হিযবুত তাহরীরের মিছিলকারীদের ৪৮ ঘণ্টর মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে: আবদুল কাদের
Published: 7th, March 2025 GMT
বায়তুল মোকাররমের সামনে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিছিলকারীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আলটিমেটাম দিয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্য কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা এবং তাদের কার্যক্রম ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিবাদে’ বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। এতে আবদুল কাদের এসব কথা বলেন। সমাবেশে ছাত্রনেতারা প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকার সমালোচনা করেন।
কাদের বলেন, বাংলাদেশ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের দেশ, ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। পাঁচ আগস্ট পরবর্তী বাকস্বাধীনতা ফিরে এলো, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী। এই নিষিদ্ধ সংগঠন কয়েকদিন আগে ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি করে, এখানে প্রশাসন কী করেছে?
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বলব- ধর্মের মূল ভিত্তি, মূল শিক্ষা ভালোভাবে জানুন। উগ্রবাদের পাল্লায় পরে ধর্মের বিদ্বেষ ছড়াবেন না। দেশকে অস্থিতিশীল করতে আজকে যারা উগ্রবাদের মিছিল করেছে তাদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। যাদের ছত্রছায়ায় যাদের নীরব ভূমিকার কারণে সন্ত্রাসি নির্বিঘ্নে রাজপথে সংগ্রাম করে সেই মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান বলেন, এই নিষিদ্ধ সংগঠনের মিছিলের প্রচারণা অনেক দিন আগে আগে চলছিল। মোড়ে মোড়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। দীর্ঘ সময়ে প্রচারণা চালালেও কোনো কঠোর ভূমিকা নিতে দেখিনি। গত কয়েকদিন থেকেই দেখছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখছি। মাগুরায় সাত বছরের বাচ্চাকে ধর্ষণ হতে দেখেছি। ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে এ জন্য ইন্টেরিম, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা দায়ী।
জাহিদ বলেন, হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে বাংলাদেশের মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক নাই। তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়, তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।
সমাবেশে আরও কথা বলেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, মুখপাত্র আশরেফা খাতুন, ঢাবির মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।