির কাছ থেকে বিজিএমইএর কাছে দেওয়ার কথা বলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এতে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে। কোনো সমস্যা ছাড়াই এ ব্যবস্থা এখনও চলছে। স্টক এক্সচেঞ্জকেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বিএসইসির তখন প্রকৃত ‘ওয়াচডগ’-এর ভূমিকা পালন করবে।
অনেক বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে যোগাযোগ করছে জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, তারা সবাই একটি রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে। ওই সরকারের নীতি-উদ্যোগ কী হবে, তা জেনেবুঝে তারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে। তবে তার আগে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজার বিনিয়োগে টানতে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ব্রোকারদের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, অতীতের অন্যায়গুলোর বিচার শুরু না করলে অপরাধীদের শিক্ষা হবে না, তারা আবারও একই অপরাধ করবে। তাই যারা শেয়ারবাজারে কারসাজি করে মানুষের টাকা লুট করেছে, তাদের চিহ্নিত করে যে কোনো মূল্যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। এটা করতে না পারলে মানুষের আস্থা অর্জন করা যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারের সুশাসন ছিল প্রশ্নসাপেক্ষ। বিএসইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা কথা শোনা যায়। স্টক এক্সচেঞ্জের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে একের পর এক মন্দ আইপিও অনুমোদন দিয়েছে, যা এ বাজারে বোঝা হয়ে আছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে যেখানে দূরত্ব রাখার কথা, সেখানে এমন প্রতিষ্ঠানের টাকায় বিদেশে রোডশোর নামে ‘পিকনিকে’ গেছে।
সামষ্টিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো না হলে শেয়ারবাজার ভালো থাকবে– এমনটা আশা করা বোকামি বলে মন্তব্য করেন বিএসইসির সাবেক এ প্রধান। তিনি বলেন, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে এ বাজার সমৃদ্ধ হবে না। সংস্কার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্সের কাছ থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করণীয় আশা করছে সবাই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ইংরেজি দৈনিক বিজনেস স্টান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে এর আগে কয়েকবার বড় কারসাজির ঘটনা ঘটলেও একটিরও বিচার হয়নি। এ বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যমকে মুক্তভাবে কাজ করতে দিতে হবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ব এসইস র র জন ত ক সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানের রাস্তায় রাস্তায় ‘হিটেড বেঞ্চ’
জাপানের টোকিও, সাপোরো এবং ওসাকার মতো বড় বড় শহরগুলোর রাস্তায় হিটেড বেঞ্চ বসানো হয়েছে। তীব্র শীতের রাতে গৃহহীন মানুষদের উষ্ণতা এবং স্বস্তি দেওয়াই এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।এই বেঞ্চগুলো সৌরশক্তি চালিত হয়ে থাকে।
হিটেড বেঞ্জগুলো দিনের বেলায় সূর্যের আলো থেকে তাপ সংগ্রহ করে বিশেষ "ফেজ-চেঞ্জ মেটেরিয়াল" ব্যবহার করে তা সংরক্ষণ করে। এরপর সংরক্ষিত তাপ রাতে ধীরে ধীরে নির্গত হয় এবং প্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত উষ্ণতা সরবরাহ করতে পারে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী।
আরো পড়ুন:
কারা বেশি কাঁদেন?
যেসব কারণে মানুষ স্বর্ণ জমায়
হিটেড বেঞ্চের জন্য কোনো অতিরিক্ত জ্বালানী বা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। এই মানবিক উদ্যোগটি জাপান সরকারের একটি সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ, যা নগর পরিকল্পনায় উদ্ভাবন এবং সামাজিক কল্যাণের এক চমৎকার উদাহরণ বলছেন দেশটির নাগরিকেরা।
ঢাকা/লিপি