বহাল তবিয়তে শওকত আকবর, অপরাধ কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ৭ গ্রামবাসী
Published: 13th, March 2025 GMT
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এমপিদের আস্তভাজন শওকত আকবর বন্দরের মালিবাগ এলাকায় গড়ে তুলে একক আদিপত্য ও এক সন্ত্রাসী বাহিনী।
আওয়ামীলীগের দলীয় প্রভাবে জমি দখল, প্রতারণা, বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি সহ নানা অপকর্মে হোতা শওকত আকবর বহাল তবিয়তে।
হাসিনা ও তার মন্ত্রী- এমপিরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও শওকত আকবর এখনো প্রভাব বিস্তার করে ভাগিয়ে নিতে যাচ্ছেন মালিবাগ কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক হলেও এলাকায় রয়েছে তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
একক আদিপত্য বিস্তারে অতিষ্ঠ মালিবাগ সহ আশপাশের ৭-৮ গ্রামের মামুষ। শওকত আকবর জমি ক্রয়বিক্রয় জাল জালিয়াতি ও অর্থ আত্নসাতের ঘটনায় জোসনা নামে এক নারী মানষিক রোগী হয়ে পড়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, বন্দরের মালিবাগ গ্রামের আনোয়ার হোসেন প্রধানের ছেলে শওকত আকবর আওয়ামীলীগের দলীয় পদপদবিতে না থাকলেও সাবেক এমপি শামীম ওসমান, এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এমএ রশীদ সহ আরো একাধিক নেতা আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে আসতেন তার বাড়িতে।
আওয়ামীলীগের শীর্ষ মন্ত্রী এমপিদের আগমনে বেপরোয়া হয়ে উঠে শওকত আকবর। ছোট ভাই ইমরুল কায়েস ইমনের নামে গড়ে তুলেছে এক সন্ত্রাসী বাহিনী।
এ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে জমিদখল, মাদক কারবারি ও ঢাকা- চট্রগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাই ডাকাতি সহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। পাশ্ববর্তী বটতলা গ্রামের হাবিবুল্লাহ মিয়ার ছেলে স্থানীয় বিএনপি কর্মী মঞ্জু মিয়ার জমি জোর পূর্বক দখলের চেষ্টা করে শওকত আকবর।
পরে নিজ ভবনে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে জমির মালিক মঞ্জুকে ডাকাতি মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে নাম মাত্র মূল্যে জমি রেজিষ্ট্রেশন করে নেয় শওকত। কুমিল্লা মেঘনা উপজেলা সিঙ্গাপুর প্রবাসী কামাল হোসেনের কাছ থেকে তিন শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রেশন করে শওকত । পরে জমির ৯ লাখ টাকা না দিয়ে উল্টো সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি দেখালে প্রাণ বাঁচাতে ওই প্রবাসী পালিয়ে যায়।
মুছাপুর ইউপির মালিবাগ সাবের বাড়ি এলাকার জোসনা বেগমের শেষ সম্বল ৩ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রেশন করে নিয়ে শওকত আকবর এখন মূল্য পরিশোধ করছে না অভিযোগ নিরীহ জোসনা বেগম তার পরিবারের। বাড়িতে এসে টাকা দিবে এই বিশ্বাসে জমি রেজিষ্ট্রেশন করে দেয়া হয়। ওই টাকা নিয়ে এখনো তালবাহানা, প্রতারণা করে আসছে।
এ ঘটনায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের বিচার প্রার্থনা করা হয়েছে বলে জোসনা বেগমের ছেলে শাহাদাত মিয়া জানিয়েছেন। এছাড়াও শওকত আকবরের বিরুদ্ধে আরো একাধিক অপরাধ কর্মকান্ডের অভিযোগ থাকলেও এগুলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উল্টো মালিবাগ কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ ভাগিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিক মনির হোসেনকে শওকত আকবরের সন্ত্রাসী বাহিনী হুমকিদমকি ভয়ভীতি দেখিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শওকত আকবরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে তিতি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অপর ধ আওয় ম ল গ মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছর ধরে সভাপতি-সেক্রেটারি দিয়েই চলছে গাজীপুর মহানগর বিএনপি
২০২৩ সালের ১১ জুন ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের শর্তে গঠন করা হয়েছিল গাজীপুর মহানগর বিএনপির কমিটি। তবে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি। ঝুট ব্যবসাসহ মহানগরের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ এই দুই নেতার হাতে। এসব নিয়ে রাজপথের ত্যাগী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, দুই বছর আগে গাজীপুর মহানগরের তেলীপাড়া এলাকায় অবস্থিত সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টারে বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে নতুন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে। ওই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয় কাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিএনপির প্রয়াত নেতা গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র ও সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করীম রনি।
ওই দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে তিনজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
পরবর্তীতে দুজন বাদে সবাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় শওকত হোসেন সরকার সভাপতি এবং এম মঞ্জুরুল করীম রনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।
নেতাকর্মীরা জানান, ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কমিটি হয়নি। যদিও নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয় কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটির লিস্ট পাঠানো হয়েছে। তবে কেন বা কী কারণে এখনো কমিটি হয়নি সেটিও তাদের অজানা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা গাজীপুরে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক গতিশীলতা হারিয়েছে।
সেইসঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো নেই। তারা বিভিন্ন সময়ে জুট ব্যবসা ও অধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছে। দিয়েছেন একে অন্যের বিপক্ষে বক্তব্য। যেহেতু সামনে নির্বাচন এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়া দরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সব সময় আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম করেন। মহানগর নেতা কর্মীর মধ্যেও এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কে কার রাজনীতি করে সেতু এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় প্রোগ্রামগুলোতে দুই নেতা আলাদা আলাদা লোক বল নিয়ে প্রোগ্রামে যোগদান করে। এখন পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক ব্যানারে রাজধানীর কোনো প্রোগ্রামে দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপির নেতা বলেন, “তারা নিজেদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত। এখন পর্যন্ত কমিটি দেওয়ার বিষয়ে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। এতে মহানগর বিএনপির কার্যক্রম একপ্রকার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেন্দ্রীক হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে দলের বদনামসহ ভোটের মাঠে প্রভাব পড়বে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করীম রনি বলেন, “আমরা অনেক আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু রাজনৈতিক কারণ ও তখনকার নির্বাচনের পরিবেশের কারণে হয়তো কমিটি দেয়নি। দলের কেন্দ্র থেকে যখন চাইবে তখনই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। এই সিদ্ধান্তটি কেন্দ্রের।”
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, কিছু লোক দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। মহানগর বিএনপির স্বতঃস্ফূর্তভাবেই একত্রে বিভিন্ন সভা সমাবেশ মিছিলে অংশগ্রহণ করছে। বিভিন্ন কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, আমরা আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
ঢাকা/এস