আইফোনের যে ৩ ডিফল্ট সেটিংস পরিবর্তন না করলে তথ্য চুরি হতে পারে
Published: 7th, March 2025 GMT
আইফোন কেনার সময়ই বেশ কিছু অ্যাপ বিল্ট-ইনভাবে ইনস্টল করা থাকে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু সুবিধার সেটিংসও চালু থাকে ডিফল্টভাবে। কিন্তু আইফোনের বিভিন্ন ডিফল্ট সেটিংসের কারণে তথ্য চুরির শিকার হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আইফোনে অটোজয়েন ওয়াই-ফাই, লোকেশন সার্ভিস ও অ্যাপ ট্র্যাকিং নামের তিনটি সুবিধা ডিফল্টভাবে চালু থাকলে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সাইবার অপরাধীদের হাতে চলে যেতে পারে। এতে আর্থিক প্রতারণার পাশাপাশি পরিচয় ও অবস্থানের তথ্য চুরি হতে পারে আইফোন ব্যবহারকারীদের।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, স্বয়ংক্রিয় ওয়াই-ফাই সংযোগ চালু থাকলে আইফোন সব সময় নিকটবর্তী ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক খুঁজতে থাকে এবং অনুমতি ছাড়াই সংযুক্ত হয়ে যায়। আর তাই সাইবার অপরাধীরা সাধারণ ওয়াই-ফাই হটস্পটের আদলে নকল ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অজান্তেই তাদের আইফোনকে নিজেদের নেটওয়ার্কে যুক্ত করে। এরপর আইফোনে থাকা বিভিন্ন তথ্য চুরি করতে থাকে। এ ঝুঁকি এড়াতে আইফোনের অটোজয়েন হটস্পট অপশনটি বন্ধ করা জরুরি। ডিফল্ট সেটিংটি বন্ধের জন্য প্রথমে সেটিংসে প্রবেশ করে ওয়াই-ফাই অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর নিচে স্ক্রল করে অটোজয়েন হটস্পট অপশন থেকে ‘নেভার’ নির্বাচন করতে হবে।
আরও পড়ুনআইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব দ্বিগুণ করতে অ্যাপলের ৩ পরামর্শ১৫ জানুয়ারি ২০২৫অনেক অ্যাপ ইনস্টল করার সময় ব্যবহারকারীর অবস্থান শনাক্তের অনুমতি চায়। তবে আইফোনে ডিফল্টভাবে লোকেশন সার্ভিস চালু থাকায় বিভিন্ন অ্যাপ জিপিএস ব্যবহার করে ক্রমাগত অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। এতে ব্যবহারকারীদের গতিবিধি নজরদারি করা সম্ভব। আইফোনের লোকেশন সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করতে সেটিংসে প্রবেশ করে প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি অপশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর লোকেশন সার্ভিসেসে প্রবেশ করে অপ্রয়োজনীয় সব অ্যাপের লোকেশন ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করতে হবে।
আরও পড়ুননতুন আইফোনের ঘোষণা দিল অ্যাপল, দাম কত২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আইফোনে অ্যাপ ট্র্যাকিং সুবিধা ডিফল্টভাবে চালু থাকায় বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এতে ব্যবহারকারীর নাম, ই–মেইল, ডিভাইস আইডিসহ অনলাইন কার্যক্রম নজরদারি করতে পারে অ্যাপগুলো। ফলে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। আর তাই প্রয়োজন ছাড়া অ্যাপ ট্র্যাকিং সুবিধা বন্ধ রাখতে হবে। অ্যাপ ট্র্যাকিং সুবিধা বন্ধের জন্য সেটিংসে প্রবেশ করে প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি অপশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর ট্র্যাকিংয়ে ক্লিক করে অ্যালাউ অ্যাপস টু রিকোয়েস্ট টু ট্র্যাক অপশন বন্ধ করতে হবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইফ ন র ব যবহ র ড ফল ট
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’