শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত, প্রশ্ন এসেছে জুলাই আন্দোলন নিয়ে
Published: 28th, February 2025 GMT
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা দেড় ঘণ্টা ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম চলে। দেশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ৩টা থেকে এ-১ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ‘বি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন নিয়ে দুটি প্রশ্ন করা হয়েছে। ভর্তি–ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ‘মানবিক ও বাণিজ্য’ শাখার ভর্তি–ইচ্ছুকদের জন্য একরকম প্রশ্ন এবং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মানবিকে পরীক্ষার জন্য ভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের প্রশ্নপত্রে ‘সাধারণ জ্ঞান’ অংশে (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ অংশ) জুলাই বিপ্লবের স্লোগান নিয়ে একটি প্রশ্ন করা হয়েছে। প্রশ্নে বলা হয়েছে ‘জুলাই আন্দোলনের অন্যতম স্লোগান কোনটি? চারটি অপশনের মধ্যে ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক; চল চল ঢাকা চল; কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট; কোটা না মেধা, মেধা মেধা।’
অপর দিকে, ‘বি’ ইউনিটের বিজ্ঞান শাখার প্রশ্নে ‘জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর প্রথম শহীদ কে?’ এই প্রশ্ন করা হয়। সেখানে অপশনে আবু সাঈদের পাশাপাশি আরও তিনটি অপশন দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, ৫ কেন্দ্রে আসনবণ্টন, অনলাইনে প্রবেশপত্র প্রকাশ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫হবিগঞ্জ থেকে শাবিপ্রবিকেন্দ্রে বি ইউনিটের পরীক্ষা দিতে আসেন সামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন সহজ হয়েছে। অনেক প্রশ্নই কমন পেয়েছি। জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ নিয়ে প্রশ্ন আসাতে ভালো লাগল।’
শাবিপ্রবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি কমিটির সূত্রে জানা যায়, শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষা মোট ১০০ নম্বরের। এর মধ্যে প্রশ্নপত্রে ৮০টি প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি প্রশ্নে মান ১ নম্বর। তবে প্রতি চারটি প্রশ্নের ভুল উত্তরের জন্য ১ নম্বর কর্তন করা হবে। প্রশ্নের ৮০ নম্বর ছাড়া বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়া হবে।
গুচ্ছ থেকে বের হয়ে এবার স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে শাবিপ্রবি। এবার ভর্তি পরীক্ষার জন্য দুই ইউনিটে মোট আবেদন পড়েছিল ৮৬ হাজার ৪১৬টি। দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ‘বি’ ইউনিটে (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ) শাবিপ্রবি কেন্দ্রে ৬ হাজার ৯৮৩ জন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ হাজার ৬৩৬, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৫৬, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ৩ হাজার ১৪ ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) ১ হাজার ৪২৭ জনসহ মোট ২৯ হাজার ১১৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন করেন।
বেলা ৩টা থেকে অনুষ্ঠিত এ-১ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষায় শাবিপ্রবি কেন্দ্রে ৬ হাজার ২৭০ জন, ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ে ৩৪ হাজার ৩৬৯, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ১২, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ৩ হাজার ৭৮০ ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ৬২৭ জনসহ মোট ৫৬ হাজার ৫৮ জন আবেদন করেন। এ ছাড়া এ-২ (স্থাপত্য) ইউনিটের ১ হাজার ২৪২ জন আবেদনকারীর পরীক্ষা শাবিপ্রবি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুনপ্রথম আলোয় সংবাদপ্রকাশ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি কমল ৫০০ টাকা০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ হজ ল ল ব পর ক ষ র ইউন ট র র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
এ দেশে খুচরা ব্যাংকিং বন্ধ করে দিচ্ছে এইচএসবিসি
বাংলাদেশে খুচরা (রিটেইল) ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। ফলে বহুজাতিক এই ব্যাংকে আর কোনো ব্যক্তি আমানত ও ঋণসংক্রান্ত সেবা পাবেন না। তবে খুচরা ব্যাংকিং ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্তটি হুট করে কার্যকর করা হবে না। ধাপে ধাপে গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে এই সেবা বন্ধ করা হবে। এইচএসবিসির গ্লোবাল এক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ থেকে খুচরা ব্যাংকিং ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাংকটি আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
খুচরা ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত হিসাব, গাড়ির ঋণ, বাড়ি কেনার ঋণ, বিমাসেবা, মেয়াদি বিনিয়োগ, ব্যক্তিগত অর্থায়ন। এর মধ্যে প্রচলিত ও শরিয়াহ দুই ধরনের সেবা রয়েছে। এসব সেবায় এখন নতুন গ্রাহক যুক্ত করা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংকটির ওয়েবসাইটেও এ–সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সাল শেষে এইচএসবিসি বাংলাদেশের আমানত ছিল ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিম ছিল ১৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটির মুনাফা বেড়ে হয় ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। সারা দেশের ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় ব্যাংকটির ব্যবসাকেন্দ্র রয়েছে। সারা দেশে শাখা ও উপশাখা রয়েছে সাতটি। এ ছাড়া পাঁচটি ‘সিলেকট’ সেন্টারের মাধ্যমে বিশেষ ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক এই ব্যাংক। সারা দেশে ব্যাংকটির এটিএম বুথ রয়েছে ১১টি।
এক বিজ্ঞপ্তিতে এইচএসবিসি জানিয়েছে, ব্যাংকটি বাংলাদেশে তাদের রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করছে। এই প্রক্রিয়া এ বছরের দ্বিতীয় অংশে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে। বাংলাদেশে রিটেইল ব্যবসায় এইচএসবিসির বাজার অবস্থান ও এই ব্যবসার কৌশলগত অবস্থানকে বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধাপে ব্যাংকটি তাদের গ্রাহকদের অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করপোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবসা এ ঘোষণার আওতামুক্ত থাকবে। বাংলাদেশের কমার্শিয়াল ব্যাংকিং ব্যবসাটি এইচএসবিসির আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ একটি মার্কেট হিসেবেই থাকছে। এইচএসবিসি গ্রুপ বাংলাদেশের করপোরেট ও ইনস্টিটিউশন ব্যাংকিং তথা করপোরেট গ্রাহকদের সেবা প্রদানকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং ওই ব্যবসায় ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্টে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী গ্রুপটির কার্যক্রম আরও সহজতর করার একটি অংশবিশেষ, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ঘোষণা করা হয়। যেসব দেশে এইচএসবিসির পরিষ্কার প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা রয়েছে, সেই সব দেশে ব্যাংকটি তার গ্রাহকদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদানে গুরুত্ব অব্যাহত রাখবে।
জানা যায়, খুচরা ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করলেও বাংলাদেশে আমদানি-রপ্তানিসহ করপোরেট ও কমার্শিয়াল ব্যাংকিং ব্যবসার প্রসার অব্যাহত রেখেছে ব্যাংকটি। ফলে ব্যাংকটির মুনাফাও বাড়ছে। এইচএসবিসি বাংলাদেশ তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২৪ সালে এক হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। বহুজাতিক ব্যাংকটি ২০২৩ সালে ৯৯৯ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। ২০২২ সালে এইচএসবিসির নিট মুনাফা ছিল ৫৮৭ কোটি টাকা।
ব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রকাশিত আর্থিক বিবরণীতে বলা হয়েছে, সুদের আয় বৃদ্ধি, আমানতের খরচ কমা এবং বিনিয়োগ থেকে ভালো আয় হওয়ায় রেকর্ড মুনাফা করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির নিট সুদ আয় ৩৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকায়। আমানতের ওপর সুদ ২০ শতাংশ কমে হয়েছে ৬১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণ থেকে সুদের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এইচএসবিসি আয় করেছে ৯৯২ কোটি টাকা, যার মধ্যে মূলধন লাভও রয়েছে। এ আয় আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সাল শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশে।
এইচএসবিসি ১৯৯৬ সালে ঢাকায় প্রথম শাখা চালু করে। ব্যাংকটির মূল প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি হোল্ডিংস পিএলসি। বাংলাদেশে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় গুলশানের লিংক রোডে।