যেকোনো উপায়ে গ্রিনল্যান্ড ‘দখল’ করবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
Published: 5th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো উপায়ে ডেনমার্কের অধীনে থাকা গ্রিনল্যান্ড দখল করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ মার্চ) মার্কিন কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনে এ ঘোষণা দেন তিনি। খবর রয়টার্সের।
দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশনের প্রথম ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা, এমনকি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন। তাই আমরা এটি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কাজ করছি। আমি মনে করি, আমরা এটি অর্জন করবো, যেকোনো উপায়ে আমরা এটি অর্জন করবো।”
আরো পড়ুন:
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কংগ্রেসে প্রথম ভাষণ ট্রাম্পের
কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্যে শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা ট্রাম্পের
ভাষণে ট্রাম্প আরো বলেন, “গ্রিনল্যান্ডের জনগণের জন্য আমার একটি বার্তা রয়েছে। সেটি হলো-আমরা আপনার ভবিষ্যত নির্ধারণের অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। আপনারা যদি চান, আমরা আপনাকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানাই।”
গ্রিনল্যান্ডের জনগণের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প আরো বলেন, “আমরা আপনাদের নিরাপদ রাখব, আমরা আপনাদের ধনী করব এবং একসঙ্গে, আমরা গ্রিনল্যান্ডকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাব, যা আপনারা আগে কখনো কল্পনাও করেননি।”
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড। এটি ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ডেনমার্কের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯৭৯ সালে এর পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে দ্বীপটি। এটি খনিজ সমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে আর্কটিকের মধ্যে অবস্থিত। বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অবস্থানের কারণে এই দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রকে আকৃষ্ট করেছে।
ট্রাম্প বলেন, “এটির জনসংখ্যা খুবই কম কিন্তু বিশাল একটি অঞ্চল। সামরিক নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গ্রিনল্যান্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার আগে থেকেই ট্রাম্প বলে আসছিলেন যে, তিনি গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করতে চান। যদিও ন্যাটো মিত্র ডেনমার্ক বলছে যে, দ্বীপটি বিক্রির জন্য নয়।
জানুয়ারিতে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ডের বেশিরভাগ জনগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিরোধিতা করে। কিন্তু তারা ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা লাভের পক্ষে।
গ্রিনল্যান্ডের প্রতি ট্রাম্পের আগ্রহ দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরো উজ্জীবিত করেছে। তবে, গ্রিনল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ইনুইট আতাকাতিগিট পার্টি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ও কল্যাণমূলক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক জানিয়েছে, আগামী ১১ মার্চ সাধারণ নির্বাচনের পর স্বাধীনতা প্রাপ্তির বিষয়ে তাড়াহুড়ো করা হবে না।
ডেনমার্কের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা মার্কাস ল্যাসেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎ আসলে গ্রিনল্যান্ডের জনগণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। স্বাধীনতা সম্ভব এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।”
লাসেন বলেন, “ডেনমার্ক ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একমত যে, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে আর্কটিকের চারপাশে নিরাপত্তা আরো জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে এবং এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা কিছুদিন ধরে ন্যাটো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসাথে কাজ করে আসছি।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ