ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সংবাদ সম্মেলনে নতুন প্রশাসনের ছয় মাসে যেসব অর্জনের কথা উঠে এল
Published: 9th, March 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর নতুন প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু কাজ করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ছয় মাসের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও অর্জন তুলে ধরতে আজ রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানানো হয়। বিকেলে আব্দুল মতিন ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গত ছয় মাসের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও অর্জন নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, এক অস্থির ও অস্বাভাবিক সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন। ভঙ্গুর ও স্থবির বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকা আবার সচল করা ছিল নতুন প্রশাসনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
উপাচার্য আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ক্লাস চালু করতে সক্ষম হয়েছে। ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতকরণ এবং আবাসিক হলগুলোকে সংস্কার করার যে চ্যালেঞ্জ তাঁদের সামনে ছিল, সেসব তাঁরা দ্রুততম সময়ে করেছেন।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনিক সংস্কার ও পরিবর্তন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে জোরদার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের ৬ মাসে যেসব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—আবাসিক হলে গণরুম প্রথা বিলুপ্তিকরণ; জুলাই বিপ্লবসংক্রান্ত পদক্ষেপ যেমন—বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান কর্নার’ এবং জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, আহত ১২ শিক্ষার্থীকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা; নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষকালীন আর্থিক সহায়তা; উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে পরিচালক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ; গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চায় অ্যাপ্লাইড ডেমোক্রেসি ল্যাব প্রতিষ্ঠা; ছাত্ররাজনীতির সংস্কার নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন; ডাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত তিনটি পৃথক কমিটি গঠন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এ ছাড়া রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও প্রশাসনিক বিভিন্ন উন্নয়ন যেমন—তিনটি মেকআপ প্রকল্প শিগগিরই বাস্তবায়নের আশ্বাস, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও হলসমূহে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ, চীনের আর্থিক সহায়তায় নারীদের জন্য একটি হল নির্মাণ প্রকল্প, শহীদ মেডিকেল সেন্টারকে অটোমেশনের আওতায় আনা ও সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ, নিরাপত্তার স্বার্থে চলাচল নিয়ন্ত্রণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিষয়ক এলটির কার্যবিধি বাড়ানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এর বাইরে শিক্ষাগত উৎকর্ষ ও গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ; কাউন্সেলিং, টিকা কার্যক্রম, রক্তদান কর্মসূচি ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে পদক্ষেপ; ক্যাম্পাসের শাটল বাস সার্ভিস চালুকরণ; প্লাস্টিক বর্জন কর্মসূচি এবং বৃক্ষমেলাসহ পরিবেশ সংরক্ষণসহ শিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় করা মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই আমরা বহিরাগত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছিলাম, বইমেলা ও রমজানের কারণে তা শিথিল থাকলেও রমজানের পর থেকে সেই নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আবারও শুরু হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা ও মামুন আহমেদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য পদক ষ প র জন য আহম দ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
বিচারিক পদ সৃষ্টিতে কমিটি গঠনের বিধান রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি
জুডিশিয়াল সার্ভিসে পদ সৃষ্টিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সভাপতিত্বে পদ সৃজন কমিটি গঠিত হবে, এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে সোমবার রাতে ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ শিরোনামে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বিধিমালার ৫ বিধিতে সার্ভিসের পদ সৃজন বিষয়ে বলা হয়েছে। ৫(১) উপবিধি অনুসারে, বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের কর্মে জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন, হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারপতি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিবদের সমন্বয়ে বিচারিক পদ সৃজন কমিটি গঠিত হবে। ওই পদ সৃজনের ক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
৫(২) উপবিধিতে বলা হয়েছে, সার্ভিসের পদ সৃজনের ক্ষেত্রে বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে বিচারিক পদ সৃজন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে আইন ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির কাছে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করবে এবং অনুমোদিত সারসংক্ষেপ অনুযায়ী চূড়ান্ত আদেশ জারি করবে।
এর আগে ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।
‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ শিরোনামে সোমবার রাতে জারি করা প্রজ্ঞাপনের ৩ বিধিতে সার্ভিস গঠন বিষয়ে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৭–এর অধীন গঠিত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এই বিধিমালার অধীন গঠিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে কমিটি গঠন বিধিমালাটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি দিক। অধস্তন আদালতের বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক যে জটিলতা ছিল, তা এই বিধিমালার মাধ্যমে দূর হবে বলে মনে করি। জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা ২০২৫ বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।’