কাজে ফিরেছেন বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
Published: 9th, March 2025 GMT
কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ রোববার সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে নিজ নিজ কাজে ফিরেছেন। বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতি স্থগিত করায় তারা কাজে ফিরেছেন।
গত বুধবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরকে কেন্দ্র করে বিএসইসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবি আদায়ে বিএসইসির কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ, সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মূল ভবনের ফটক বন্ধ করে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর সেনাসদস্যরাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। এই উদ্ধার অভিযানকালে বিএসইসির কয়েকজন কর্মকর্তা–কর্মচারী আহত হন। এর প্রতিবাদে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
বিএসইসিতে বৃহস্পতিবার অচলাবস্থা ছিল। এই অচলাবস্থার মধ্যে ওই দিন বেলা ৩টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে কার্যালয়ে আসেন চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা। অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন।
এদিকে বুধবারের ঘটনায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তা–কর্মচারীকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার এ মামলা করেন। এই মামলার পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কর্মবিরতি বাদ দিয়ে স্বাভাবিক কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের পুঁজিবাজারের স্বার্থে ও বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কমিশনের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দপ্তরের কাজে নিয়মিতভাবে যোগদানের উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এদিকে বিএসইসিতে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ঘটে যাওয়া ঘটনায় আজ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএ, সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা। বেলা ১১টায় এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ও ব্যক্তিরা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এসইস র কর মকর ত ব এসইস র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।