দেশে ভ্যাট ট্যাক্স আদায় কম বলে বাংলাদেশ ঋণগ্রস্ত জাতি হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘‘বহির্বিশ্বের চেয়ে বাংলাদেশের ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় কম। তাই বাংলাদেশ ঋণগ্রস্ত জাতি হয়ে যাচ্ছে। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছেই।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের উন্নয়নে রাজস্ব বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সবাইকে ট্যাক্স দিতে হবে।’’

বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) দুপুরে বরিশাল ক্লাবের কনফারেন্স কক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে এ সভা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

মহাসড়কের হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভ্যাট মেশিন বাধ্যতামূলক, লটারি জেতার সুযোগ ভোক্তার

ভ‍্যাট নিবন্ধন: ৬ মাসে এনবিআরের ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘‘দেশে ট্যাক্স আদায়ের পরিমাণ অনেক কম। উন্নত বিশ্বের ইউরোপ ৪৫ শতাংশ, আমেরিকা ৩৫ শতাংশ, জাপান ২৪ শতাংশ ট্যাক্স আদায় করলেও বাংলাদেশের ৭ শতাংশের এর সামান্য বেশি আদায় হচ্ছে। এ কারণে আমাদের ঋণ করতে হয়। বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে অর্থ প্রয়োজন, তাই রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।’’

এনবিআর চেয়ারম্যান সেবাগ্রহিতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়াকে আরো সহজ করা হচ্ছে। আয়কর বিভাগের কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী যদি দুর্নীতির আশ্রয় নেয় কিংবা কেউ হয়রানি হলে অনলাইনে অভিযোগ করবেন।’’

তিনি বলেন, একেকজনে একেক রকম নয়, সবাইকে নিয়ে একই প্রক্রিয়ায় ভ্যাট আইন সিস্টেমকে পুনর্গঠন করতে চায় এনবিআর।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবায়দুল হক চান। এ সময় এনবিআর মেম্বার বদিউল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি বন্ধ ও নানা দাবি তুলে ধরেন। 

ঢাকা/বরিশাল/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ