আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত
Published: 13th, March 2025 GMT
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কতটা শক্ত অবস্থান তারা নিতে পেরেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। সাম্প্রতিক কালে নারী নিগ্রহের ঘটনা এতটাই বেড়েছে যে অন্যান্য অপরাধ নিয়ে আলোচনা কম হচ্ছে। এ ছাড়া একশ্রেণির দুর্বৃত্ত দোকান-বাড়ি-অফিস দখলের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।
ব্যবসায়ীরা ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য রোজা-ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাঁরা ভাবেন, বছরের অন্যান্য সময় ব্যবসা মন্দা হলেও ঈদের সময় বেচাকেনা ভালো হবে। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করছে। আবার এসব হামলার ঘটনায় ব্যবসায়ীকেও জীবন দিতে হচ্ছে।
প্রথম আলোর খবরে জানা যায়, ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় নয়ারহাট বাজারে ডাকাতেরা ৬ মার্চ রাতে ‘দিলীপ স্বর্ণালয়ে’ গচ্ছিত স্বর্ণালংকার লুটে নেয় এবং দোকানের মালিক দিলীপ দাসকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই বাজারে ৩৫টি সোনার দোকান আছে।
ঘটনার পর সেখানকার ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁদের অভিযোগ, ২০২১ সালে বাজারের ১৭টি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। এরপর প্রিয়াংকা জুয়েলার্সে ৯ মাস আগে ডাকাতি হয়েছিল। দিলীপ দাসের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দাবিতে বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। তথ্য–আলামত দেখে মনে হয়, দিলীপ হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত। তিনি ওই দিন সন্ধ্যার পর দোকান থেকে চলে গিয়েছিলেন, এরপর দুই নারী ক্রেতা তাঁকে ডেকে দোকানে নিয়ে আসেন। ঘটনার সময় আতশবাজি-জাতীয় কিছু ফাটানো হয়েছিল। পুলিশ ওই দুই নারীসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে বরিশালের উজিরপুরে বিএনপির দলীয় নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার টানিয়ে প্রয়াত এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যুবদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
গত শুক্রবার রাজধানীর কলাবাগান থানার রাসেল স্কয়ার এলাকায় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও চাঁদাবাজির দায়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তারুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সালমানসহ বিভিন্ন পদের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকায় পাঁচ দিনের ব্যবধানে ইটভাটাসহ দুই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও একাধিক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে।
ডেইলি স্টার–এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালকেন্দ্রিক প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। দেশের পরিবহন খাতে মাফিয়ারা চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে দুদকের তদন্তেও উঠে এসেছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পরিবহন সাম্রাজ্য থেকে চাঁদাবাজির অবৈধ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদেশে পলাতক মাফিয়াদের কাছে। বিদেশে পলাতক কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে এ ধরনের তথ্য পেয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে তারা।
এসব অপরাধের সঙ্গে কখনো রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী, কখনো পেশাদার অপরাধীদের জড়িত থাকতে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে যে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে বলে যে আওয়াজ দেওয়া হয়েছে, তা কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটাই দেখার বিষয়। ঈদ সামনে রেখে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিও বাড়াতে হবে। ঢাকার বাসিন্দাদের প্রতি ঈদে বাড়িতে গেলে মালামাল নিজের হেফাজতে রেখে যাবেন, এই সদুপদেশ দিলেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।