পুরোনো শত্রুতা, নদী থেকে বালু তোলার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও হাটবাজারের দখল নিয়ে বিরোধের কারণে মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরে দুই ভাইসহ তিনজনকে খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে পুলিশ ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় মামলা হলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

নিহত দুই ভাইয়ের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে রোববার সকালে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৪৯ জনকে এজাহারভুক্ত ও ৮০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। 
সরেজমিন জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে খোয়াজপুরে কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সরদার। এলাকায় তিনি হিটার সাইফুল হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন। বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও স্থানীয় হাটবাজারের ইজারা নিয়েছিলেন তিনি। বালু তোলার সিন্ডিকেট ও খোয়াজপুর-টেকেরহাট বাজারের ইজারা দখল নিয়ে হোসেন সরদার (৬০) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সাইফুলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। এর জেরে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হোসেনের দুই পা ভেঙে দেন সাইফুল ও তাঁর সহযোগীরা। এ ঘটনা ছাড়া আরও কিছু  ঘটনায় সাইফুলের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়েছিল। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হলে পরে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করতেন সাইফুল। এ নিয়ে এলাকার মানুষ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। 

এ ছাড়া জেলার রাজনৈতিক বিরোধেও জড়িয়ে পড়েছিলেন হোসেন সরদার (৬০) ও সাইফুল (৩৫)। দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগে দুটি বলয় তৈরি হয়েছিল। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এবং অপর পক্ষের নেতা ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সাইফুল বাহাউদ্দিন নাছিম সমর্থিত খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর প্রতিপক্ষ হোসেন সরদার ছিলেন শাজাহান খান সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাইফুল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইফুলের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানান, এক সময় এলাকায় খুব প্রভাব ছিল সাইফুলের। বিভিন্ন বিচার-সালিশও করতেন তিনি। মানুষ তাঁর কথা মানত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। হোসেন সরদারও তখন আওয়ামী লীগে ছিলেন। সম্প্রতি সাইফুল তাঁর লোকজন নিয়ে হোসেনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে তাঁর লোকজনকে মারধর করে। হোসেনের লোকজন আবার সাইফুলের এক মামাকে তুলে নিয়ে মারধর করে। সেই ঘটনার মাসখানেক আগে মীমাংসাও হয়ে গেছে। তারপর বালু তোলার ড্রেজার ব্যবসা দখলে নিতে যান সাইফুল ও তাঁর লোকজন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এর জেরে গত শনিবার সাইফুল ও তাঁর ভাই আতাউর সরদার (৪০) এবং চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত সাইফুলের স্ত্রী সতি বেগম (২৬) অভিযোগ করেন, গত বছর তাঁর স্বামীর সঙ্গে হোসেন সরদারের একটা বিরোধ হয়েছিল। সেই ক্ষোভ ধরেই হোসেন ও তার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিন দিক থেকে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা পালানোর চেষ্টা করেন। হামলাকারীরা তাদের বাড়িঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, হামলার সময় তাঁর স্বামী ও ভাশুর মসজিদে গিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। সেখান থেকে তাদের ধরে এনে মেরে ফেলা হয়। এ সময় পলাশ নামে তাদের এক আত্মীয়কেও মেরে ফেলা হয়।  
সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, তাঁর দুই ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সরকারের কাছে ঘটনার বিচার ও হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেন তিনি। 
তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বালু ব্যবসা ও পূর্বশত্রুতার জের ধরেই ঘটেছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ স ন সরদ র র ল কজন ব যবস আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

কর্মক্ষেত্রে বুলিং: শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

কর্মক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির প্রতি অন্য সহকর্মী দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে ও নিয়মিতভাবে খারাপ আচরণ করাকে কর্মক্ষেত্রে বুলিং অথবা উৎপীড়ন বলে। এটি কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে, কর্মীর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়; কর্মীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

প্রকারভেদ

কর্মক্ষেত্রে বুলিং বিভিন্ন রকম হয়—

মৌখিক বুলিং: গালিগালাজ, অপমানজনক মন্তব্য, সবার সামনে ছোট করা, বিদ্রূপ করা।

শারীরিক বুলিং: মারামারি, ধাক্কা দেওয়া অথবা শারীরিকভাবে আঘাত করা।

সাইবার বুলিং: অনলাইনে বা সামাজিক মাধ্যমে অপমানজনক বার্তা পাঠানো, মোবাইলে ফোন করে খারাপ ব্যবহার করা।

কেন করা হয়?

এই উৎপীড়নের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে—

কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতা জাহির করা।

সহকর্মীর প্রতি ঈর্ষা।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সামনে নিজেকে জাহির করার ইচ্ছা।

কর্মীর পারিবারিক অথবা মানসিক সমস্যা; যা কর্মক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।

কর্মীর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

বুলিং কর্মীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এর কারণে অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি চাকরি ছেড়ে দেওয়া, অনেক সময় আত্মহত্যাও করতে পারেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

ডিপ্রেশন বা হতাশা

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা

ইনসমনিয়া বা ঘুম কম হওয়া

আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া

আত্মহত্যার প্রবণতা

শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া

ওজন বেড়ে যাওয়া

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া

মানসিক চাপ ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগকে অনিয়ন্ত্রিত করে দেয়।

প্রতিরোধের উপায়

ঊর্ধ্বতন নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার কাছে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলা।

প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

ডা. নাজমুল হক মুন্না সহকারী অধ্যাপক (নিউরোলজি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কর্মক্ষেত্রে বুলিং: শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব