নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ–সমাবেশ
Published: 13th, March 2025 GMT
দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, সাইবার বুলিং, মোরাল পুলিশিং (নীতি পুলিশিং) ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করার আহ্বানও জানান তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ সমাবেশ হয়। গত ৫ আগস্টের পর সাত মাসেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেন বক্তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘অনিরাপদ আমার বোন, জবাব দাও প্রশাসন’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাহী নায়েব বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশায় অভ্যুত্থান করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো সুফল পাইনি। ধর্ষণ, নিপীড়ন, সাইবার বুলিং–সংক্রান্ত আইনগুলো সংস্কার করতে হবে। ধর্ষকদের আশকারা দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আন্দোলন ছাড়াই নিজ উদ্যোগে প্রশাসনকে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।’
সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী হযরত হানিয়া বলেন, ‘আমাদের নারীদের কেন নিরাপত্তা নেই, সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে? সরকারের ব্যর্থতার কারণ আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। নারী ও শিশুদের সুস্থ মানুষ হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করার দায়িত্ব সরকারের। সরকারের এ ব্যর্থতাগুলো আমাদেরকে জাতি হিসেবে পিছিয়ে দিচ্ছে।’
নারী–পুরুষ সবার নিরাপত্তা চেয়ে বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাফিজ খান বলেন, ‘আমরা হতাশা নিয়েই এখানে দাঁড়িয়েছি। এত রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ দেশ এভাবে চলতে পারে না। দেশের নানা মহলে নিপীড়ন ও সাইবার বুলিংকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।