জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে সদস্যদের ব্রিফ করবেন টুর্ক
Published: 2nd, March 2025 GMT
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আগামী ৫ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৫তম অধিবেশনে বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদন সম্পর্কে সদস্যদেশগুলোকে ব্রিফ করবেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা অদ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গোয়েন লুইস এবং তাঁর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে গোয়েন লুইস বিষয়টি তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের জেনেভা অফিস থেকে ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের আন্দোলন সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশে যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো তুলে ধরা হয় জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধান দলের এই প্রতিবেদনে।
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত খুশি যে জাতিসংঘ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটি প্রকাশ করা সহজ কাজ ছিল না, তবে যথাসময়ে এটি তারা প্রকাশ করেছে।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত সব নৃশংসতার সঠিক নথিভুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এর মধ্যে শাপলা চত্বরে আন্দোলনকারীদের ওপর দমন–পীড়ন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের নিষ্ঠুরতা এবং বছরের পর বছর ধরে ঘটে যাওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই দেশে জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব নৃশংসতার যথাযথ নথিভুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি এসব ঘটনার যথাযথ নথিভুক্তি না করা হয়, তাহলে সঠিক তথ্য জানা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হবে।’
অধ্যাপক ইউনূসকে গোয়েন লুইস বলেন, ‘জনগণের ওপর ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ঘটনাগুলো যথাযথ অধিভুক্ত করতে জাতিসংঘ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এটি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ এবং সত্য প্রতিষ্ঠার একটি প্রক্রিয়া।’
আবাসিক সমন্বয়কারী আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গা সংকটকে পুনরায় বৈশ্বিক মনোযোগে আনবেন, বিশেষ করে যখন এ ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আর্থিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। প্রতি মাসে শুধু রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে দেড় কোটি ডলার প্রয়োজন হয়, যা অন্যান্য মৌলিক চাহিদার সঙ্গে যুক্ত।’
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস আগামী ১৩ থেকে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন। বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বড় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে নরওয়ের সাবেক উন্নয়ন ও পরিবেশমন্ত্রী এরিক সলহেইমের নেতৃত্বে একটি উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।
প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে ক্ষুদ্র আকারের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র, কার্বন মার্কেট ও কৃষি বনায়নে বিনিয়োগের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে। পাশাপাশি নেপালে জলবিদ্যুৎ বিনিয়োগ সম্ভাবনার যৌথ অনুসন্ধানেরও আগ্রহ দেখান তাঁরা। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমানে এসব দ্রুত বিকাশমান খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কার্বন মার্কেটে বড় বিনিয়োগ চায়।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে এবং তাঁর সরকার দক্ষিণ এশীয় গ্রিড প্রতিষ্ঠার সুযোগ অনুসন্ধান করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘নেপালের জলবিদ্যুৎ এক অপার সম্পদ, যা এখনো ব্যবহারের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর সরবরাহ ব্যবস্থা।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।
উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।
ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।
এএএম//