রাজধানীর পল্লবীতে বাধার মুখে জাতীয় পার্টির (জাপা) ইফতার মাহফিল ভন্ডুল হয়ে গেছে। আজ শনিবার পল্লবী থানাসংলগ্ন দুই নম্বর কমিউনিটি সেন্টারে এই ইফতার মাহফিল হওয়ার কথা ছিল। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্লোগান দিয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক ইফতার মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় পার্টি। ওই ইফতারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে পুলিশ এসে কমিউনিটি সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ককে নিয়ে যায়। কিছু সময় পর তত্ত্বাবধায়ক ফিরে আসেন। তখন পুলিশ কমিউনিটি সেন্টারের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর ২০-২৫ জন ছেলে এসে অশালীন স্লোগান দিয়ে ইফতার মাহফিলের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের গালাগাল দিয়ে সেন্টার থেকে বের করে দেয়।’

জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, যখন কমিউনিটি সেন্টারে গোলযোগ চলছিল, তখন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের পথে ছিলেন। খবর শুনে তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে ফিরে যান।

অন্তর্বর্তী সরকার পক্ষপাতদুষ্ট

এ ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জি এম কাদের। বিবৃতিতে তিনি বলেন,‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা মাঠে ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জাতীয় পার্টির দুজন নেতা শহীদ হয়েছেন। অনেকেই মামলা ও হামলার শিকার হয়ে কারাবাস করেছেন। এ ছাড়া বিগত সরকারের সব দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম। অথচ বর্তমান সরকার আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।’

জাতীয় পার্টিকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে আমাদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রেই পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার পরও পাওয়া যায়নি। এমনকি পরে থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে গেলেও দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।’

জাপার চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনেক আগেই নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। এই সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের আনুকূল্যে নতুন দলটি ক্ষমতার জন্য ভোটের মাঠে লড়াই করতে চাইবে। এমন বাস্তবতায় পক্ষপাতদুষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই বোকামি। তা ছাড়া বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দৃষ্টে এ কথা বলা যায়, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে যে শক্তি ও সামর্থ্য দরকার, তা এই সরকারের নেই।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল