৫০ দিনে যেভাবে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিলেন ট্রাম্প
Published: 12th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৫০ দিনে এমন অনেক কাজ করেছেন, যা দেশটির আধুনিক ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট করেননি। তাঁর এসব কাজ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিত্তির খোলনলচে বদলে দিচ্ছে। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের পর খুব কষ্টে ওয়াশিংটনই এসব ভিত্তি তৈরি করেছিল।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান গ্রহণ করেছিল, কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা বিকল্প কৌশলগত রূপরেখা ঘোষণা না করেই ট্রাম্প কিয়েভকে ছুড়ে ফেলছেন। রাশিয়ার হামলার নিন্দা জানিয়ে সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়াকে আগ্রাসনকারী দেশ উল্লেখ করে একটি প্রস্তাব এনেছিল ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটদানের নির্দেশ দিতে দ্বিধা করেননি ট্রাম্প।
শুধু তা–ই নয়, একই দিন সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন নিয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাব এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে রাশিয়ার হামলার নিন্দা জানানো হয়নি। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড, গাজা এমনকি কানাডাকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর এসব বক্তব্য লুণ্ঠনকারীর হুমকির মতো মনে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তকে ‘কৃত্রিম বিভাজক রেখা’ বলে মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান পার্টির এই প্রেসিডেন্ট।
ওয়াশিংটনে ওভাল অফিসে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর ইউক্রেনে অস্ত্র ও মার্কিন বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্র তথা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ আংশিক বন্ধ করেছিলেন ট্রাম্প। তবে রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর কিয়েভের ওপর থেকে গতকাল এই দুই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মিত্রদের যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির রক্তচোষা তকমা দিয়ে তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ন্যাটো মিত্রদের আস্থায় ফাটল ধরিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা করতে না পেরে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স। পোল্যান্ড পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর চিন্তাভাবনা করছে। দেশ দুটি নিজেদের রক্ষার ক্ষেত্রে শেষ আশ্রয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর ভরসা রাখতে পারছে না।
বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থাকে বদলে দিতে ট্রাম্প কতটা সফল হবেন, তা কেউ জানেন না। ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে এই ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান (১৯৪৫-৫৩)। এর পর থেকে পরবর্তী সব প্রেসিডেন্ট এই ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে অবদান রেখেছেন। নতুন বিশ্বব্যবস্থার যে ভিত্তি ট্রুম্যান গড়েছিলেন, সেটার মর্মকথা তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডিন অ্যাকেস নিজের স্মৃতিকথা ‘প্রেজেন্ট অ্যাট দ্য ক্রিয়েশন’ নামের বইয়ে তুলে ধরেছেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন যা শুরু করেছে, তাতে আজকাল ওয়াশিংটনে থাকাটা অস্বস্তিকর হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুনবিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংস করছে যুক্তরাষ্ট্র০৬ মার্চ ২০২৫সফট পাওয়ারের প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ এস নাই জুনিয়র ট্রাম্পের সম্পর্কে সম্প্রতি বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য কর্মকাণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন। কিন্তু বেলা শেষে তা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পক্ষেই যায়।
পুরোনো ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে চাইলেও নিজে কী গড়তে চাইছেন, তা নিয়ে ট্রাম্প স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। তবে তাঁর কাজ দেখে মনে হচ্ছে, ঊনবিংশ শতাব্দীর বৃহৎ শক্তির রাজনীতির জগৎই তাঁর পছন্দ। তাই তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নানা বিষয়ে দর-কষাকষি করছেন। অন্যদিকে ছোট শক্তিগুলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ ইউক র ন কর ছ ল র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।