অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকায় বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দলের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নই। এখন সরকারের দায়িত্বে আছি। এই সরকারের দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় রূপান্তরের যে দায়িত্বটা রয়েছে, সে কারণে আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারব না। তবে আমার প্রত্যাশা থাকবে শুধু নতুন দল নয়, বাংলাদেশের যে কয়টি রাজনৈতিক দল আছে, সবাই জনকল্যাণমুখী হবে, জনগণের জন্য কাজ করবে।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার মুরাদনগরে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। উপজেলার আকাবপুর হাজী ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ‘আকাবপুর ইউনিয়নবাসীর’ ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ‘উপজেলার সার্বিক পরিকল্পনা বিষয়ে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়’ প্রধান অতিথি ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। আকাবপুর আসিফ মাহমুদের নিজ গ্রাম। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই জানানো হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল উল্লেখ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যেই সরকারের নানা উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। আপনারা দেখেছেন ইতিপূর্বে ছিনতাইয়ের সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছিল। তাই নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। আপনারা দেখবেন ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাহিনীগুলো এখন অ্যাকটিভ (সক্রিয়) অবস্থায় আছে, আমরা আশা করছি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে।’

মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ার কারণে মাদক এখানে একটি বড় সমস্যা। একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাইলে অবশ্যই যে তরুণ প্রজন্ম সামনের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে, সেই তরুণ প্রজন্মকে সুন্দরভাবে গড়ে উঠতে হবে। তবে তরুণ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে মাদক। তাই মুরাদনগরে মাদক ব্যবসা এবং মাদক চোরাচালান বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করা হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো.

তৌহিদুল ইসলাম, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম, মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান, মুরাদনগর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক উবায়দুল ছিদ্দিকী প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র জন ত ক দল ম র দনগর সরক র র উপদ ষ ট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল