বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতা নাজিম উদ্দিন ওরফে নাজিম চেয়ারম্যান। তারে বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলাসহ হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। তারপরও তাকে ধরতে প্রশাসনের নেই কোন তৎপরতা। 

৫ আগস্ট স্বৈরশাসকের পতনের পর কিছুদিন পালিয়ে থাকলেও সম্প্রতি আবার প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে তাকে। নিজের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ফতুল্লার ভুইগড়ে রূপায়ণ হাউজিংয়ের পক্ষে মানুষের জায়গা দখল করতে গিয়েছিলেন রূপায়ণের আনসার সদস্যদের নিয়ে। 

পরে আশেপাশের লোকজন জড়ো হলে নাজিম উদ্দিন দ্রুত গাড়িতে উঠে পালিয়ে যান ঘটনাস্থল থেকে। তবে মাঝে মধ্যে প্রকাশ্যে এসে ইন্টারনেট ও ডিস সহ অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদারকি করার চেস্টা করছেন তিনি।

নাজিম চেয়ারম্যান এর যত কুকীর্তি : অভিযোগ রয়েছে রুপায়ণের বর্ধিত প্রকল্প ফেইজ ১ ও ফেইজ ২ বাস্তবায়নের জন্য আশেপাশের জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে উপযুক্ত মুল্যের কম মুল্যে রূপায়ণকে জমি কিনে দিতেন তিনি। জমির মালিকরা রাজি না হলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতেন। 

রূপায়ণের জন্য জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে রাসেল নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়েন নাজিম উদ্দীন। রাসেল হত্যা মামলা আদালতে এখনো চলমান।

অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতায় থাকাকালীন ভুইগড়ে গিরিধারা জিরো পয়েন্টের পাশে ভুয়া দলিল করে এক নিরীহ ব্যক্তির জায়গা দখল করেন নাজিম উদ্দিন। ভুক্তভোগী মামলা করতে চাইলে তাকে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। ভয়ে ওই ভুক্তভোগী মামলা করতে পারেননি।

ভুইগড় শিকদার পেট্রোল পাম্পের পাশে জমির হোসেন নামের এক লোকের দুই তলা বাড়ি  ভুয়া দলিল বানিয়ে দখল করে নেন নাজিম উদ্দিন। অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদ কর্তৃক বরাদ্দকৃত ভুইগড় কবরস্থানের ২০ লাখ টাকা নাজিম উদ্দিন আত্নসাৎ করেন। একাধিক নারী কেলেংকারীতেও জড়িয়েছেন নাজিম উদ্দিন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক পতিতার সাথে আমোদ ফুর্তি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে ওই পতিতাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি।  সেই ঘরে এক কন্যা সন্তান রয়েছে। পরিবারের চাপে ঘরে তুলতে না পেরে আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে তাকে রাখতেন। পরে ছাড়াছাড়ি হয় সে সংসার। 

আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতায় থাকাকালীন রূপায়ণের ফ্ল্যাট মালিকরা ফ্ল্যাট রেজিষ্ট্রেশন, গ্যাস বিল বিদ্যুৎ বিল ডিস ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে নাজিম উদ্দীন তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের হুমকি ধামকি দিতেন। এ নিয়ে রূপায়ণ টাউনবাসী তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। তারা নাজিম উদ্দীনের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ২০১৯ সালে রুপায়ণ টাউনবাসীর উপর হামলা করে নাজিম উদ্দিন বাহিনী। 

এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন আবু সাঈদ পাটোয়ারীসহ ৪ জন। ওই ঘটনায় আবু সাঈদ পাটোয়ারী রাসেল  বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় নাজিম উদ্দীনকে প্রধান আসামি করে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলা নং ৬৯/১৯ যা এখনো আদালতে চলমান। ক্ষমতায় থাকাকালীন সাইনবোর্ডে পরিবহন সেক্টরে তার চাঁদাবাজি ছিল ওপেন সিক্রেট। জুলাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা হয়। 

পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ফতুল্লা সহ বিভিন্ন থানায় নাজিম উদ্দিনকে ৯টি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। 

তারপরও চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যু  নাজিম উদ্দিন প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর সাহস পান, তা নিয়ে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী। তারা অবিলম্বে তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃংখলাবাহিনীর কাছে দাবী জানান।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও