“সংসারে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী-ছেলে মেয়ে রয়েছে। সারা দিন রিকশা চালাই। কোন দিন ৫০০ কোন দিন ৬০০ টাকা কামাই হয়। রিকশা ভাড়া আড়াইশ’ টাকা দিয়ে ইনকাম থাকে আড়াইশ’ থেকে ৩০০ টাকা। তা দিয়ে সংসার চালামু না কি ইফতার করুম? সারা দিন বাইরে বাইরে থ্যাইকা রিকশা চালাই। তাই বাসায় যাইতে পারি না। এইখানে ইফতার করায়, তাই চইল্যা আসি ইফতার করনের লাইগ্যা।”

গোপালগঞ্জে শহরের পৌর পার্কে ইফতার করতে এসে এ কথাগুলোই বলছিলেন রিকশা চালক মো.

রনি গাজী। শুধু তিনিই নন, এমন কথা বলেন ইফতার করতে আসা আরো অনেক রোজাদার।

এক বেলার ইফতার নিয়ে এমন সব মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ।’ প্রতিদিন কর্মহীন মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করছে তারা।

ইফতারে বসেছেন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষেরা

গোপালগঞ্জে শহরের লঞ্চঘাট এলাকার শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন দুপুর থেকে ইফতার তৈরির কাজ শুরু করে ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’ এর একদল সদস্য। এরমধ্যে কেউবা স্কুল আবার কেউ বা পড়ছে কলেজে। এসব সদস্যরা নিজেদের হাত খরচ, পরিবার আর পরিচিতজনদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মুখে এক বেলা ইফতার তুলে দিচ্ছেন। এসব ইফতারের মধ্যে কোনদিন রয়েছে মুড়ি-ছোলা-বেগুনি, কোন দিন দই-চিড়া, কোন দিন খিচুড়ি আবার কোনদিন রয়েছে বিরিয়ানী। যেদিন যেমন আর্থিক সাহায্য পান সেই সেইরকমই খাবার তৈরি করেন তারা।

পরে ইফতারের আগে খাবারগুলো নিয়ে আসা হয় গোপালগঞ্জে শহরের পৌর পার্ক চত্ত্বরে। সেখানেই এসব অসহায় ও দিনমজুর মানুষেকে ইফতার করানো হয়।

ইফতার করতে আসা কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামের বাসিন্দা রিকশা চালক আব্দুস সত্তার শেখ বলেন, “প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা রোজগার করি। রিকশা ভাড়া দিয়ে পরিবারের জন্য ইফতার কিনতে পারি না। এখান থেকে প্রতিদিন ইফতার নিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার করছি।”

অপর রিকশা চালক লিটন মোল্লা বলেন, “আগের মত তেমন একটা আয় রোজগার নেই। পরিবারের জন্য ভাল কোন ইফতার কিনতেও পারি না। প্রতিদিন চলতি পথে এনাদের থেকে ইফতার নিয়ে যাই। কোন কোন দিন বাসায় যেতে না পারলে এখানে বসেই ইফতার করি।”

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’ এর সদস্য মো. নূর নবী, আসিফ করিম বলেন, “আমরা নিজেদের হাত খরচ, পরিবার ও প্রতিবেশি এবং পরিচিতজনদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে এসব খাবার বিতরণ করছি। নিজেদের মনের আনন্দ পেতে কষ্ট হলেও কিছুটা করার চেষ্টা করছি। বিত্তবানদের কাছে আমাদের আবেদন তারা যেন এসব অসহায় মানুষদের দিকে একটু সাহায়্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।”

খিচুড়ি রান্নায় ব্যস্ত ‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’ - এর সদস্যরা

সংগঠনের অপর সদস্য আহম্মদ আলী থান, শীরিন আক্তার তানহা বলেন, “অনেক দুঃস্থ, অসহায়, গরিব মানুষ আর্থিক সমস্যার কারণে ঠিকমত ইফতার করতে পারছে না। আমরা তাদের কথা বিবেচনা করে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী রান্না করা ইফতার বিতরণ করছি। প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মাঝে এসব খাবার বিতরণ করে থাকি।”

‘প্রজ্জ্বলিত গোপালগঞ্জ’ - এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ান আহমাদ চৌধুরী বলেন, “২০১৭ সাল থেকে আমরা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবারের মত এবারের রোজাদার ও কর্মহীন মানুষের মুখে একবেলা ইফতার তুলে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী রান্না করা ইফতার এসব মানুষেদের হাতে তুলে দিচ্ছি। যাতে তারা অন্তত এক বেলা পেট ভরে খাবার খেতে
পারে।”

তিনি আরো বলেন, “সমাজের বিত্তবানেরও এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তারা আর্থিক বা বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এসব মানুষের এক বেলার খাবার যোগাতে পারেন। তারপরেও যতটুকু সম্ভব পুরো রমজান মাস ধরে আমাদের এ কার্যক্রম চলবে।”

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইফত র করত ইফত র ক ত র কর পর ব র এক ব ল র সদস সদস য অসহ য়

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ