মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের বীভৎস ঘটনা যে কোনো বিবেকবান মানুষকে হতবুদ্ধি করে দেয়। বিকৃতির কোন পর্যায়ে আপন ঘরেই শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে পারে! দেশে ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়, সারাদেশ তোলপাড় করা বেশ ক’টি ধর্ষণের ঘটনার কথা এক নিঃশ্বাসে আমরা বলতে পারি। পূর্ণিমা, তনু, মুনিয়া... বিভিন্ন সময়ে আলোড়ন-জাগানিয়া এসব ধর্ষণকাণ্ডের একটিরও যথার্থ বিচার হয়নি। ধর্ষণের শিকার অগণিত নারী-শিশুর খবর পত্রিকার পাতা পর্যন্ত আসেও না। 

অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির সমান্তরালে বেড়েছে নারী নির্যাতন। নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, দলবদ্ধভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যালয় ও সড়ক-মহাসড়কে সজোর প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রোববার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা রাজপথে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদের ঝড় তোলে, গড়ে ওঠে ‘ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ মঞ্চ’; দাবিদাওয়ার মুখে সরকারের উপদেষ্টাদের আপাত সরব দেখা যায়।

সোমবারের (১০ মার্চ, ২৫) সমকাল ও প্রথম আলোর কয়েকটি শিরোনাম: দিনের পর দিন ধর্ষণ, মুক্তি মেলেনি মায়ের মৃত্যুতেও; কেরানীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ; শেরপুর ও কুমিল্লায় ধর্ষণের শিকার শিশু, দুই বৃদ্ধ গ্রেপ্তার; সেই শিশুর বুকে বসানো হলো টিউব, জ্ঞান ফেরেনি চার দিনেও; ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা; শিশুটি কান্নাকাটি করে বোনের বাসা থেকে চলে আসতে চেয়েছিল; ৩ শিশু ধর্ষণের শিকার, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ। দেশের প্রধান দুটি দৈনিকের প্রথম পাতায় এক দিনের শিরোনাম দেখে মনে হয়, এই দেশে অন্ধকার যুগ চলছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে যখন নারীরা রাস্তায় প্রতিবাদমুখর; তখন আনাচে-কানাচে নারী নিপীড়নের মাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

২.


সাম্প্রতিক দুটি নারী নির্যাতনের ঘটনা মনে করা যাক। লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে দুই নারীকে সিগারেট খাওয়ার ‘অপরাধে’ মারধর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ওড়না না পরার কারণে কর্মচারীর ‘সবক’। দুই ক্ষেত্রেই ‘তৌহিদি জনতা’ দৃশ্যপটে হাজির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ‘সবকদাতা’ কর্মচারীর মুক্তির দাবিতে ‘তৌহিদি জনতা’ শাহবাগ থানাও ঘেরাও করে। পরদিন জামিনপ্রাপ্ত নারী উত্ত্যক্তকারীকে ফুলের মালা ও পাগড়ি পরানো হয়। 
নারীর পোশাক নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। এমনকি নারী টিপ দিল কেন, ঘোমটা নেই কেন– এসব নিয়েও সমালোচনামুখর অনেকে। এসব আচরণ আমাদের সমাজে নারী নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত নয়। অথচ পোশাক বা সাজসজ্জার জন্য প্রতিবন্ধকতায় পড়াই তো বড় নারী নির্যাতন! এই নির্যাতন লাগাতার চলেছে; ওয়াজ মাহফিলে, সামাজিক মাধ্যমে, উগ্রবাদী দলের সভায় নারীর চলন-পোশাক ‘ঠিক’, ‘বেঠিক’ রায় দেওয়া হচ্ছে। এমন ভাষা ও ভঙ্গিমায় বর্ণনা করা হচ্ছে, যেন নারী পণ্যমাত্র, তাঁকে ‘সঠিকভাবে পরিবেশন’ করতে হবে! এই দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবেশনা নারীর স্বাভাবিক বিকাশের অন্তরায় কেবল নয়, নারীর প্রতি সহিংস সমাজ ও প্রতিবেশ গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখছে।

৩.
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দুঃশাসক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিষ্ঠার পর সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি সংবেদনশীল আচরণ ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা দেখি মাজার ভাঙা, মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা ভাঙা, ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর চূর্ণ-বিচূর্ণ করা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য ভাঙা– সবকিছুতেই নির্বিকার ও নির্লিপ্ত সরকার। তারপর নারীর প্রতি একের পর এক রুচিহীন আক্রমণ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর হোসেন লালমাটিয়ায় দুই নারীকে প্রহারের পর বলেন, ‘উন্মুক্ত স্থানে নারী বা পুরুষ যে কারও জন্য সিগারেট খাওয়া অপরাধ।’ হা হতোস্মি! যে দেশে উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ্যে যত্রতত্র পুরুষ মূত্রত্যাগ করে, সে দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন এই কথা? পুরুষ তো পারলে অন্যের ঘাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খায় এ দেশে। কী বলছেন তিনি? বুঝে বলছেন!
রাজধানীর গুলশানে বা যে কোনো শহরের অলিগলিতে কয়েকজন মিলে স্লোগান দিতে শুরু করে– ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা/ হুঁশিয়ার সাবধান।’ তারপর ঢুকে যায় কারও তালাবদ্ধ বাড়িতে। তছনছ, ভাঙচুর, লুটপাট করে। তখন প্রশ্ন জাগে, দেশে সরকার বলতে কিছু আছে কিনা? 

মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে অবস্থান স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। মব সন্ত্রাসীরা নিতান্ত ছোট গোষ্ঠী, তারা এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না। সরকারের কি ধারণা, মবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তাদের বৈধতা কমে আসবে? আশ্চর্যের বিষয়, সরকার তার শক্তি সম্পর্কেই জ্ঞাত নয়!
সরকারপ্রধান বারবার বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা কালো টাকা ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে অস্থিরতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। না, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর সুযোগ নেই। ক্ষমতাচ্যুতরা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী– একথা আপনি বললেও আমরা মানতে পারি না। দেশের ছাত্র-জনতার সমর্থনে আপনি দায়িত্ব নিয়ে কেন পতিত গোষ্ঠীকে এত সমীহ করবেন? ধর্মীয়, লিঙ্গীয় বা রাজনৈতিক পরিচয়ে এ দেশে মানুষে মানুষে নানা পার্থক্য থাকতে পারে। কেউ কারও সঙ্গে একমত না হতেই পারেন, কিন্তু কারও ওপর কেউ আক্রমণ করতে পারবে না। এই ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। তাদের দু-একজন উপদেষ্টা বরং দেশের ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে আপন আপন মতামত দিতে শুরু করেছেন। দেশের মুক্তিযুদ্ধকে কোথাও কোথাও তাতে খর্ব করার উৎসাহও আমাদের চোখে পড়ে। এসবই উগ্র ডানপন্থিদের সবল করার কসরত বলে মনে হয়। 

রোববার রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা সাম্প্রতিক নানা ঘটনা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, এখন থেকে তারা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় জোর দেবেন। সাত মাস পর এ ধরনের মিনতি শঙ্কাজাগানিয়া। এতদিন তারা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কেন আরও উদ্যোগী হলেন না? আইন উপদেষ্টা ধর্ষণ মামলায় জামিন পাওয়ার অধিকার রাখবেন না জানিয়ে বলেছেন, এ মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার হবে। তবে জামিন অযোগ্য মামলা হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় মামলা বাড়বে কিনা, এদিকে জোর যেমন দেওয়া উচিত; তেমনি আইনি কাঠামো আরও সম্প্রসারণ ও জোরদার করবার প্রসঙ্গটিকেও তিনি গুরুত্ব দেবেন বলে প্রত্যাশা। তথ্য উপদেষ্টা একই ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জনগণকে জানাতে চাই, যেখানেই মব জাস্টিস পরিস্থিতি হবে, সে যে-ই হোক না কেন, যে ধর্মের, লিঙ্গের, বর্ণের, জাতের হোন না কেন, আমরা এখন থেকে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবো।’
তথ্য উপদেষ্টার কথাতেই পরিষ্কার, মব সন্ত্রাস নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এতদিনকার অবস্থান স্পষ্ট ও দৃঢ় ছিল না। সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট থাকলে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়ত না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে হবে সরকারকে। যেহেতু নির্বাচনে দাঁড়ানোর প্রশ্ন নেই; তাই কারও মন জয় করবার বাড়তি তাগিদও থাকা উচিত নয় সরকারের। সে কারণে তার স্বজনপ্রীতিও থাকবার কথা নয়। আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর হাতে সরকারের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল ও সাহিত্যিক
mahbubaziz01@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ ন স ন উপদ ষ ট সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল